প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আগামী পাঁচ-ছয়টা দিন বাংলাদেশের জন্য আমরা যেটা রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলি সেটার জন্য খুবই ক্রশিয়াল একটা সময়।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘বিএসআরএফ সংলাপ’ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে কাজ হচ্ছে। ৫ তারিখ আমাদের প্রথম বর্ষপূর্তি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের। আজকে খুবই সিরিয়াস মিটিং হচ্ছে জুলাই সনদকে চূড়ান্ত করতে। যাই হোক না কেন, যেভাবেই জুলাই সনদ হোক না কেন এটার প্রভাব গিয়ে ইলেকশনে পড়বে না। ইলেকশন তার সময় মতো হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করা কষ্ট সাধ্য কাজ ছিল। গত ১২ মাসে বর্তমান সরকার এখানে অনেক শ্রম দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি, আপনারা দেখেছেন এখন অনেকেই নিরপেক্ষ। আমরা আশা করি আওয়ামী লীগের অপশাসন থেকে আমাদের সমাজের সবাই এখান থেকে শিক্ষা নেবেন। সাংবাদিকদের জন্যও একটা বড় শিক্ষা। আমি আসলে একটা পার্টির সঙ্গে নিজেকে কতখানি জাড়িয়ে ফেলবো। আপনি একটা রাজনৈতিক দলকে সাপোর্ট করতেই পারেন। কিন্তু ওটা করতে গিয়ে যদি আপনি হত্যাযজ্ঞকে বৈধতা দেন, নির্বাচনহীনকে বৈধতা দেন, তখন তো আর আপনার নিরপেক্ষতা থাকে না।
চাঁদাবাজি নিয়ে সংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে কিন্তু হাই প্রোফাইলের চাঁদাবাজ গ্রেপ্তার হয়েছে। চাঁদাবাজির বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে আছি। সরকার যথেষ্ট কাজ করেছে, পুলিশ প্রশাসনকে বলে দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটলে আপনাদের কাছে প্রমাণ থাকলে দেবেন আমরা সে অনুযায়ী কাজ করবো।
জনশক্তি রপ্তানির ও ভিসা জটিলতার ক্ষেত্রে এই সরকার কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না- এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে কত লোক প্রতিমাসে বিদেশ যাচ্ছে সেই ডেটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আছে। আমরা সে তথ্য লুকাচ্ছি না। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রতি মাসে ডেটা দেয়, সেখানে কোনো মাসে বাড়ে, কোনো মাসে কমে, সেটা আপনারা দেখেছেন।
তিনি আরও বলেন, এই সরকারের বড় সাফল্য হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে জনশক্তি নেওয়া বন্ধ ছিল ও ভিসা দেওয়া বন্ধ ছিল, সে জায়গায় জট ছাড়াচ্ছি। মালয়েশিয়া ও জাপান নিয়ে কাজ করছি। এক লাখ লোক জাপান নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিটি জায়গায় আমরা কাজ করার চেষ্টা করছি। কোরিয়াতেও আমাদের কাজ হচ্ছে আমাদের চেষ্টার কোনো অন্ত নেই।
ভিসা জটিলতা নিয়ে প্রেস সচিব বলেন, এটা আগের সরকারের আমল থেকেই শুরু হয়েছে। ইউএই ভিসা বন্ধ হয়েছে কিন্তু আমাদের আমলে না, ২০১২-১৩ সাল থেকেই বন্ধ ছিল। আমরা চেষ্টা করছি সমনেও অব্যাহত থাকবে। আস্তে আস্তে যে ঝামেলাগুলো হচ্ছে সেটা কেটে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ২৫টি বিমানতো এক দিনে কেনা হচ্ছে না, সময়টা দেখেন অনেক বছর ধরে কেনা হবে। ততদিনে আমাদের এয়ার ট্রাফিকের উন্নয়ন হবে। প্রতি বছরই তো উন্নয়ন হচ্ছে। কোনো কোনো বছর তো ডাবল ডিজিটের ইনক্রিজ হয়। আমরা বোয়িং কেন দিচ্ছি, আমাদের পাইলটদের প্রশিক্ষণ হয় বোয়িংয়ে। পৃথিবীতে দুইটা এয়ারলাইন্স আছে কেউ এয়ারবাসকে নিচ্ছে, কেউ বোয়িংকে নিচ্ছে। আমরাও নিচ্ছি, ইন্দোনেশিয়াও নিচ্ছে। এখন দেওয়ার মানে হচ্ছে আমরা যাতে ঠিক মতো সাপ্লাই পাই। প্রথম সাপ্লাই কবে আসে সেটা দেখে নিয়েন। এটা যদি কালকে আনা হতো তাহলে বলতে পারতেন কোথায় রাখব। কিন্তু আমাদের প্রতিমাসে একটা গ্রোথ আছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি একটা দেশের কাছে বন্ধক দেওয়া হয়েছিল। এখন ফরেন পলিসি স্বাধীন। আমরা সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখছি। সেটা ভারত হোক, চীন হোক, ইউএস হোক সবার সঙ্গে আমরা একটা সুসম্পর্ক রাখছি। আমি চাই আমার সঙ্গে সম্পর্ক হোক মর্যাদার ও ন্যায্যতার এবং সেই জায়গায় আমরা গিয়েছি।
এসময় তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামুল কবীর উপস্থিত ছিলেন। সংলাপে সভাপতিত্ব করেন বিএসআরএফ'র সভাপতি মাসউদুল হক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনা করেন বিএসআরএফ’র সাধারণ সম্পাদক উবায়দুল্লাহ বাদল।
আমার বার্তা/এমই