ই-পেপার রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক

সর্বব্যাপী সাপ নিধনের হিড়িকে বিপদে পড়তে পারে বাংলাদেশ

বিবিসি বাংলা
২৫ জুন ২০২৪, ১২:২৬

দেশে গত কয়েক মাস ধরেই রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাসেলস ভাইপার সাপ মনে করে আতঙ্কে সব ধরনের সাপ পিটিয়ে মারা হচ্ছে। এই সাপের হঠাৎ প্রাদুর্ভাবে ছড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গুজবও।

তবে বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশে ৮৫ ভাগের বেশি সাপেরই বিষ নেই। এমনকি রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ বিষধর সাপের তালিকায় নয় নম্বরে রয়েছে। আর এখন আতঙ্কিত হয়ে মানুষ যেসব সাপগুলো মারছে তার বেশিরভাগই নির্বিষ ও পরিবেশের জন্য উপকারী।

প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাপ জীববৈচিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যই অন্যান্য প্রাণীর মতই সাপও গুরুত্বপূর্ণ।

যেভাবে নির্বিচারে সাপ মারা হচ্ছে তাতে পরিবেশের উপর কী প্রভাব পড়তে পারে?

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব বিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে তার মধ্যে অন্যতম রাসেলস ভাইপার সাপ। বাংলাদেশে রাসেলস ভাইপার সাপ চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া সাপ নামে পরিচিত।

একসময় এই সাপটি বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু ১০-১২ বছর আগে আবারো এই সাপের কামড়ে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ ২০১৩ সাল থেকে এই সাপটি বেশি দেখা যায় বলে জানান সাপ গবেষকরা।

২০২১ সালে আবার দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় বিশেষ করে পদ্মা তীরবর্তী কয়েকটি জেলা ও চরাঞ্চলে চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে দুইজন নিহত ও কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনা সে সময় বেশ আলোড়ন তুলেছিল।

রাসেলস ভাইপার সাপ ঢাকার কাছে মানিকগঞ্জে এলো কীভাবে

এ বছর মানিকগঞ্জে এই সাপের কামড়ে গত তিন মাসে পাঁচজন মারা গেছে বলে জানিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা। যারা মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগই কৃষক বলে জানিয়েছেন তারা। কারণ এখন ধান কাটার মৌসুম চলছে। ফলে ফসলের ক্ষেতে স্বাভাবিকভাবেই সাপের উপদ্রব হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহসান বলেন, ‘পদ্মার অববাহিকা ধরেই মানিকগঞ্জের চরাঞ্চলে গেছে রাসেলস ভাইপার সাপ।’

এদিকে, রাজশাহীতে এই সপ্তাহেই সাপের কামড়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ধান কাটার এই মৌসুমে পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে রয়েছে কৃষকরা।

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সারদায় পদ্মার পাড়ে অবস্থিত পুলিশ একাডেমি চত্বর থেকে এ সপ্তাহে আটটি রাসেলস ভাইপার সাপের বাচ্চা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে পুলিশ সদস্যরা পিটিয়ে সাপের বাচ্চাগুলো মেরে ফেলেছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে।

এমনকি ফরিদপুরের স্থানীয় একজন রাজনীতিবিদ প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে রাসেলস ভাইপার সাপ মারতে পারলে প্রতিটির জন্য ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। যদিও রোববার সেই ঘোষণা প্রত্যাহার করেছেন ওই রাজনীতিবিদ।

বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, রাসেলস ভাইপার সাপের আতঙ্কে যেগুলো মারা হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে শঙ্খিনী, অজগর, ঘরগিন্নি, দারাজ, ঢোঁড়াসাপ, গুইসাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ রয়েছে। এরাই রাসেলস ভাইপার সাপ খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য আনে। অথচ এই উপকারী সাপগুলো মেরে ফেলা হচ্ছে।

তারা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালানোয় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে না জেনেই মেরে ফেলছে প্রকৃতির বন্ধু নির্বিষ বিভিন্ন ধরনের সাপ ও সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী। যে কোন সাপ দেখলেই মারা হচ্ছে।

বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘রাসেলস ভাইপার আগ্রাসী সাপ নয়। তাকে আঘাত করলেই কেবল সে তেড়ে আসে। সাপ মারার কোন দরকার নেই। সতর্ক হতে হবে। আমরা সচেতনতা তৈরির জন্য কাজ করছি।’

বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, মেডিকেল সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী বছরে সাপের কামড়ে প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষ মারা যায়। এর মধ্যে একশ বিশ জন রাসেলস ভাইপারের কামড়ে মারা যায়।

আমীর হোসাইন বলেন, ‘ফসলি ক্ষেতে প্রচুর পরিমাণ সাপ থাকে। তাই সাপ না মারার জন্য এবং কৃষকদের যাতে সচেতন করে তোলা হয় সেজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন এবং স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছে। কারণ সচেতনতা বাড়লে ও সামাজিক মিডিয়ায় নেতিবাচক প্রচার কমলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এটা কমে আসবে।’

সাপ কেন পরিবেশের জন্য উপকারী?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় সাপের ভূমিকা অপরিসীম। বস্তুত সাপ প্রকৃতির বন্ধু এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের অবিচ্ছেদ্য ও অত্যাবশ্যকীয় অংশ। বাস্তুতন্ত্রের শীর্ষস্থানীয় মাংসাশী প্রাণীদের মধ্যে সাপ অন্যতম।

‘বাংলাদেশের সাপ ও সর্পদংশন প্রতিরোধ ও চিকিৎসা’ নামক বইতে বলা হয়েছে, সাপ খুব অলস ও নিরীহ প্রাণী। সাপ মানুষকে ভয় পায়, ফলে মানুষকে দেখলে সাপ পালিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচাতে চায়। কিন্তু সাপের উপর আক্রমণ হলে আত্মরক্ষার জন্য সাপ মানুষকে কামড় দেয়। বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় সাপ অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা পালন করে।

এই বইটি যৌথভাবে লিখেছেন মো. আবু সাইদ এবং মো. ফরিদ আহসান।

বইটির লেখক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. ফরিদ আহসান বলেন, ‘এই চক্রে সাপ শিকারি এবং শিকার উভয়ই হতে পারে। কারণ সাপ যেমন অন্য প্রাণী খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে তেমনি সাপও অন্য প্রাণীর খাদ্য হয়ে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখে।’

এই চক্রে সাপ কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের একটি প্রাকৃতিক রূপ। কারণ শিকারি হিসেবে সাপ যেসব প্রাণী খায়, সেটার ভারসাম্য বজায় রাখে।

প্রাণীবিদরা বলছেন, একশ বছর আগেও এই রাসেলস ভাইপার সাপের উপস্থিতি ছিল এ এলাকায়। এখন এই সাপ বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো বাস্তুতন্ত্রে পরিবর্তন হয়েছে।

অর্থাৎ এদের যেসব প্রাণী খেতো সেসব প্রাণীর সংখ্যা এখন কমে গেছে। যেমন- গুইসাপ, বেজি, চিল, ঈগল, গন্ধগোকুল এ ধরনের বিভিন্ন প্রাণীর সংখ্যা কমে গেছে। ফলে বেড়ে গেছে সাপের সংখ্যা।

তিনি বলেন, ‘রাসেলস ভাইপার সাপ বেড়ে যাওয়ার কারণ ইকো সিস্টেমে রদবদল হয়েছে। এদের যারা খেতো সেসব প্রাণীর সংখ্যা কমে গেছে। ফলে এই সাপের সংখ্যা বেড়ে গেছে।’

সাপ মারলে পরিবেশের উপর কী প্রভাব পড়বে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতির অংশ হিসাবে সাপ মেরে ফেললে এর প্রভাব পড়বে পুরো বাস্তুচক্রে। ফসলি ক্ষেতে সাপ মারলে ইঁদুরের প্রভাব বাড়বে। সাধারণত প্রতি বছরই ১০ থেকে ২০ শতাংশ ফসল ইঁদুর নষ্ট করে। ফলে নির্বিচারে সাপ মারলে ইঁদুরের সংখ্যা বাড়বে। উৎপাদন কমে যাবে ফসলের।

বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক হোসাইন বলেন, ‘সাপ ব্যাঙ, ইঁদুর খায়। বেজি, বাগডাশ, গন্ধগোকুল, বনবিড়াল সাপ খায়। আবার শঙ্খচূড়, গোখরা, কেউটে এই সাপগুলোও রাসেলস ভাইপারসহ অন্য সাপ খায়।’

তিনি বলেন, ‘ফসলী খেতে সাপ ইঁদুর খায়। তারা ইঁদুর খেয়ে ফসলের উপকার করে। এভাবে যদি প্রচুর পরিমাণ সাপ মারা হয় তবে এক শ্রেণির শিকারি প্রাণী কমে যাবে।’

এই কর্মকর্তা বলছেন, ‘কারণ তখন ভবিষ্যতে ইঁদুর বেড়ে যাবে। সেগুলো ফসল খেয়ে নষ্ট করে ফেলবে। উৎপাদন কমে যাবে ফসলের। যেটা ফুড সাইকেলে প্রভাব ফেলবে। এভাবে সাপ মারলে ভবিষ্যতের জন্য অনেক ক্ষতি হবে।’

বাংলাদেশে সাপ নিয়ে নেতিবাচক ধারণার কারণে এ ধরনের প্রাণী নির্বিচারে মারা হয়। কিন্তু, বাস্তুতন্ত্রে সাপের ভূমিকা অন্য কেউ পূরণ করতে পারে না বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া।

তিনি বলেন, ‘ইকোসিস্টেমে সাপের যে রোল রয়েছে তার তো কোন রিপ্লেসমেন্ট করা যায় না। এই সিস্টেমের প্রতিটি প্রাণীর প্রভাব অপরটিকে প্রভাবিত করে। ফলে সাপের অভাবে টোটাল ফুড চেইনে প্রভাব পড়বে।’

২০১২ সালের বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী, রাসেলস ভাইপার সাপকে সংরক্ষিত প্রাণী হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী রাসেলস ভাইপার সাপ মারা, ধরা এবং বহন করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

এরই মধ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সাপ না মারার আহ্বান জানিয়ে একটি বিবৃতিও প্রকাশ করেছে।

আমার বার্তা/জেএইচ

গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে শহীদ মিনারে হবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী-কনসার্ট

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং ‘উইমেন

ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ে এসিল্যান্ডদের আরও উদ্যোগী হতে বললেন উপদেষ্টা

ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, বর্তমানে এসিল্যান্ডদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ভূমি উন্নয়ন কর আদায়।

চলতি সপ্তাহে বড় ধরনের অগ্রগতি ঘটাতে চায় কমিশন: আলী রীয়াজ

রাজনৈতিক অচলাবস্থার সমাধানে আলোচনার গতি বাড়াতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চলমান সংলাপে

সাবেক এমপি নদভীর পিএস গ্রেপ্তার

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সাবেক এমপি আবু রেজা মো. নদভীর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস)
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সরকার সর্বক্ষেত্রেই ধারাবাহিক ব্যর্থতার প্রমাণ দিচ্ছে: জাতীয় পার্টি

চট্টগ্রামে আন্দোলনে হামলা, সাবেক কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

মৌলভীবাজারে এনসিপির জেলা সমন্বয় কমিটি ঘোষণা

গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে শহীদ মিনারে হবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী-কনসার্ট

ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ে এসিল্যান্ডদের আরও উদ্যোগী হতে বললেন উপদেষ্টা

রাশিয়ার গৃহীত সব পদক্ষেপকে ‘নিঃশর্ত সমর্থন’ করতে প্রস্তুত কিম জং উন

জাহাজের সবাই মুসলিম: হুথির হামলা থেকে বাঁচতে নতুন কৌশল নাবিকদের

শিবচরে নিখোঁজের ১১ দিন পর যুবকের মরদেহ উদ্ধার

চলতি সপ্তাহে বড় ধরনের অগ্রগতি ঘটাতে চায় কমিশন: আলী রীয়াজ

সাবেক এমপি নদভীর পিএস গ্রেপ্তার

পদত্যাগ করতে পারেন এফবিআইর প্রধান কাশ প্যাটেল: রিপোর্ট

পিএসসি সংস্কার দাবিতে চাকরি প্রত্যাশীদের ১১ দফা, ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

এশিয়ান পেইন্টস ‘কালার নেক্সট-২০২৫’: ‘কার্ডিনাল’ হলো নতুন বছরের রঙ

এনবিআরের দুই বিভাগে সচিব নিয়োগে হবে নতুন নীতিমালা: জ্বালানি উপদেষ্টা

বিতর্কিত ৩ নির্বাচন তদন্তে যেসব বিষয়ে সতর্ক করলেন বিশ্লেষকরা

যুক্ত হচ্ছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ কোটা, বাদ পড়ছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা

আবু সাঈদ হত্যা : চার আসামি ট্রাইব্যুনালে

বড় ধরনের অগ্রগতি ঘটাতে চায় কমিশন: আলী রীয়াজ

বেতন দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে নারী কর্মচারীকে ধর্ষণ

এখন থেকে আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নাম থাকবে না: জ্বালানি উপদেষ্টা