
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার বলে দাবি করেছেন শিক্ষক নেতারা।
তাদের দাবি, প্রবেশপর্যায়ে (এন্ট্রি) তাদের দশম গ্রেড দেওয়ার মধ্য দিয়ে এ বৈষম্যের শুরু হয়। এরপর পদোন্নতিতেও বৈষম্য। পদে পদে এ বৈষম্য দূর করতে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এন্ট্রি পদ নবম গ্রেডে উন্নীত করে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের পদমর্যাদা দিতে হবে। পাশাপাশি চার থেকে ছয় স্তরের সুষ্ঠু অ্যাকাডেমিক পদসোপান তৈরি করতে হবে। মাধ্যমিক শিক্ষায় গতি ফেরাতে অবিলম্বে এ দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে।
‘মাধ্যমিক শিক্ষার সংকটের স্বরূপ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনার ও শিক্ষক সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ মিলনায়তনে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এন্ট্রি পদ নবম গ্রেডভিত্তিক পদসোপান বাস্তবায়ন পরিষদের উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের সহকারী শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল নাহিয়ান। তিনি বলেন, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রবেশপদ সহকারী শিক্ষকসহ তৎকালীন জাতীয় বেতন স্কেল, ১৯৭৩-এর ষষ্ঠ গ্রেডের সব পদকে ১৯৭৫ সালের ২ মে দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদমর্যাদা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১২ সালে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে গেজেটেড পদমর্যাদা লাভ করে। সহকারী শিক্ষকের বদলিযোগ্য পদ পিটিআই ইন্সট্রাক্টর পদকে ১৯৯৬ সালে নবম গ্রেডভুক্ত করা হলেও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদ আজও দশম গ্রেডে রয়ে গেছে।
আব্দুল্লাহ আল নাহিয়ান বলেন, শিক্ষকতা পেশায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) দুটি শাখার প্রারম্ভিক পদের নিয়োগ ও যোগ্যতা একই (স্নাতকোত্তর) বা বেশি হলেও বেতন গ্রেড ও মর্যাদায় তারতম্য রয়েছে। এটি স্পষ্ট বৈষম্য। এ বৈষম্য দূর না করা পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষায় শৃঙ্খলা ও গতি ফিরবে না।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন শিক্ষক রাশিদুজ্জামান। তিনি বলেন, সিনিয়র শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক বা সহকারী প্রধান শিক্ষিকা বা সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার পদগুলো নবম গ্রেডের বিসিএস ক্যাডারভুক্ত পদ। তাই সহকারী প্রধান শিক্ষক বা সহকারী প্রধান শিক্ষিকা বা সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার পদগুলোতে নবম গ্রেডের সিনিয়র শিক্ষক পদ হতে পদোন্নতি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সুষ্ঠু পদসোপান তৈরি না করা পর্যন্ত পদোন্নতি দেওয়া অসম্ভব।
রাশিদুজ্জামান বলেন, কলেজে অ্যাকাডেমিক পদ অধ্যাপক হতে প্রশাসনিক পদ অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ পদে পদোন্নতি না দিয়ে পদায়ন করা হয়। কিন্তু সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অ্যাকাডেমিক পদ সিনিয়র সহকারী শিক্ষক হতে প্রশাসনিক পদসহ প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। অ্যাকাডেমিক পদ হতে প্রশাসনিক পদে পদোন্নতি দেওয়ার কারণেই মূলত পদোন্নতির জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। অথচ কলেজে এ ধরনের সমস্যা নেই।
সেমিনার ও শিক্ষক সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মোফাজ্জল হোসেন, বাংলাদেশ বিমান অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বোয়া) মহাসচিব মো. মইন উদ্দিন লোটাস, ময়মনসিংহের ফুলপুর পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম আজাদ, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. মঈন উদ্দীন প্রমুখ।
নিয়োগ যোগ্যতা ও শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও সরকারি মাধ্যমিকের এন্ট্রি পদকে নবম গ্রেড ধরে পদসোপান না করা নিয়ে বঞ্চনার ইতিহাস তুলে ধরেন অনেকেই। তাদের মধ্যে ছিলেন- ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের সহকারী শিক্ষক ও পরিষদের সদস্যসচিব মো. আব্দুল মূবীন, সহকারী শিক্ষক আহমেদ বুলবুল, আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।
আমার বার্তা/এল/এমই

