
দেশে স্বাস্থ্যসেবা, মেডিকেল ইকুইপমেন্টস এবং ঔষধ শিল্পের টেকসই উন্নয়নে যুগোপযোগী নীতিমালা বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তা এবং বিশ্লেষকগণ। পাশাপাশি, বেসরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল ইকুইপমেন্টস ও ঔষধ শিল্পের জন্য লাইসেন্স প্রাপ্তি এবং নবায়ন প্রক্রিয়া সহজীকরণের পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই কর্তৃক আয়োজিত “স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বেসরকারী খাতের অংশগ্রহণ: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা উঠে আসে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআই‘র প্রশাসক মো. আবদুর রহিম খান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ সাইদুর রহমান।
সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব হেলথ ইকোনমিকস বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ। ঔষধের কাঁচামাল বা এপিআই (অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্টস) শিল্পে পিছিয়ে থাকাকে বাংলাদেশের ঔষধ শিল্পের জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখছেন তিনি।
পাশাপাশি, মেডিকেল ইকুইপমেন্টস এবং ঔষধ শিল্পের লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়ন সংক্রান্ত জটিলতাকে শিল্পের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে মেডিকেল ইকুইপমেন্টস প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জেএমআই গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যুগোপযোগী একটি নীতিমালা বাস্তবায়ন না করা গেলে দেশে মেডিকেল ইকুইপমেন্টস শিল্পের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই খাতের স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা এবং ইকো-সিস্টেম উন্নয়নে নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এপিআই শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য একজন উদ্যোক্তাকে ৪৭ টি সংস্থা থেকে লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয়ে। যা বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করে। এই শিল্পের লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া সহজীকরণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একটি ওয়ান স্টপ সার্ভিস (OSS) চালুর আহ্বান জানান তিনি।
লাইসেন্সিং প্রক্রিয় সহজ করা না গেলে বেসরকারি খাত স্বাস্থ্যসেবা, মেডিকেল ইকুয়িপমেন্টস এবং ঔষধ শিল্পে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা যাবে না বলে মনে করেন ব্র্যাক হেলথ প্রোগ্রামের উর্ধ্বতন পরিচালক মো. আকরামুল ইসলাম।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আসরাফ হোসেন জানান, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর তার দায়িত্ব দ্রুত এবং যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। কোন প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলে তার সম্ভাব্যতা যাচাই সংক্রান্ত কাজে কিছু সময় লেগে যায়, ইচ্ছকৃত বিলম্ব করা হয় না।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, ঔষধ শিল্পের লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে সরকার ইতোমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। চেষ্টা রয়েছে অন্তত ৩ বছর মেয়াদের জন্য লাইসেন্স প্রদানের।
পাশাপাশি, ঔষধ শিল্প এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতের কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণে সরকারের কঠোর নজরদারির কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ঔষধ শিল্পের কাঁচামালের স্থানীয় শিল্প স্থাপন এবং আমদানি নির্ভরতা হ্রাসসহ গবেষণা ও উন্নয়নে জোর দেন স্বাস্থ্য সচিব।
দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরে মো. সাইদুর রহমান বলেন, সরকারের একার পক্ষে সকল নাগরিকের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ জন্য সরকার, বেসরকারি খাত এবং একাডেমিয়ার মধ্যে সমন্বয় জরুরী।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) –এর মহাপরিচালক গাজী এ কে এম ফজলুল হক জানান, মেডিকেল ইকুইপমেন্টস শিল্পের জন্য স্বতন্ত্র একটি খসড়া নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বিডা। যা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মূল্যায়ন, বিশ্লেষণ এবং পরামর্শের প্রেক্ষিতে বাস্তবায়ন হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই’র প্রশাসক মোঃ আবদুর রহিম খান। তিনি বলেন, আয়সীমা অনুযায়ী সকল নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যয় যেন রোগীদের সাধ্যের মধ্যে থাকে সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানা এফবিসিসিআই’র প্রশাসক।
এর আগে এফবিসিসিআই’র মহাসচিব মোঃ আলমগীর বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেরও অবদান ছিলো অনেক। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যসেবা খাতে সরকারের বরাদ্দ নগণ্য। স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়াতে বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। দক্ষ চিকিৎসক ও নার্সসহ হাসপাতালের সংখ্যাও বাড়াতে হবে।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র সাবেক পরিচালকবৃন্দ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, সাধারণ পরিষদের সদস্যবৃন্দ।
আমার বার্তা/এমই

