মালয়েশিয়ার সঙ্গে বছরে ৩ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য হলেও বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয় নামেমাত্র অংশ। রফতানিকারকরা বলছেন, দেশটির কাস্টমস জটিলতা ও বাংলাদেশি গুটি কয়েক ব্যবসায়ীদের ছলছাতুরিতে বাড়ছে না আনুষ্ঠানিক রফতানি। শুল্ক ফাঁকি ঠেকাতে তদারকি বাড়ানো ও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার তাগিদ অর্থনীতি বিশ্লেষকের।
স্বাধীনতার পর থেকেই মালয়েশিয়ার সঙ্গে সুদৃঢ় কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে বাংলাদেশের। সাম্প্রতিক সময়ে যা ক্রমেই বাড়ছে। আর এতে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পর বাংলাদেশই বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার।
মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশ মোটাদাগে পেট্রোলিয়াম পণ্য, পাম অয়েল এবং রাসায়নিক আমদানি করে। আর টেক্সটাইল, পাদুকা এবং পেট্রোলিয়াম পণ্য রফতানি করে। তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে দুই দেশের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের খোঁজ রাখা প্রতিষ্ঠান ওইসি ওয়ার্ল্ডের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে দুই দেশের মধ্যে মোট বাণিজ্য হয়েছে ২ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। যেখানে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ২ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। আর রফতানি করেছে মাত্র ৩২৯ মিলিয়ন ডলার। যদিও ২০২২ সালে মোট বাণিজ্য ছিল প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার। সে বছর বাংলাদেশ আমদানি করেছিল ৪ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। রফতানি হয়েছে ৩২৩ মিলিয়ন ডলার।
রফতানিকারকরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় আমলাতান্ত্রিক ও কাস্টমস সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বাংলাদেশ রফতানিতে সুবিধা পাচ্ছে না। পাশাপাশি, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী শুল্ক ফাঁকি দেয়ার কারণে রফতানি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, মালয়েশিয়ায় কিছু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও অনিয়ম-দুর্নীতি রয়েছে। তবে আমাদের দেশের অনেক ব্যবসায়ী এতটা অভিজ্ঞ নয় যে, এসব জটিলতা এড়িয়ে ব্যবসা চালাতে পারে। পাশাপাশি, দেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কম দামে বা স্টক লট বিক্রি, অবৈধ পণ্য বিক্রি ও শুল্ক ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করছেন। এসব বন্ধ করে আসল ব্যবসায়ীদের সুযোগ দিতে হবে। তা হলে রফতানি অনেক বেশি বাড়ানো সম্ভব হবে।
অর্থনীতিবিদরা শুল্ক বিভাগের তদারকি বাড়ানোর পাশাপাশি রফতানি বৃদ্ধির জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিক ও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার পরামর্শ দিচ্ছেন। অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, কম দামে পণ্য নিয়ে গিয়ে মালয়েশিয়ায় বিক্রি করা দেশের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া কাউন্টারফেইড পণ্যও নেয়া উচিত নয়। দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে, যা বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে।
বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদনে নজর দেয়ার পরামর্শও দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
আমার বার্তা/এল/এমই