মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার যমুনা নদীর দুর্গম এলাকায় ভাঙন রোধে সরকারি উদ্যোগে জিও ব্যাগ ফেলার কার্যক্রমে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে এক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ঐ নেতার নাম আল-মামুন। জানা গেছে, তিনি মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও শিবালয় উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম খানের অনুসারী।
বৃহস্পতিবার (০৭ আগষ্ট) দুপুরে ভুক্তভোগী গ্রামবাসী উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে থানায় ৬ জনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে আল-মামুন তার দলবল নিয়ে শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের দক্ষিন তেওতা পাগলপাড়া এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগ ফেলার স্থানে উপস্থিত হন। এ সময় তিনি ওই এলাকার নদীতীরের প্রতিটি বাড়ির সামনে জিও ব্যাগ ফেলার জন্য ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। স্থানীয়রা চাঁদা দিতে রাজি না হলে তিনি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন। এসময় তার দলবলের সাথে স্থানীয়দের কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে আল-মামুন ও তার দল ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। এরপরই গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রধান অভিযোগকারী সারোয়ার হোসেন বলেন, "আল-মামুন আমাদের বাড়ির সামনে এসে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ নিয়ে ঝামেলা শুরু করে। আমরা কারণ জানতে চাইলে সে বলে, কাজ করতে হলে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে, নয়তো কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে।"
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঠিকাদারের সহকারী তানজিম বলেন, "হঠাৎ দুজন অপরিচিত লোক এসে আমাকে অতথ্যভাষায় গালি দিয়ে বললো - "ঐ শালার ব্যাটা কন্টাক্টারের নাম্বার দে"। তারা আমাদের ধমক দিতে শুরু করলে স্থানীয় আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন। পরে রাস্তায় স্থানীয়দের সাথে কি হয়েছে তা আমার জানা নাই। থানা থেকে পুলিশ এসেছিলো।"
এদিকে জানা গেছে, চাঁদাবাজে অভিযুক্ত আল-মামুন স্থানীয় জামায়াত নেতা আফজাল হোসেনের জামাতা। এই ঘটনার পর উপজেলা জামায়াত সেক্রেটারি আবু তালেব থানায় একাধিকবার তদবির করেছেন যেন আল-মামুনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা না হয়। থানা থেকে একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিবালয় উপজেলা জামায়াত নেতা আবু তালেব বিষয়টি এড়িয়ে বলেন, "ঐখানে যার সাথে ঝগড়া হয়েছে সেটা সামাজিক বিরোধ। এখানে দুই পক্ষ ঝগড়া করেছে যারা আমাদের নিজেদের লোক। কমিটি ও প্রভাব বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা আছে। ঐ বিষয়টি নিয়েই তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে মারামারি হয়েছে।"
সুনির্দিষ্টভাবে চাঁদার পক্ষে তদবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সম্পুর্ন বিষয়কে মিথ্যা দাবী করে বলেন, "আমি ফোনে বিষয়টা জানলাম। থানায় বললাম, সন্ধ্যায় আমি আসতাসি। বিষয়টা বইসা দেইখা যেইটা ভালো হয় দেখতেছি।"
আল-মামুন আওয়ামিলীগের নেতা হওয়া সত্ত্বেও তার পক্ষে জামায়াতের সেক্রেটারি হিসেবে অবস্থান নেওয়া দলীয় নীতি পরিপন্থী কি না জানতে চাইলে আবু তালেব বলেন, "না, ঐ ছেলেটা আওয়ামীলীগের কেউ না।"
এদিকে আওয়ামীলীগের সাথে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের প্রমাণ ও ছবির বিষয়ে জানালে জামায়াত নেতা আবু তালেব বলেন, "নানা কারনে আমরাও আওয়ামীলীগের সাথে চলেছি। এখন আমার এলাকার বিএনপি নেতার সাথে চললেই আমি বিএনপি নাকি? একবার জাহিদ মালেক (আওয়ামী সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রী) আমাদের এলাকায় আসছিলেন। এলাকাবাসী হিসেবে সবাই ছিলো, আমিও ছিলাম। সেটা ভিন্ন জিনিস।"
স্থানীয় আবুল হাসান বলেন, "পতিত আওয়ামী সরকারের দালালরা আমাদের গ্রামে এখনো সক্রিয়। এরা নানাভাবে গ্রামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। দুঃখের বিষয় হলো কিছু নামধারী জামায়াত নেতা এদের প্রটোকল দেয়। আজ সকালে এখানে এক আওয়ামীলীগ নেতা চাঁদা চাইতে আসায় আমরা স্থানীয়রা এর প্রতিবাদ করি। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ দিতে গেলে আমাদের হুমকি ধামকি দেন তারা।"
স্থানীয় মাতব্বর নামে বয়োজ্যেষ্ঠ এক ব্যাক্তি জানান, "চাঁদাবাজির বিষয়টি সত্য। কিন্তু আমরা জেনে অবাক হয়েছি যে, একজন জামায়াত নেতা এই চাঁদাবাজের পক্ষে থানায় মামলা না নিতে তদবির করেছেন। থানা থেকেই বিষয়টি আমাদের জানিয়েছে এবং নিশ্চিত করেছে।"
স্থানীয় জুবায়ের হোসেন বলেন, "আমাদের এলাকায় নদী ভাঙনের কারনে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ঐখানে আজ কয়েকজন লোক এসেছে চাঁদা দাবী করতে। পরে বাঁধা দেওয়ায় হাতাহাতি হয়। তারা সবাই আওয়ামীলীগের লোক। এরপর আমরা থানায় এসে মামলা করেছি। দুঃখের বিষয় হলো, থানা থেকে বের হওয়ার পর তারা তাদের দলবল নিয়ে আমাদের ঘেড়াও করেছে। তাদের প্রত্যেকের কাছেই লাঠিসোঁটা ছিলো। আমরা তীব্রভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বর্তমান সময়েও যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে এটি খুব দুঃখজনক ব্যাপার। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো, তাদের উপজেলার এক জামায়াত নেতা শেল্টার দিচ্ছেন। আমরা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করি।"
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিবালয় থানার ওসি বলেন, "অভিযোগ পেয়েছি। আমি এখনি ব্যবস্থা নিচ্ছি"।
উল্লেখ্য, এর আগে এর আগে নাশকতার একটি মামলা থেকে এক আওয়ামীলীগ নেতাকে বাঁচাতে শিবালয় উপজেলা জামায়াত সেক্রেটারি আবু তালেব থানায় চাপ সৃষ্টি করেছিলেন, যা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয় এবং জনমনে তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।