নিউজিল্যান্ড ব্যাটিংয়ে নামলে গড়ে রানের পাহাড়। অন্যদিকে জিম্বাবুয়ের ইনিংস ধসে পড়ে তাসের ঘরের মতো। জিম্বাবুয়ে-নিউজিল্যান্ড দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের সারসংক্ষেপ তো এটাই। বুলাওয়েতে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টেও কিউইদের আগুনে বোলিংয়ে স্রেফ উড়ে গেছে জিম্বাবুয়ে।
নিউজিল্যান্ডের সামনে টেস্টে জিম্বাবুয়ে রীতিমতো অসহায়। এবার দ্বিতীয় টেস্টে জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ও ৩৫৯ রানে হারিয়েছে কিউইরা। জিম্বাবুয়ের নিজেদের ইতিহাসে টেস্টে ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রানে পরাজয়ের রেকর্ডও এটি। এই তালিকায় দুই ও তিনে থাকা বিব্রতকর দুটি রেকর্ডও জিম্বাবুয়ের হয়েছে কিউইদের বিপক্ষে। ২০১২ সালে নেপিয়ারে জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ও ৩০১ রানে হারিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। কিউইরাই এর আগে ২০০৫ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছিল ইনিংস ও ২৯৪ রানে।
দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেটে ৬০১ রানে গতকাল দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করে নিউজিল্যান্ড। কিউইরা আজ তৃতীয় দিনে ব্যাটিংয়েই নামেনি। তাদের ইনিংস ঘোষণার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে জিম্বাবুয়ে। নিউজিল্যান্ডের বোলিং তোপে চোখে রীতিমতো সর্ষেফুল দেখতে থাকে স্বাগতিকেরা।
৫.৫ ওভারে ৩ উইকেটে ২৪ রানে পরিণত হয় জিম্বাবুয়ে। যেখানে জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার ব্রায়ান বেনেট ও ব্রেন্ডন টেলরকে ফিরিয়েছেন কিউই পেসার ম্যাট হেনরি। আরেক কিউই পেসার জ্যাকব ডাফি কট এন্ড বোল্ড করেন শন উইলিয়ামসকে। এই ম্যাচ দিয়ে ডাফির টেস্টে অভিষেক হয়েছে।
জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ক্রেগ আরভিনের সঙ্গে শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টা করেন নিক ওয়েলচ। তবে চতুর্থ উইকেটে তাঁদের জুটিতে এসেছে ৫৪ বলে ২৫ রান। ১৫তম ওভারে পঞ্চম বলে আরভিনকে (১৭) ফেরান ম্যাট ফিশার। জিম্বাবুয়ের ইনিংসে চতুর্থ উইকেটের জুটিটাই সর্বোচ্চ রানের জুটি। মুড়ি-মুড়কির মতো উইকেট হারাতে থাকা জিম্বাবুয়ে ৪ উইকেটে ৪৯ রান থেকে মুহূর্তেই গুটিয়ে যায় ১১৭ রানে। ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৭ রান করে অপরাজিত থাকেন ওয়েলচ। তিন নম্বরে নামা এই ব্যাটার একপ্রান্ত আগলে অসহায়ের মতো দেখেছেন সতীর্থদের আসা-যাওয়া। নিউজিল্যান্ডের ফুকস ৩৭ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট। এই ম্যাচ দিয়েই তাঁর টেস্টে অভিষেক হয়েছে। ম্যাট হেনরি ও ডাফি পেয়েছেন দুটি করে উইকেট। ম্যাট ফিশার পেয়েছেন এক উইকেট। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ নিউজিল্যান্ড জিতল ২-০ ব্যবধানে।
সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টেও টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছে জিম্বাবুয়ে। নিউজিল্যান্ডের আগুনে বোলিংয়ে স্বাগতিকেরা প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়েছে ১২৫ রানে। ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেন ব্রেন্ডন টেলর।১০৭ বলের ইনিংসে চারটি চার মারেন তিনি। এই ম্যাচ দিয়েই চার বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরেন টেলর। নিউজিল্যান্ডের ম্যাট হেনরি ১৫ ওভারে ৪০ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট। জাকারি ফুকস ও ম্যাট ফিশার নিয়েছেন ৪ ও ১ উইকেট। ডাফি-ফুকসের মতো ফিশারের এই ম্যাচ দিয়ে টেস্টে অভিষেক হয়েছে।
নিউজিল্যান্ড এরপর তাদের প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেটে করেছে ৬০১ রান। কিউইদের পাঁচ ব্যাটারের মধ্যে চার ব্যাটার পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন। যার মধ্যে তিনটিই সেঞ্চুরি। ১৩৯ বলে ২১ চার ও ২ ছক্কায় ১৬৫ রান করে অপরাজিত থাকেন রাচীন রবীন্দ্র। তাঁর রানই কিউইদের ইনিংসে সর্বোচ্চ। ডেভন কনওয়ে ও হেনরি নিকোলস করেন ১৫৩ ও ১৫০ রান। সেঞ্চুরি করা তিন ব্যাটারের মধ্যে একমাত্র কনওয়েই আউট হয়েছেন। জিম্বাবুয়ের ব্লেসিং মুজারাবানি, ট্রেভর গোয়ান্দু, ভিনসেন্ট মাসেকেসা নিয়েছেন একটি করে উইকেট।
১৯৯২ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত জিম্বাবুয়ে-নিউজিল্যান্ড মুখোমুখি হয়েছে ১৯ টেস্টে। নিউজিল্যান্ড জিতেছে ১৩ ম্যাচে। বাকি ৬ ম্যাচ ড্র হয়েছে। এর আগে এই সিরিজের প্রথম টেস্টও শেষ হয়েছে তিন দিনে। বুলাওয়েতে সেই টেস্টে নিউজিল্যান্ড জেতে ৯ উইকেটে।
আমার বার্তা/এমই