
অবশেষে যমুনা অয়েলের সেই বিতর্কিত কর্মকর্তা মো : মাসুদুল ইসলামকেই এমডি নিয়োগ দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ( বিপিসি)। একাধিক সুত্রে জানা গেছে চলতি সপ্তাহেই তার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে ।তবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য সাত কোটি টাকা রফাদফার গুন্জন উঠেছে। জানা গেছে এই অধিকাংশ টাকার যোগানদাতা প্রতিষ্ঠানটির তেল চুরি সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য সিবিএ নেতা মুহাম্মদ এয়াকুব, জয়নাল আবেদীন টুটুল ও মো: আবুল হোসেন। পুরানো সিন্ডিকেট টিকিয়ে রাখতেই তিন সিবিএ নেতার এই প্রক্রিয়া । যদিও এদের একজন জেল হাজতে তবে জেলে বসেই তার লোকজন দিয়ে টাকার যোগান দিচ্ছে । " বিতর্কিত কর্মকর্তা মাসুদুল ইসলাম হতে যাচ্ছে যমুনা অয়েলের এমডি শিরোনামে ২৯ নভেম্বর এবং যমুনা অয়েলের বিতর্কিত কর্মকর্তা মাসুদুল ইসলামকে এমডি নিয়োগ দিতে দুই সিবিএ নেতার কোটি টাকার মিশন "শিরোনামে ২ রা ডিসেম্বর আমার বার্তায় পরপর দুটো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় । এতে বের হয়ে আছে বির্তকিত কর্মকর্তা মাসুদুল ইসলামের চাকরি জীবনের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির ফিরিস্তি। দীর্ঘ সতের বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে বিরাট ক্ষমতাধর কর্মকর্তা হিসাবে আভিভুত হয়ে আছেন তিনি। ফ্যাসিষ্ট সরকারের অন্যতম দোসর হিসেবে পরিচিত তার দীর্ঘ দেড় যুগ সময়ের ব্যবধানে একটুও ক্ষমতার হেরফের ঘটেনি। তবে ৫ আগষ্ট ২০২৪ দেশের পটপরিবর্তনের পর ক্ষমতা আগের চেয়েও বেড়েছে। মানব সম্পদ বিভাগের জিএম এই মাসুদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অভিযোগের শেষ নাই৷ ফ্যাসিষ্ট সরকারের চিহ্নিত দোসর সিবিএ নেতাসহ অধিকাংশ কর্মকর্তা, কর্মচারীদের তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে তিনি ফের পুনর্বাসিত করেছেন।
মো: আবুল হোসেন যমুনা লেবার ইউনিয়নের সভাপতি ও নিষিদ্ব সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের বন্দর থানা শাখার যুগ্ম সাধারণ । ২০ জুলাই ২০২৫ নগরীর ইপিজেড থানার সিমেন্ট ক্রসিং এলাকা থেকে তাকে ইপিজেড থানা পুলিশ গ্রেফতার করে৷ অথচ মজার বিষয় হলো ২০ শে জুলাই থেকে ৯ আগষ্ট পর্যন্ত আবুল হোসেনকে অফিসের কর্মস্থলে হাজিরা দেখানো হয়েছে । তার গ্রেফতারের বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও ২০ জুলাই থেকে ৯ আগষ্ট পর্যন্ত অর্থাৎ এই বিশ দিনের বিষয়ে অফিসিয়াল ভাবে কিছুই বলা হয়নি । বিষয়টি জানাজানি হলে ১৯ আগষ্ট প্রথম বারের মতো এজিএম টার্মিনাল (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাকছুদুর রহমান ১০ আগষ্ট থেকে ১৯ আগষ্ট পর্যন্ত আবুল হোসেন কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছে বলে জিএম মানব সম্পদ বিভাগকে লিখিত ভাবে জানান। এরপর কখনো একমাস কিংবা ২০ দিন পরপর চিঠি দিয়ে আবুল হোসেনের অনুপস্থিতির বিষয়টি জিএম মানব সম্পদ বিভাগকে অবগত করেন৷ এদিকে এজিএম টার্মিনাল (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাকছুদুর হলো জিএম এইচ আর মাসুদুল ইসলামের অত্যান্ত বিশ্বস্ত সহোচর৷ বিগত সময় চাকরী করেছে হিসাব শাখায় কিন্তু বছর খানিক আগে মাসুদুল ইসলাম তাকে এজিএম টার্মিনাল পদে ( অতিরিক্ত দায়িত্ব) দেয় ৷ অপারেশন বিভাগে কাজ করার নুন্যতম অভিজ্ঞতা নেই,কিন্তু সেই মাকছুদুর রহমানকে গত মাসের ১১ তারিখে এজিএম টার্মিনাল পদে চলতি দায়িত্বে পদায়ন করে মানব সম্পদ বিভাগের জিএম মো : মাসুদুল ইসলাম৷ এদিকে আবুল হোসেনের কারাগারে থাকার বিষয়টি গোপন করে বিশেষাধিকার ছুটির দরখাস্তও পাঠানো হচ্ছে মানব সম্পদ বিভাগের জিএম মো: মাসুদুল ইসলামের কাছে। তিনি সেই ছুটি মন্জুর করছে। এভাবে গত ছয় মাস ধরে গ্রেফতারকৃত শ্রমিকলীগ নেতাকে নিয়ে চলছে লুকাচুরির খেলা৷ এবিষয়টি বিপিসিও অবগত আছেন, এমনকি মাসুদুল ইসলাম ও আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগও জমা পরেছে বিপিসি কাছে। কিন্তু তা ফাইল চাপা পড়ে আছে৷
এদিকে যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড শ্রমিক অংশ গ্রহণ তহবিল ও কল্যান তহবিলের টাকা নয় ছয় করার অভিযোগ রয়েছে এই মাসুদুল ইসলামের বিরুদ্বে৷ যমুনা অয়েল সুত্রে জানা গেছে ২০১৪ সালের ১৫ মে ব্যবস্থাপনা প্রতিনিধি ও শ্রমিক কর্মচারীর প্রতিনিধির সমন্বয়ে এই তহবিল পরিচালনার জন্য অছি পরিষদ ( ট্রাষ্টি বোড) পুর্নগঠন করা হয় । চার সদস্য বিশিষ্ট অছি পরিষদ ( ট্রাষ্টি বোর্ডের) সদস্যদের মধ্যে ব্যবস্থাপনা প্রতিনিধির পক্ষে ছিল তৎকালীন এজিএম ( এজেন্সি চট্টগ্রাম) অফিস বর্তমান জিএম এইচ আর মাসুদুল ইসলাম ।ট্রাষ্টি বোডে শ্রম আইন ২০৬ ধারা ২৪০(১১) তে তহবিল বিনিয়োগের বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সেই নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয়নি। ২০১৫ সালের শেষ ভাগে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ অবগত হয়, উল্লেখিত ট্রাষ্টি বোর্ড শ্রমিক অংশীদারত্বের তহবিলের অধীন বিনিয়োগের অংশের সমস্ত বিনিয়োগযোগ্য টাকা ঝুকিপূর্ণ শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেছে । এবিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্তৃক ট্রাষ্টি বোর্ডকে অংশীদারত্ব তহবিলের অর্থ দ্বারা শেয়ার ক্রয় সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রদান করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করে ।
কর্তৃপক্ষের নির্দেশনামতে ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারী ট্রাষ্টি বোর্ডের পক্ষে মো: মাসুদুল ইসলাম (সদস্য) এবং হাবীবুল মুহিত চেয়ারম্যান ট্রাষ্টি বোর্ড স্বাক্ষরিত একটি প্রতিবেদন দাখিল করে । তবে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক ধারণায় ট্রাষ্টি কর্তৃক স্বীয় সিদ্ধান্তে ঝুঁকিপুর্ন শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতীয়মান হয়নি । এদের প্রতিবেদন দাখিলের একদিন পরেই অর্থ্যাৎ ২০১৬ সালের ৬ জানুয়ারী কোম্পানির তিন সিনিয়র কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় । এই কমিটি তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয় ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী । তদন্ত কমিটি রিপোর্টে পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশের গুলো মধ্যে ছিল বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (২০১৩ সালে সংশোধিত) ধারা মতে অংশ গ্রহণ তহবিলের অর্থ সরকারি মালিকানাধীন বিনিয়োগযোগ্য কোন খাতে বিনিয়োগ করা যাবে, এটা উল্লেখ আছে। কিন্তু ট্রাষ্টি বোর্ড এর ব্যতয় ঘটেছে বলে প্রতীয়মান হয়। তদন্ত কমিটি মনে করে অংশীদারত্ব তহবিলের অর্থ প্রচলিত বিনিয়োগের বাহিরে শেয়ার বাজারের মতো ঝুকিপূর্ণ বাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ট্রাষ্টির সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ছিল । তদন্ত রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের ফলে ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারী পর্যন্ত সার্বিক ভাবে অংশীদারত্বের তহবিলের অর্থ ( লভাংশ সমন্বয়ের পর) নীট ক্ষতির পরিমাণ চার কোটি পনের লাখ বারো হাজার দুই শত টাকা । ট্রাষ্টি কোনো ভাবেই ক্ষতির দায় এড়াতে পারেন না। সর্বোপরি তদন্ত রিপোর্টে ট্রাষ্টি বোর্ডের সকল সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয় ।

