বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও বৈঠক করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইলেকশন অবজারভেশন মিশনের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরার কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন চায় জামায়াত। এজন্য নির্বাচনী প্রস্তাব ও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির মাধ্যমেই নির্বাচন হতে হবে। তবেই এবারের নির্বাচন ফেয়ার, ফ্রি ও ক্রেডিবল হবে।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এসব তথ্য জানান।
গোলাম পরওয়ার বৈঠক সম্পর্কে বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। সেই ব্যাপারে তারা বাংলাদেশে এসেছেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন।
২০০৮ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনগুলো মনিটর করার ইতিহাস তুলে ধরা হয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই ইলেকশন অবজারভেশন টিমকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।
গোলাম পরওয়ার বলেন, তারা আগামী নির্বাচনে ৬৪টি জেলায় নির্বাচনে পর্যবেক্ষণ করতে চান। এ পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতে ইসলামীর আমির জানতে চান, কীভাবে তারা পর্যবেক্ষণ করবেন। তখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইলেকশন অবজারভেশন টিম জানান, তাদের একজন করে প্রতিনিধি প্রত্যেক জেলায় পর্যবেক্ষণে যাবেন, আর একটি টিম সব জায়গায় মুভ করবেন। নির্বাচনের পর তাদের নির্বাচন অবজারভেশনের ব্যাপারে খুঁটিনাটি দেশবাসীর সামনে রিপোর্ট আকারে পেশ করবেন। তারা প্রফেশনালিজম, নিরপেক্ষতা ও অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পেশাদারিত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করার কথা জানান।
নির্বাচন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ করতে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট ও কারিগরি সহযোগিতা যতটুকু দেওয়া সম্ভব, সেজন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইলেকশন অবজারভেশন টিমের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন জামায়াত আমির।
তাদের আলোচনায় বাংলাদেশের গণতন্ত্রের চর্চার বিষয়টিও উঠে এসেছে। এ প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, জামায়াতে ইসলামী এ দেশে নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিশ্বাসী। জামায়াত একটি নির্বাচনমুখী দল। দলের মধ্যেও গণতান্ত্রিক চর্চা আছে। নির্দিষ্ট মেয়াদে দলের আমির নির্বাচন হয়। এ বছরই দলের আমিরের পদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আবারও আগামী অক্টোবর থেকে ইলেক্টোরাল পদ্ধতিতে আমির নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।
প্রতিনিধি দল জানতে চেয়েছেন যে, দলের প্রার্থী কীভাবে সিলেকশন করা হচ্ছে? এ ব্যাপারে জামায়াত আমির বলেন, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতেই তা করা হয়। দল ও দলের বাইরে গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে প্রার্থী সিলেকশন করা হয়।
বৈঠকে প্রবাসীদের ভোট ও ভোটাধিকার সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইলেকশন অবজারভেশন টিম। তখন জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, জামায়াতই প্রথম এক কোটির বেশি প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিয়ে দাবি তুলেছেন। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন বরাবর জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ও সরকার তা গ্রহণ করে ইতোমধ্যে প্রবাসীরা যাতে ভোট দিতে পারেন, সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইলেকশন অবজারভেশন টিম জানতে চেয়েছেন, জামায়াতে ইসলামী যদি আগামীতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব পায়, তাহলে মূল এজেন্ডা কী হবে? এ ব্যাপারে জামায়াত আমির তিনটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। প্রথমত, এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নৈতিকতা, উৎপাদনমুখী, টেকনিক্যাল, দক্ষতা, বৈষয়িক, মানবিক— সব দিক থেকে নাগরিকরা যোগ্য হতে পারে, সে ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দ্বিতীয়ত, করাপশন ফ্রি সোসাইটি গড়ে তোলা হবে। সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি চেপে বসেছে। জামায়াতে ইসলামী দায়িত্ব পেলে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা হবে। তৃতীয়ত, সোশ্যাল জাস্টিস। সামাজিক ন্যায়বিচারের দারুণ সংকট আমাদের সমাজে রয়েছে।
বিগত ১৫ বছরে সরকারের কারণে কীভাবে মানুষ বঞ্চিত হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে, জামায়াতের রাজনৈতিক কার্যালয় বন্ধ করা হয়েছে, ভিন্নমতের ওপর জুলুম করা হয়েছে, নিজেসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেসব বিষয়ে উল্লেখ করেন জামায়াত আমির।
২০২৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইলেকশন অবজারভেশন টিম এসেছিল। তখন জামায়াতে ইসলামীর আমির, সেক্রেটারিসহ অনেকেই কারাগারে ছিলেন। দলের পক্ষে নায়েবে আমির ডা. তাহের ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইলেকশন অবজারভেশন ডেলিগেশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে নির্বাচন আয়োজনে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান জানতে চাইলে আমির ডা. শফিকুর রহমান জানান, আগামী ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচনে যেতে চাই আমরা। এজন্য আমাদের নির্বাচন প্রস্তাব, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির মাধ্যমেই এই নির্বাচন হতে হবে। তবেই নির্বাচন ফেয়ার, ফ্রি ও ক্রেডিবল হবে।
জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারে দেশ ও দেশের বাইরে মিস-ইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন প্রচার হচ্ছে, তা তুলে ধরা হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইলেকশন অবজারভেশন টিম তা স্বীকার করেছেন। এছাড়া নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে কারিগরি সহযোগিতা করবেন বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। আগামী মাসে নির্বাচনী তফসিলের আগে আরেকবার আসবেন ইউরোপীয় এ প্রতিনিধি দল। সে সময় তারা রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বলে জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম পরওয়ার বলেন, পিআর পদ্ধতি নিয়ে তারা কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করেননি। বিএনপির প্রসঙ্গ তারাও তোলেননি, আমরাও তুলিনি।
বৈঠকে জামায়াত আমির ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের মেডিকেল থানার আমির ডা. এসএম খালিদুজ্জামান এবং জামায়াত আমিরের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসান।
আমার বার্তা/এমই