ই-পেপার বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২

চীনের “বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ”: উন্নয়ন না ঋণের ফাঁদ?

সাদিয়া সুলতানা রিমি:
০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:১৬

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৩ সালে যখন “বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ” বা সংক্ষেপে BRI ঘোষণা করলেন, তখন অনেকে ভাবলেন এ যেন এক নতুন উন্নয়নের সূচনা। পুরনো সিল্ক রোডের আদলে তৈরি এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা এমনকি লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো। কিন্তু এক দশক পার হতে না হতেই প্রশ্ন উঠেছে এটি কি সত্যিই উন্নয়নের রূপরেখা, নাকি আসলে এক নতুন ধরনের ঋণের জাল?

চীনের দাবি, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ হলো “উইন-উইন পার্টনারশিপ”, যেখানে সবাই লাভবান হবে। অবকাঠামো, বন্দর, রেলপথ, বিদ্যুৎকেন্দ্র—সবকিছু তৈরি হবে সহযোগিতার ভিত্তিতে। এই প্রকল্পে ইতিমধ্যেই ১৫০টিরও বেশি দেশ যুক্ত হয়েছে, আর চীনের বিনিয়োগের পরিমাণ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

পাকিস্তানের “চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর”, শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোট বন্দর, আফ্রিকার রেলপথ এসবই এই উদ্যোগের দৃশ্যমান ফল। অনেক আফ্রিকান দেশ এখন এই প্রকল্পের কারণে বিদ্যুৎ পাচ্ছে, শিল্প কারখানা গড়ে তুলছে, বাণিজ্য বাড়াচ্ছে।

তবে এই প্রকল্পের ভেতরে লুকিয়ে আছে এক বড় রাজনৈতিক কৌশল। অর্থনৈতিক সহযোগিতার আড়ালে চীন আসলে ভূরাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।

ভারত মহাসাগর অঞ্চলে চীনের উপস্থিতি আজ স্পষ্ট। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, মালদ্বীপ সবখানে চীনের বিনিয়োগ। এই বন্দরগুলো শুধু বাণিজ্যের নয়, ভবিষ্যতে কৌশলগত ঘাঁটিতেও পরিণত হতে পারে। একে অনেকেই বলেন, “স্ট্রিং অব পার্লস” অর্থাৎ মুক্তার মালার মতো একের পর এক চীনা প্রভাবকেন্দ্র।

সমালোচকদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ এখানেই। তারা বলেন, BRI প্রকল্পে চীন এমনভাবে ঋণ দেয় যে, শেষ পর্যন্ত দেশগুলো ঋণ শোধ করতে না পেরে কৌশলগতভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। সবচেয়ে আলোচিত উদাহরণ শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোট বন্দর। ঋণ শোধে ব্যর্থ হয়ে দেশটি বন্দরের নিয়ন্ত্রণ ৯৯ বছরের জন্য চীনের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়। এই ঘটনাকে অনেকে বলেন “Debt Trap Diplomacy”—অর্থাৎ ঋণের ফাঁদে ফেলে কূটনৈতিক নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।

একই ধরণের সংকটে পড়েছে জাম্বিয়া, লাওস, কেনিয়া, এমনকি পাকিস্তানও। চীনা ব্যাংকের সুদের হার অনেক সময় বাণিজ্যিক, অর্থাৎ তুলনামূলক বেশি। ফলে ঋণ শোধ না করতে পারলে, প্রকল্পের মালিকানাই হারিয়ে যাচ্ছে অনেক দেশে। চীন অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলে, সবকিছুই পারস্পরিক চুক্তির ভিত্তিতে হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, উন্নয়নশীল অনেক দেশ এই “সহযোগিতা”-র বোঝা বইতে গিয়ে বিপদে পড়ছে।

বাংলাদেশও BRI-এর অংশীদার। পদ্মা রেল সংযোগ, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা বন্দর, বিদ্যুৎ প্রকল্প এসবের কিছুতে চীনা অর্থায়ন আছে। তবে বাংলাদেশ এখনো পর্যন্ত তুলনামূলকভাবে সতর্কভাবে ঋণ নিচ্ছে।

সরকার চীনের পাশাপাশি জাপান, এডিবি, বিশ্বব্যাংক সব দিক থেকেই অর্থায়ন নিচ্ছে। ফলে ঝুঁকি ছড়ানো আছে, একদিকে কেন্দ্রীভূত নয়। তবে ভবিষ্যতে যদি চীনা বাণিজ্যিক ঋণ বেড়ে যায়, তাহলে অর্থনৈতিক চাপে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

চীনের এই উদ্যোগ পশ্চিমা বিশ্বকে স্পষ্টভাবে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর জবাবে “Build Back Better World (B3W)” এবং “Global Gateway” নামে বিকল্প প্রকল্প চালু করেছে। তাদের লক্ষ্য, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে চীনের ঋণনির্ভর পথ থেকে বিকল্প অর্থায়নের সুযোগ দেওয়া।

ভারতও এই প্রকল্পে যোগ দেয়নি। কারণ চীনের “চায়না-পাকিস্তান করিডর” কাশ্মীরের বিতর্কিত অঞ্চল দিয়ে গেছে যা ভারতের কাছে সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন।

BRI একদিকে উন্নয়ন ঘটাচ্ছে, অন্যদিকে তৈরি করছে নতুন নির্ভরতা। চীনের পুঁজি অনেক দেশে শিল্প গড়ছে, কিন্তু সেই শিল্পের নিয়ন্ত্রণও চীনের হাতে থেকে যাচ্ছে। ফলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এটি ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক উপনিবেশবাদের সূচনা হতে পারে। তবে বাস্তবতা হলো, উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য চীনের মতো দ্রুত অর্থায়নের বিকল্প এখনো খুব কম। বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফ যেখানে শর্ত আরোপ করে, সেখানে চীন অর্থ দেয় অপেক্ষাকৃত সহজে।

বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে এক কথায় ভালো বা খারাপ বলা যায় না। এটি উন্নয়নের সুযোগ, আবার কৌশলগত ঝুঁকিও। যে দেশগুলো এই সুযোগকে সঠিকভাবে পরিকল্পনা, স্বচ্ছতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে ব্যবহার করতে পারবে তাদের জন্য এটি উন্নয়নের হাতিয়ার। কিন্তু যারা অন্ধভাবে ঋণ নিচ্ছে, তাদের জন্য এটি হতে পারে ভবিষ্যতের বোঝা।

বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো ব্যালান্সড কূটনীতি যেখানে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে, কিন্তু নির্ভরতা নয়; সহযোগিতা থাকবে, কিন্তু শর্ত নিজের হাতে।

চীনের “বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ” নিঃসন্দেহে ২১ শতকের সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক প্রকল্প। এটি যেমন নতুন উন্নয়নের দিগন্ত খুলছে, তেমনি আনছে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ।অতএব, এই উদ্যোগকে আমরা “ঋণের ফাঁদ” বলে অবহেলা করতে পারি না, আবার “উন্নয়নের একমাত্র রাস্তা” হিসেবেও দেখলে ভুল হবে। সময় এসেছে বাস্তবতা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ারউন্নয়ন যেন হয় নিজের শর্তে, অন্যের ছায়ায় নয়।

লেখক : শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

আমার বার্তা/সাদিয়া সুলতানা রিমি/এমই

শিক্ষক নিয়োগে বৈষম্য: ১-১২তম ব্যাচের নিবন্ধিতদের ন্যায়বিচার দাবি

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যেন এক অন্ধকার গহ্বরে নিমজ্জিত। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যায়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)

শিক্ষা-শিল্প ফাঁক কমাতে কাঠামোগত সংস্কার জরুরি

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা গত এক দশকে বিস্তারের দিক থেকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা

হাদির ওপর হামলা, শান্তির পথে কাঁটা ছড়াচ্ছে কারা?

বহু প্রতীক্ষা ছিল। নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছিল দেশ। নির্বাচন কমিশন ‘তফসিল’ ঘোষণা করল। নির্বাচনের ট্রেন

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট

জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা একটি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের অপরিহার্য দায়িত্ব। তবে, বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মগবাজারে ফ্লাইওভার থেকে ছোড়া বোমা বিস্ফোরণে যুবক নিহত

লন্ডন থেকে রাত সোয়া ১২টায় দেশে রওনা দেবেন তারেক রহমান

সরকারি কর্মচারীরা অবসরের ৩ বছর আগে নির্বাচন করতে পারবেন না

বড়দিন উপলক্ষে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা বিনিময়

দেশীয় অর্থায়নে প্রকল্প বাড়িয়ে দেশকে স্বনির্ভর করার আহ্বান

রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২৪ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি করেছে সরকার

হাদি হত্যায় মোটরসাইকেল চালকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার

ঝিনাইদহ-৪ আসন গণঅধিকারের রাশেদকে দিল বিএনপি, প্রতিবাদে বিক্ষোভ

ছয় দফা দাবিতে ধর্মপাশায় স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি ও কর্মবিরতি

ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তে বিক্ষোভ মিছিল

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন ফরম নিলেন রুমিন ফারহানা

পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপে নিবন্ধনের সময় বাড়লো

উদ্যোক্তা তৈরিতে আনসার-ভিডিপির ‘সঞ্জীবন’ বিষয়ক কর্মশালা

৬ সৌর প্রকল্পে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার অনিয়ম: টিআইবি

আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না আওয়ামী লীগ: প্রেস সচিব

গাজীপুরে জাসাস নেতাকে ডেকে নিয়ে ইটভাটায় কুপিয়ে হত্যা

ব্যবহারকারীদের জন্য ব্যক্তিগত রিভিউ চালু করল ওপেনএআই

ইসলামে খারাপ ভাগ্য পরিবর্তনের দোয়া

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে ঢাকামুখী বেরোবির ছাত্রদলের নেতাকর্মী

নির্বাচনী ব্যয় বেশি হলে ভোটে জিতে জনগণের কাছ থেকে আদায় করা হয়