সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস. মুরশিদ বলেছেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস প্রয়োজন। তিনি বলেন, নারীর অগ্রগতিকে এগিয়ে নিতে ও নারীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সরকারের পাশাপাশি সমাজের সামাজিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজের সমন্বিত উদ্যোগ ও কার্যক্রমকে আরও জোরদার করতে হবে।
মঙ্গলবার (২৭ মে) রাজধানী ঢাকার একটি স্থানীয় হোটেলে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত “নারীর মর্যাদা সংক্রান্ত জাতিসংঘ কমিশনের ৬৯তম অধিবেশনের ফলাফল নিয়ে বহু পক্ষের পরামর্শমূলক কর্মশালা” — অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
কনসালটেশন ওয়ার্কশপে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এনডিসির পক্ষে মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব প্রকাশ কান্তি চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন নারী সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন শারমিন হক, ইউএন উইমেন-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি গীতাঞ্জলি সিং এবং মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব দিলারা বেগম। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন নারী সংগঠনের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ, সরকারি ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা শারমীন এস. মুরশিদ বলেন, “২০২৫ সালের ১০ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত জাতিসংঘের সদর দপ্তর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত নারীর মর্যাদা সংক্রান্ত কমিশনের (CSW) ৬৯তম অধিবেশনে ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্র অংশগ্রহণ করে। সেখানে বেইজিং কর্মপরিকল্পনার পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ত্বরান্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “নারী ও মেয়েদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে নারীর অধিকার ও সমতা অর্জন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিশেষ করে, জুলাই বিপ্লবে প্রায় ৭০ শতাংশ নারী-কন্যার সক্রিয় অংশগ্রহণ রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত।”
তিনি বলেন, “বিশ্ব যখন নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছে, তখনো আমাদের দেশে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পরিবর্তন ঘটেনি। সমাজের সবক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত না করতে পারলে এ দেশের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।”
উপদেষ্টা শারমীন এস. মুরশিদ আরও বলেন, “নারী ও শিশুর ওপর সহিংসতা এবং সাইবার বুলিং প্রতিরোধে আমাদের মনোজগৎ, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় অনুশাসনের ওপর ভিত্তি করে গবেষণা জরুরি। পাশাপাশি, সমাজে কিশোর গ্যাং-এর সংখ্যা বেড়েছে, যা এখনই নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “আমরা এতো দিন নারী নির্যাতনের সংস্কৃতিকে কেন জিইয়ে রাখলাম? কেন এর ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারিনি? এসব বিষয় এখন গভীরভাবে ভাববার সময় এসেছে। আমি বিশ্বাস করি, নারী-পুরুষ বিভাজন নয়, সম্মিলিত প্রচেষ্টাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
তিনি আরও জানান, “আমার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গ্রামীণ প্রান্তিক পর্যায়ে অবহেলিত নারী ও শিশুর সহযোগিতায় ‘কুইক রেসপন্স টিম’ গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি, জুলাই কন্যাদের নিয়ে সাইবার বুলিং প্রতিরোধে একটি কমিটি গঠন করা হবে, যেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহযোগী হিসেবে কাজ করবে।”
আমার বার্তা/এমই