আফগানিস্তানে অবস্থিত বাগরাম বিমানঘাঁটি ফেরত দেওয়া নিয়ে দেশটিকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি এই ঘাঁটি ফেরত দেওয়া না হলে দেশটির ভয়াবহ পরিণতি ঘটবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
ফলে আফগানিস্তানে আবারও মার্কিন আগ্রাসনের শঙ্কা সামনে এসেছে। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, আফগানিস্তান যদি যুক্তরাষ্ট্রকে বাগরাম বিমানঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ ফেরত না দেয়, তাহলে তা দেশটির জন্য “ভয়াবহ পরিণতি” ডেকে আনবে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার বলেছেন। তিনি এ ঘাঁটি পুনর্দখল করতে মার্কিন সেনা পাঠানোর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি।
ট্রাম্প ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, “যদি আফগানিস্তান বাগরাম বিমানঘাঁটি তাদের কাছে না ফেরায়, যারা এটি নির্মাণ করেছিল — যুক্তরাষ্ট্র — তাহলে ভয়াবহ কিছু ঘটতে যাচ্ছে।”
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেছিলেন, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র যে বিমানঘাঁটি ব্যবহার করেছিল, সেটি ফের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। শুক্রবার সাংবাদিকদের তিনি জানান, এ বিষয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে আলোচনাও হচ্ছে।
২০২১ সালে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর দেশটির ঘাঁটিগুলো তালেবানের দখলে চলে যায় এবং যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কাবুল সরকারের পতন ঘটে। তবে আফগান কর্মকর্তারা নতুন করে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতির বিরোধিতা করেছেন।
বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, বাগরাম পুনর্দখলের প্রচেষ্টা আফগানিস্তানে নতুন করে আগ্রাসনের মতো দেখা যেতে পারে। এ জন্য অন্তত ১০ হাজার সেনা এবং উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করতে হবে।
ট্রাম্প এর আগে পানামা খাল থেকে শুরু করে গ্রিনল্যান্ড পর্যন্ত নানা ভূখণ্ড ও স্থাপনা অধিগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বাগরাম বিমানঘাঁটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছেন।
শনিবার সাংবাদিকরা যখন জানতে চান তিনি ঘাঁটি পুনর্দখলে মার্কিন সেনা পাঠাবেন কিনা, ট্রাম্প সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, “ওটা নিয়ে এখন কথা বলব না”। তিনি আরও বলেন, “আমরা আফগানিস্তানের সঙ্গে এখন আলোচনা করছি। আমরা এটা ফেরত চাই, চাই দ্রুত। আর যদি তারা না দেয়— না দেয়, তাহলে আমি কী করতে যাচ্ছি সেটা শিগগিরই জানতে পারবেন।”
আফগানিস্তানে দুই দশকের যুদ্ধ চলাকালে বাগরামই ছিল মার্কিন বাহিনীর প্রধান ঘাঁটি। সেখানে বার্গার কিং ও পিৎজা হাটের মতো ফাস্টফুড রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিকস ও আফগান কার্পেট বিক্রির দোকান ছিল। পাশাপাশি ছিল বিশাল কারাগার কমপ্লেক্সও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশাল এই বিমানঘাঁটি পুনরায় চালু ও সুরক্ষিত করা কঠিন হবে। এর জন্য বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন প্রয়োজন। এমনকি তালেবান যুক্তরাষ্ট্রকে আলোচনার মাধ্যমে ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও, সেখানে ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও আল-কায়েদার মতো জঙ্গিগোষ্ঠীর হুমকির মুখে থাকবে মার্কিন বাহিনী।
এছাড়া ইরানের উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঝুঁকিও থাকবে। সম্প্রতি ইরান যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণের জবাবে কাতারে অবস্থিত একটি মার্কিন বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল।
আমার বার্তা/জেএইচ