রোহিঙ্গা শরণার্থী মোহাম্মদ ইসমাইল এখনো অপেক্ষা করছেন তার মেয়ে আসমার খোঁজে, যাকে গত মে মাসে ভারত থেকে তুলে নিয়ে গোপনে ফেরত পাঠানো হয়েছে মিয়ানমারে—যে দেশ থেকে তারা ২০১৭ সালে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসেছিলেন।
২০১৭ সালে মিয়ানমারে সামরিক অভিযানের সময় ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যা থেকে পালিয়ে আসা মোহাম্মদ ও তার মেয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে। সেখানেই নতুন জীবনের শুরু, কাজ আর পড়াশোনা। আসমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল গত মে মাসে। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন আগেই তিনি ও আরও ৩৯ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ডাকা হয় একটি সরকারি দপ্তরে, বলা হয় বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের জন্য।
কিন্তু এরপর তারা নিখোঁজ হন। তিন দিন পরে জানা যায়, তাদের বিমান ও নৌপথে জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হয়েছে মিয়ানমারে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তাদের চোখ বেঁধে সমুদ্রের মধ্যে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং তীরে সাঁতরে পৌঁছাতে বলা হয়।
সেই তীর মিয়ানমারেই—একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, যেখানে এখনো একই সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আছে যাদের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নিধনের’ অভিযোগ এনেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র একে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছে।
সিএনএনের এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ভারতের সরকার গোপনে ৪০ জন রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষকে আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। তাদের অনেকেই জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) স্বীকৃত শরণার্থী ছিলেন। ভারতের নিজস্ব আইনে ও আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, এমন ফেরত পাঠানো আইনবিরোধী।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা এবং নৌযান চলাচলের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, দিল্লি থেকে একটি সামরিক বিমান ওই ৪০ জনকে নিয়ে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছায়। সেখান থেকে তাদের নৌকায় করে মিয়ানমারে পাঠানো হয়। যাত্রীদের একজন ফোনে জানান, পুলিশ আমাদের বলেছিল বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের জন্য নিয়ে যাচ্ছে। পরে বুঝতে পারি এটা নির্বাসন।
অনেকেই জানিয়েছেন, তাদের বলা হয়েছিল তোমাদের জীবনের কোনো দাম নেই। তোমাদের কোনো দেশ নেই। মেরে ফেললেও কেউ কিছু বলবে না। পরে তাদের ছোট ছোট নৌকায় ভাগ করে সাগরে নামিয়ে দেওয়া হয়।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তর সিএনএন-এর কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়নি। একজন পুলিশের বরাতে জানানো হয়েছে, ফেরত পাঠানো হয়েছে আইনি প্রক্রিয়ায়, তবে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে।
বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা এই ঘটনাকে অমানবিক ও আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন বলে নিন্দা জানিয়েছেন।
এই মুহূর্তে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছেন, যাদের অনেকে ইউএনএইচসিআর-এর মাধ্যমে শরণার্থী স্বীকৃতি পেয়েছেন। কিন্তু ভারত এখনো জাতিসংঘের শরণার্থী সংক্রান্ত চুক্তিতে সই করেনি, ফলে সরকার এদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করে থাকতে পারে।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে, তবে আদালত জানিয়েছে এ বিষয়ে আরও শুনানি হওয়ার দরকার আছে। পরবর্তী শুনানি সেপ্টেম্বর মাসে হওয়ার কথা। - সূত্র: সিএনএন
আমার বার্তা/এমই