বাংলাদেশকে এড়িয়ে কলকাতা থেকে মিয়ানমারের রাখাইন পর্যন্ত উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর জন্য নতুন রাস্তা নির্মাণ করছে ভারত।
দেশটির ‘ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড’-এর এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও আনন্দবাজার পত্রিকার।
শিলিগুড়ির ‘চিকেন নেক’ ছাড়া বিকল্প ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বদলে গেছে পরিস্থিতি।
এই আবহে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যোগাযোগের জন্য বিকল্প পথের রূপরেখা চূড়ান্ত করতে চলছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর ক্ষমতায় এসেছে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
শেখ হাসিনার আমলে ‘ট্রানজিট রুট’ নিয়ে সমঝোতার ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অগ্রগতি হলেও তা থমকে গেছে। এই আবহে সমুদ্র ও মিয়ানমারের সড়কপথ ব্যবহার করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সংযোগরক্ষাকারী বিকল্প পথের রূপরেখা চূড়ান্ত করা হয়েছে বলেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদন বলা হয়, ‘ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড’ (এনএইচআইডিসিএল)-এক কর্মকর্তা ওই প্রকল্পের কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, মেঘালয়ের রাজধানী শিলং থেকে আসামের বরাক উপত্যকার প্রাণকেন্দ্র শিলচর পর্যন্ত প্রায় ১৬৭ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি চার লেনের জাতীয় সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব করেছে ভারত সরকার।
৬ নম্বর জাতীয় সড়ক প্রকল্পের এই রাস্তা যাবে মিয়ানমার সীমান্তের অদূরের পাঁচগ্রাম পর্যন্ত। নির্মাণের দায়িত্বে থাকবে এনএইচআইডিসিএল।
এই বিকল্প পথের সমুদ্র -যোগাযোগ হবে কলকাতা থেকে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের সিত্তে বন্দর পর্যন্ত। সিত্তে থেকে বঙ্গোপসাগর ছেড়ে মিয়ানমারের কালাদান নদীপথে সে দেশের পালেটয়া যাবে ওই জলপথ।
এর পর সড়কপথে মিজোরামের জোরিনপুই পর্যন্ত যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। নতুন শিলং-শিলচর জাতীয় সড়ক এই যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সম্প্রসারিত করবে।
পরবর্তী পর্যায়ে জোরিনপুই থেকে লুংলেই হয়ে আইজল পর্যন্ত সংযুক্ত হবে। ড. ইউনূস গত মার্চ মাসে চীন সফরে গিয়ে বলেছিলেন, ‘উত্তর-পূর্ব ভারত স্থলবেষ্টিত এবং ঢাকা এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক।’ তার পরই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নতুন প্রকল্পের রূপরেখা তৈরি হয়েছে বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি।
তবে মিয়ানমারের সঙ্গে ‘কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প’ ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্য স্থির হলেও, তা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
কারণ, গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত মিয়ানমারের বড় অংশই সে দেশের সামরিক জান্তা সরকারের হাতছাড়া। যে রাখাইন প্রদেশের জল এবং স্থলপথ ব্যবহার করে নয়াদিল্লি বিকল্প পথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে চাইছে, তার ৮০ শতাংশেরও বেশি বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে।
সেখানে রোহিঙ্গা মুসলিমদের কয়েকটি জঙ্গিগোষ্ঠীও সক্রিয়। গত ৩০ এপ্রিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভা প্রায় ২২,৮৬৪ কোটি টাকার প্রস্তাবিত ‘কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পে’ অনুমোদন দিয়েছিল।
ইতিমধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনাও চূড়ান্ত হয়েছে। ভারতীয় অংশে সড়কপথে প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার অংশ পড়েছে মেঘালয়ে এবং ২২ কিলোমিটার পড়েছে আসামে।
প্রকল্পটি চালু হলে শিলং থেকে শিলচরের যাত্রাপথ সাড়ে আট ঘণ্টা থেকে কমে পাঁচ ঘণ্টায় নেমে আসবে। পণ্য পরিবহণের পাশাপাশি উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চীনের মোকাবিলায় আরো দৃঢ় হবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবস্থান।
আমার বার্তা/জেএইচ