জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সঙ্গীতশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি। তার গাওয়া অনেক গান শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নিলেও তিনি বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে কোনঠাঁসা হয়ে পড়েছিলেন।
তাকে পেশাগত কাজে বারংবার বাধা প্রদান করা হয়েছিল বলে তিনি বিভিন্ন সময় দাবি করেছেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে আবারও এই প্রসঙ্গে ন্যান্সি খোলামেলা কথা বলেছেন।
তিনি এও বলেছেন যে, তাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ন্যান্সি কথা বলেন সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক ইস্যুতে শিল্পীদের হেনস্তা নিয়েও।
তিনি নিজে যেমন কালো তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন তেমনি বর্তমানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও আরেকদল শিল্পীর সম্মানহানী হয়েছে বা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ন্যান্সি বলেন, ‘দেখেন, বর্তমানেও কিন্তু শিল্পীরা রাজনৈতিক কারণে রোষানলের শিকার হচ্ছেন। তারা যে বিগত সরকারের তাবেদারি করেছে সেটা যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য যে তাদের আসলে কিছু করারও ছিল না। যদি কেউ ওই সরকারের বিরোধিতা করতে যেত তাহলে তো আমার মতো দশা তাদেরও হত। আমি না হয় সহ্য করতে পেরেছি, সবাইতো এমন পরিস্থিতি সহ্য করতে নাও পারত।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৩ সালের শেষের দিক থেকে এবং ২০১৪ থেকেই তো একের পর এক আমার জীবনে অ্যাটম বোমা ফেস করতে হয়েছে। আমি যে ধরনের গান করি সেটা তো আসলে ওপেন এয়ার কনসার্টের উপোযোগী নয়। মূলত কর্পোরেট শো আর টেলিভিশনেই আমার গাওয়ার জায়গা। এইসব জায়গাতে আমি নিষিদ্ধই ছিলাম। বেশিরভাগ প্রোগ্রামেই তো প্রধান অতিথি হিসেবে কোন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা সচিবকেই রাখা হয়। ফলে অনুষ্ঠানের আগেই তাদের কাছে শিল্পীর তালিকা পাঠাতে হত। আমার নাম দেখলেই বাদ দেওয়া হত, অনেক সময় আয়োজকরাই ঝামেলা এড়াতে আমাকে নিতেন না তাদের অনুষ্ঠানে। নিষিদ্ধ ছিলাম, অনেক প্রোগ্রাম চূড়ান্ত করার পরও বাতিল হয়ে যেত। মন খারাপ যে হত না, তা নয়। আমার কাজ করার সক্ষমতা থাকা স্বত্ত্বেও করতে দেয়া হচ্ছে না এ নিয়ে প্রচণ্ড রকম ক্ষোভ ছিল। আমার সহশিল্পীদের প্রতিও আমার ক্ষোভ ছিল। প্রথম দুই তিন বছর ড্রিপেশনের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছিলাম। আমাকে ওষুধও খেতে হত, সেটাকে অনেকে আত্মহত্যা চেষ্টা বলেও রটিয়েছে। সে গল্পের দিকে আমরা নাই যাই। ২০১৭ থেকে আমার তারখাখ্যাতি বা কাজ করার সক্ষমতা থাকতেও করতে পারছি না, এসব নিয়ে ভাবনা বন্ধ করে দিই।’
প্রথম কবে থেকে মনে হয়েছিল আমি আর সাধারণ মানুষের কাতারে নেই, তারকার কাতারে চলে এসেছন? জবাবে ন্যান্সি বলেন, ‘শোবিজে প্রায় এক দশক পার হবার পরও আমার নিজেকে তারকা মনে হত না। আমি বরাবরই খুব সাদামাটা জীবন যাপন করি। কিন্তু ২০১৪ সালে যখন আমার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে চারপাশে ভীষণ রকম হইচই শুরু হল, অনেকেই তা নিয়ে লেখালেখি করছে, ফেসবুক তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে, বাড়ির সামনে পুলিশ ভ্যান চলে এসেছে- তখন মনে হলো, তা আমি সাধারণ কেউ নই। আমি হয়ত বিশেষ কেউ, নয়ত আমার একটা স্ট্যাটাসকে কেন সবাই এতো গুরুত্ব দেবে?’
অনেকেই জানেন সেই স্ট্যাটাসটি কী ছিল। ন্যান্সির ভাষ্য, ‘বিগত সরকার বিরোধী একটা পোস্ট ছিল। আসলে আমি তো আমার মতামত প্রকাশ করেছি কেবল। আমি লিখেছিলাম যে, এখনই সময় আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার। ওটা ছিল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আগে।’
আমার বার্তা/এমই