এবার উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়েও আসছে পরিবর্তন। নির্দিষ্ট দল ও ব্যক্তির অতিরঞ্জিত বন্দনা পরিহার করে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতাদের অবদানকে যৌক্তিকরূপে উপস্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। যুক্ত হচ্ছে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা। এছাড়া, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের বির্তকিত নির্বাচন স্থান পাচ্ছে বইয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাঠ্যবইকে গ্রহণযোগ্য করতে ইতিহাসের বয়ান ও বিষয়বস্তুর নির্মোহ উপস্থাপনা জরুরি।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের মতো বিগত কয়েক বছরে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বইয়ে যুক্ত হয়েছে নানা বিকর্তিক বিষয়বস্তু। মুক্তিযুদ্ধসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে একটি রাজনৈতিক দল আর একক ব্যক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে পাঠ্যবইয়ে অতিরঞ্জন ও ইতিহাস বিকৃতি দেখা গেছে।
২০২৬ সালের একাদশ শ্রেণির পাঠ্যবইকে গ্রহণযোগ্য করতে ইতিহাস, বাংলা, পৌরনীতি ও সুশাসন বইয়ে আসছে নানা পরিবর্তন। ন্যাশনাল কারিকুলাম কো-অর্ডিনেশন কমিটির (এনসিসিসি) অনুমোদন সাপেক্ষে প্রকাশনীকে নানা নির্দেশনা দিয়েছে এনসিটিবি।
সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসছে পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়ে। প্রথম কয়েকটি অধ্যায়ে রাজনৈতিক নেতাদের অবদান সমানভাবে তুলে ধরার পাশাপাশি সংযোজন করা হবে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা। স্থান পাচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের উদ্দেশ্যে পাস হওয়া বির্তকিত পঞ্চদশ সংশোধনীর আলোচনা।
এছাড়া অষ্টম অধ্যায়ে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা অংশে ২০০৮ সালের পাতানো নির্বাচন, ২০১৪ সালের ভোটের আগের ১৫৪ আসনে বিনা ভোটে প্রার্থীদের জয়, ২০১৮ সালের রাতের ভোট এবং ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনের কথা পাণ্ডুলিপিতে যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান সময় সংবাদকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত হয়েছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সব কিছু একটা ব্যক্তি ও দল কেন্দ্রিক পরিণত করা হয়েছে। এখন এ ধরনের ফ্যাসিবাদ যেন তৈরি না হয়, সেজন্যই এগুলো পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত হওয়া দরকার।
তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে আবার দলীয় সরকারের অধীনে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলো মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে নেয়া হয়।
এ ছাড়া, শিক্ষাবিদ ও কারিকুলাম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফ্যাসিবাদী শাসনামলে পাঠ্যবইয়ে নির্দিষ্ট দল ও ব্যক্তিবিশেষের অতিরঞ্জিত বন্দনায় গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে পাঠ্যবই। তাই নিমোর্হ বয়ানের উপস্থাপনা জরুরি।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম বলেন, জাতীয় প্রত্যাশার ওপর ভিত্তি করে আমাদের জাতীয় শিক্ষা দর্শন স্থাপন করতে হবে। সেই জাতীয় দর্শন অর্জন করার জন্য আমাদেরকে প্রতিটি শিক্ষা স্তরে ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করতে হবে। সেই শিক্ষার উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষানীতি গঠন করতে হবে। আর সেই জাতীয় শিক্ষানীতির ওপর ভিত্তি করে আমাদেরকে জাতীয় শিক্ষাক্রম তৈরি করতে হবে প্রতিটি স্তরের জন্য আলাদা আলাদা।
তবে, পাঠ্যপুস্তকের মতো জাতীয় ইস্যুতে ঐকমত্য না হলে পরিবর্তন স্থায়ী হবে না বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।
আমার বার্তা/এল/এমই