
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশ থেকে গত কয়েকবছরে বিপুল পরিমাণের অর্থ পাচার করে আর্থিক খাত সংকুচিত করা হয়েছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০ বিলিয়নে নেমে গিয়েছিল। এখন অর্থ সরবরাহ বাড়িয়ে আর্থিক খাত বড় করতে হবে। তবে টাকা ছাপিয়ে নয়, প্রাকৃতিক উপায়ে মুদ্রা সরবরাহ বাড়াতে হবে।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) ক্যাশলেস প্রচারণার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে কক্সবাজার জেলায় আয়োজিত আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নগদ টাকার লেনদেন কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচারণা চালাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজনে কক্সবাজারে রোববার ও সোমবার দু’দিনের জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিতে লিড পার্টনার ছিল এসএসএল কমার্জ। বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে এ নিয়ে ঢাকার বাইরে ১১টি স্থানে ক্যাশলেস প্রচারণা করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পর্যায়ক্রমে আরও বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালানো হবে বলে জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এরই মধ্যে বেড়ে ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এতে করে বাজারে টাকার সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। টাকা না ছাপিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে এরকম উপায়ে টাকার সরবরাহ বাড়াতে হবে। চীন, ভারত, ভিয়েতনামসহ অধিকাংশ দেশের চেয়ে বাংলাদেশে জিডিপির তুলনায় মুদ্রা সরবরাহ অনেক কম। রেমিট্যান্স, বিদেশি ঋণ, বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়াতে পারলে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকার সরবরাহ বাড়বে। এতে পুরো ব্যাংক খাত বড় হবে। তা না করলে আলাদাভাবে কোনো ব্যাংক হয়তো বড় হবে। তবে পুরো খাতে কোনো সুফল আসবে না। কেননা, অর্থনীতিতে টাকার সরবরাহ না বাড়লে তা বিস্তৃত করা সম্ভব নয়। আর ব্যাংকেও আমানতের পরিমাণ বাড়বে না। তিনি বলেন, আগে দেশের বাইরে অনেক টাকা চলে গেছে। সেই টাকা এখন অর্থনীতিতে থাকলে আজকের এ অবস্থা হতো না। ধীরে ধীরে সেসব টাকা নিয়ে আসতে হবে। তবে সেটা একটা পদ্ধতি অনুসরণ করে আনতে হবে।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ক্যাশলেস লেনদেনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক চায় সবার হাতে স্মার্ট ফোন থাকুক। এ জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ডেবিট কার্ডের পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ডেও জোর দিতে হবে। ক্রেডিট কার্ডে সীমাও বাড়াতে হবে। ফিনটেক ও আর্থিক অর্ন্তভুক্তি একটা আরেকটার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। সকল প্রচলিত ব্যাংক একটা সময় ডিজিটাল ব্যাংক হয়ে যাবে। এ জন্য হয়তো ১০-১৫ বছর সময় লাগবে। এ খাতে বিনিয়োগ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খানের সভাপতিত্বে কক্সবাজারের সায়মন বিচ রিসোর্টে সোমবারের এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সকালে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে একটি র্যালি করা হয়। বিকেলে ক্যাশলেসের প্রচারপত্র বিলির মধ্য দিয়ে আয়োজন শেষ হয়। আগের দিন জনসচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে একাধিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বক্তব্য রাখেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের পরিচালক রাফেজা আক্তার কান্তা ও অতিরিক্ত পরিচালক মো. পারওয়েজ আনজাম মুনির। মূল প্রবন্ধে ক্যাশলেস বাংলাদেশের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়। ক্যাশলেস প্রচারণার জন্য প্রণোদনার মাধ্যমে মার্চেন্ট ডিসকাউন্ট রেট (এমডিআর) কমানো বা ফ্রি করা যায় কিনা সে প্রস্তাব করা হয়।
এসএসএল কমার্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা ব্যাংকের প্রতিযোগী না, সহযোগী। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পিএসপি ও পিএসওর মধ্যে মার্চেন্ট অ্যাকিউজেশনের বিষয়টি নিরূপণ করে দিতে হবে। তিনি বলেন, পর্যটক এলাকায় ক্যাশলেস করার অনেক সুযোগ রয়েছে। এখানকার ভ্যান, ছোট-ছোট দোকান, এমনকি সমুদ্রপাড়ে বসার চেয়ারের ভাড়াও ডিজিটালি দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
আমার বার্তা/এমই

