রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক কারণে, যারা কোনো নীতি সহায়তা পায়নি, সেসব শিল্প ও উৎপাদক প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকারে রেখে এবারও নির্বাচনের আগে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সুবিধা পেতে চাইলে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আবেদন করতে হবে। অর্থনীতিবিদদের মতে, রাজনীতি বা নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুবিধা নেয়া যেনো প্রাধান্য না পায় পুনঃতফসিলের আড়ালে।
কখনো কোভিড, কখনো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ হাওয়ায় দুর্বল অর্থনীতি, অথবা রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক হাওয়ায় কাজ হারিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ; বন্ধ হয়েছে অনেক কারখানা।
অর্থনীতির উপাদান একটি আরেকটির সঙ্গে যুক্ত। যুদ্ধ বা আনন্দ সংক্রমণের মতো ছড়াতে থাকে এক দেশ থেকে আরেক দেশে। মানুষের ঘরে পৌঁছে যায় অ-তিথির অতিথি হয়ে-- সেটা কখনো জ্বালানি কখনো পরিবহনের খরচের নামে অথবা বাজারের থলেতে মূল্যস্ফিতির চাপ হয়ে। অর্থনীতির এমন পরিস্থিতিতে একমাত্র কাজের নিশ্চয়তা হতে পারে নিরপাত্তার ঢাল। তবে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের এই সুযোগ, প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার আড়ালে যেনো রাজনৈতিক সুবিধার ঢাল না হয়, সেদিকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের।
অর্থনীতিবিদ ড. আবু ইউসুফ সময় সংবাদকে বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে কিছু শর্ত দেয়া উচিত। নির্বাচন করার জন্য কোনো দুষ্টু ব্যবসায়ী রয়েছে কি না, সেটা দেখা দরকার। অগ্রগতিটাও যেন মনিটর করা হয়। সে কি ব্যবসায় ফিরে আসছে কিনা, কলকারখানা সে চালু করেছে কিনা, নাকি কোনো একটা উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সে এটি করেছে, সেটি দেখা দরকার।’
কর্মসংস্থান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচাতে বরাবরের মতো আবারও নীতি সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নগদ ২ শতাংশ হারে ঋণ পরিশোধ করে পুনঃতফসিল করার সুযোগ পাবে প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে আগের মতো রাজনৈতিক মাপকাঠিতে নয়, বরং বৈশ্বিক অভিঘাত ও বৈদেশিক মূদ্রার বিপরীতে দেশি টাকার বিনিময় হার অপ্রত্যাশিতভাবে কমে যাওয়ায় যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তারা এই সহায়তা পাবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, অতীতে সচ্ছলদের জন্য এ সুবিধা দেয়া হয়েছে। যাদের ঋণ খেলাপি হওয়ার কথা না, তাদের হয়েছে। প্রফেশনাল ব্যাংকারদের ব্যাংক পরিচালনা করা উচিত, সব ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব বা মতাদর্শের ঊর্ধ্বে থেকে।
এবারের নীতির আওতায় ২ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছর সময় পাওয়া যাবে ঋণ পরিশোধে। ৩০০ কোটি টাকা বা তার বেশি ঋণের ক্ষেত্রে নীতি সহায়তা নিতে বাছাই কমিটির কাছে আবেদন করতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বিদ্যমান খেলাপি ঋণের স্থিতির ওপর কমপক্ষে ২ শতাংশ নগদে অর্থ জমা দিতে হবে। তাতে ঋণ নিয়মিত হলে দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ (ঋণ পরিশোধে বিরতি) তা পরিশোধে ১০ বছর সময় পাওয়া যাবে। তবে ইতিপূর্বে ঋণ তিন বা তার চেয়ে বেশিবার পুনঃ তফসিল করা হলে অতিরিক্ত ১ শতাংশ অর্থ জমা দিতে হবে।
আমার বার্তা/এল/এমই