বর্ষার শেষ প্রহর, শরৎ'র নরম রোদ আর ভরা যৌবনের নদী। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মুরাদপুর এলাকার ভাদাই ও ভদ্রাবতী নদী যেন এ সময় জীবন্ত হয়ে ওঠে। দুই তীরজুড়ে ছড়ানো গাছের সারি, বুনো লতা-গুল্মে ঘেরা সবুজ, আর সরু খালের মতো স্রোতস্বিনী নদী—সব মিলিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক অপার সৌন্দর্যের। এই সৌন্দর্য উপভোগে প্রতিদিন ভিড় করছেন শত শত ভ্রমণপিপাসু। অনেকেই একে তুলনা করছেন সিলেটের খ্যাতনামা রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের সঙ্গে। তাই স্থানীয়দের কাছে নদী দু’টি এখন পরিচিত ‘মিনি রাতারগুল’ নামে।
শেরপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে, নন্দিগ্রাম উপজেলার সীমানা ঘেঁষা মুরাদপুর বাজারসংলগ্ন এই নদীটি শীতকালে প্রায় শুকিয়ে গেলেও বর্ষা ও শরতে নতুন প্রাণ ফিরে পায়। কয়েক বছর আগেও ভাদাই-ভদ্রাবতী নদীর এমন রূপ ছিল না। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হওয়ার সুবাদে এখন এটি আলোচিত পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় গবেষক মোঃ আজিজুল হক (মাস্টার) বলেন, “ভাদাই নদীর উৎপত্তি বগুড়া সদরের শাবরুল গ্রামের একটি প্রাচীন দীঘি থেকে। এই নদী সদর, শাজাহানপুর, নন্দিগ্রাম, নাটোরের সিংড়া হয়ে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় গিয়ে চলনবিলে মিশেছে। এটি শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক কারণেও গুরুত্বপূর্ণ।”
নদীর নামকরণের পেছনেও আছে হৃদয়স্পর্শী কাহিনি। জনশ্রুতি আছে, ভাই ভাদাই ও বোন বন্দানির গল্প থেকে ভাদাই নদীর নামকরণ। অন্যদিকে ভদ্রাবতী নদীর নামকরণ হয়েছে কমলাপুর রাজ্যের রাজকন্যা ভদ্রাবতীর স্মৃতিকে অম্লান রাখতে। নদীর সৌন্দর্যের সঙ্গে এসব কাহিনি পর্যটনের আকর্ষণকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
পর্যটক শেরপুরের শরিফ-উজ- জামান বলেন, “বন্ধুদের নিয়ে ‘মিনি রাতারগুল’ দেখতে এসেছি। স্বচ্ছ পানি, দু’ধারের গাছপালা আর নৌকা ভ্রমণ—সবকিছু মিলিয়ে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।” ভ্রমণে আসা শামীমা শিমু বলেন, “ইউটিউবে দেখে এখানে এসেছি। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই মুগ্ধ করেছে। যদি সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে আরও উন্নয়ন হয়, তবে এটি জাতীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।”
স্থানীয় বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্টরা জানান, সামান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন নৌকাঘাট, বিশ্রামাগার, সাইনবোর্ড ও সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নিলে এখানে পর্যটকের সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়বে। এতে স্থানীয় অর্থনীতিও প্রাণ ফিরে পাবে। তবে নদীর প্রবাহ ও পরিবেশ রক্ষায় সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি।