নওগাঁর মান্দা উপজেলা প্রশাসনিক ভবনের সামনের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পয়ঃবর্জ্যের ভয়াবহ দূষণ দীর্ঘদিন ধরে চললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই, এমন অভিযোগ তুলে আজ বুধবার (৬ আগস্ট) দুপুরে চরম ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও মুসল্লিরা প্রশাসনিক ভবনের সামনের ড্রেন দিয়ে অবাধে টয়লেটের মল ও মলমিশ্রিত পানি রাস্তায় এসে পড়ায় তারা প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠেন এবং ড্রেনের একটি সংযোগ বন্ধ করে দেন।
উপজেলার প্রশাসনিক ভবনের সামনে দিয়ে যাওয়া ব্যস্ততম সড়কের পাশের ড্রেন এখন এক ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ দূষণের স্থায়ী উৎসে পরিণত হয়েছে। মূলত বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের উদ্দেশ্যে নির্মিত এই ড্রেনে আশপাশের বাসিন্দারা অবৈধভাবে টয়লেটের পয়ঃবর্জ্য লাইন যুক্ত করে দেওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে দুর্বিষহ অবস্থা। দুর্গন্ধযুক্ত পানি রাস্তায় গড়িয়ে পড়ছে, কখনো কখনো দৃশ্যমান মলও ভেসে আসছে।
এই ড্রেনের ঠিক পাশেই অবস্থিত উপজেলা পরিষদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা। পাশ দিয়ে যে সড়কটি গিয়েছে, সেটিই প্রধান বাজারমুখী ব্যস্ততম সড়ক। প্রতিদিন এই পথে হাজারো মানুষ চলাচল করলেও, এলাকাবাসীর অভিযোগ, এ নিয়ে প্রশাসনের কোনো কার্যকর নজরদারি নেই।
ড্রেনটির পাশে রয়েছে একটি পুরনো কোর্ট মসজিদ। প্রতিদিন শত শত মুসল্লি সেখানে নামাজ আদায় করতে আসেন। তারা জানান, ড্রেনের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে গিয়ে অজু নষ্ট হয়ে যায়, কখনো আবার দুর্গন্ধে দাঁড়িয়ে থাকাই কষ্টকর হয়ে পড়ে।
শুধু মুসল্লিই নয়, ড্রেনটির আশপাশে রয়েছে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা। শিক্ষার্থীরা নাকে রুমাল চেপে রাস্তা পার হন। পথচারীদের ভাষায়, এই রাস্তায় হাঁটা এখন যেন নরকযাত্রার মতো।
স্থানীয় ব্যবসায়ী, মুসল্লী এবং পথচারীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে আশপাশের কিছু বাসিন্দা অবৈধভাবে টয়লেটের পয়ঃবর্জ্য সরাসরি বৃষ্টির ড্রেনে যুক্ত করে দিয়েছেন। এতে করে ড্রেনের মাধ্যমে দুর্গন্ধযুক্ত পানি গড়িয়ে রাস্তায় চলে আসছে, যা চলাচলের অযোগ্য পরিবেশ তৈরি করছে। অনেক সময় প্রকাশ্যেই দৃশ্যমান মল ভেসে আসছে যা পথচারী, দোকানদার এবং পাশেই অবস্থিত মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিদের জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এক দোকানদার বলেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন ভয়াবহ দূষণ চললেও কেউ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। প্রতিদিন আমরা দুর্গন্ধে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছি।আরেক মুসল্লি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পবিত্র নামাজ আদায়ের জায়গার পাশেই যদি এমন নোংরামি হয়, তাহলে মানুষের ঈমান রক্ষা হবে কীভাবে?
এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তারা অবিলম্বে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টির পানি ও টয়লেটের মল একসঙ্গে ড্রেনে মিশিয়ে দেওয়া সরাসরি পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর পথ খুলে দেয়। কলেরা, টাইফয়েড, ডায়রিয়া সহ বিভিন্ন রোগ ছড়াতে পারে সহজেই। এটি শুধু পরিবেশ নয়, মানবাধিকার ও জনস্বাস্থ্যের চরম লঙ্ঘন।
স্থানীয় এক শিক্ষক বলেন, আমরা উপজেলা প্রশাসনের একেবারে সামনেই বসবাস করি, তবু আমাদের দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই! এর থেকে বড় লজ্জা আর কী হতে পারে?
জনগণ প্রশাসনের কাছে দাবি তুলেছে— দ্রুত অবৈধ পয়ঃনিষ্কাশন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হোক এলাকাটি নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করা হোক ভবিষ্যতে এমন অপরিকল্পিত ড্রেন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক
এই প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে মান্দা উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান আপনারা জনগণের কণ্ঠ শুনুন, এই দূষণ রোধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিন।