বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ২০২৪ সালের জুলাই মাসটি দেশের ইতিহাসে এক রক্তাক্ত ও শোকাবহ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। গণঅভ্যুত্থানের সেই উত্তাল সময়ে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন বহু তরুণ। তাদেরই একজন জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার পশ্চিম নয়ানগরের প্রাইভেটকার চালক আবুজর।
আবুজরের জন্ম এক সাধারণ পরিবারে। বাবা তারা মিয়া প্রায় এক দশক আগে মারা যান। পরিবারের হাল ধরতে শহরে এসে ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় প্রাইভেটকার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন আবুজর। তার ওপর নির্ভর করেই চলতো মা সুফিয়া বেওয়া, নিঃসন্তান বিধবা খালা ও নানীর সংসার।
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকায় পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন আবুজর। গুলি তার বুক ভেদ করে শরীরের অন্য প্রান্তে থেমে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, পরে অবস্থার অবনতি হলে মহাখালীর মেট্রোপলিটন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ২৭ জুলাই রাত ১০টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
আবুজরের মৃত্যু যেন তার পরিবারের সব স্বপ্নই গুঁড়িয়ে দেয়। মায়ের চোখে এখন শুধু কান্না, বুকজুড়ে অপূরণীয় শূন্যতা। ছেলের ছবি বুকে নিয়ে দিন কাটান মা সুফিয়া বেওয়া। বলেন,
“আমার ছেলে আর ফিরবে না। যারা আমার বুক খালি করল, আমি তাদের বিচার চাই। আমি অনেক ধৈর্য ধরে আছি। আমার মতো কষ্টে আর কেউ নেই—সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।”
আবুজরের বড় ভাই মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান, “বাড়ির পাশে নতুন ঘর তুলবো বলে জায়গা খালি করে রেখেছিলাম, ইট কিনে রেখেছিলাম, ওর বিয়ের জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছিলাম। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেলো একটি বুলেটে। ভাইয়ের চিকিৎসার খরচ জোগাতে ইট বিক্রি করেছি, ঋণ করেছি। এভারকেয়ার হাসপাতালে ১১ লাখ ২৭ হাজার ৭৯২ টাকা ও মেট্রোপলিটনে আরও প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ করেও ভাইকে বাঁচাতে পারিনি। যদি সম্ভব হতো, নিজের অঙ্গ বিক্রি করেও তাকে বাঁচাতাম।”
তিনি জানান, কিছু সহায়তা পেলেও এখনো ঋণের বোঝা বহন করতে হচ্ছে তাদের। শোক ও দেনার চাপে পুরো পরিবার আজ দিশেহারা। আবুজরের খালাও বর্তমানে গৃহহীন অবস্থায় বিভিন্ন জায়গায় থাকেন। মা ও নানী এখন অন্য ছেলেদের আশ্রয়ে থাকলেও, প্রতিটি দিন তাদের কাটছে কান্না আর স্মৃতির ভারে।