নীলফামারীর সৈয়দপুরে গড়ে উঠেছে দুম্বার খামার। মরু অঞ্চলের এই পশু স্থানীয় আবহাওয়ায় দিব্যি মানিয়ে নিয়েছে। খামারের মালিক রবিউল ইসলাম কাজলের হাত ধরেই সৈয়দপুরের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে শুরু হয় এই নতুন ধারার পশুপালন। মাত্র দুটি দুম্বা নিয়ে কাজল শুরু করে। এখন তার খামারে রয়েছে ২৭টি দুম্বা। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে এগুলোকে প্রস্তুত করছেন তিনি।
সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের কাথারিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঘাস খাচ্ছে দুম্বাগুলো। খামারে রয়েছে কাঁচা ঘাস, ভুসি, খৈলসহ নানা ধরনের খাবার। পশুগুলোর দেখভালের জন্য রয়েছে দুজন কর্মচারী।
খামারের মালিক রবিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বড় ভাই রেজাউল ইসলাম নয়নের পরামর্শে তুরস্ক থেকে প্রথমে ২টি পরে আরও ৬টি দুম্বা এনেছিলাম। সব মিলে দাম পড়েছিল ১২ লাখ টাকা। কিছুদিনের মধ্যেই সেগুলো বাচ্চা দেওয়া শুরু করে। এখন খামারে ২৭টি দুম্বা আছে। দুম্বাগুলোর বয়স দুই বছর। প্রতিটির ওজন ৫০ থেকে ১০০ কেজির মধ্যে। বাজারমূল্য ধরা হচ্ছে দেড় লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত। দুম্বার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ভালো। মরুর প্রাণী হলেও বাংলাদেশে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। এদের পালন তুলনামূলকভাবে সহজ। এখন তো লাভই হচ্ছে।
তার খামারে দুম্বার পাশাপাশি দেশি ও উন্নত জাতের ছাগলও রয়েছে। শখ থেকে শুরু হলেও এখন তা বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। খামারটি ঘুরে দেখতে প্রতিদিনই আশপাশের এলাকা থেকে মানুষজন আসছেন। স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম বলেন, এলাকায় এর আগে কেউ দুম্বা পালন করেনি। নতুন কিছু দেখার আগ্রহে আমরা প্রায়ই খামারে যাই। ওখানকার পশুগুলো দারুণ সুস্থ-সবল।
খামারে দুম্বা দেখতে আসা ইব্রাহীম সুজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের দেশে এই ধরনের দুম্বার খামার দেখা যায় না। কিন্তু রবিউল ভাই শখের বসে দুম্বা পালন শুরু করলেও বর্তমানে তার খামারে প্রায় ২৭টি দুম্বা রয়েছে। আমাদের এলাকায় বা আমাদের দেশে সাধারণত এসব ভিনদেশি পশু পালনের জন্য খরচ বেশি হাওয়ায়, কেউ এসব পশু পালন করতে চায় না। কিন্তু, চেষ্টা করলে যে সফল হওয়া যায়, রবিউল ভাই তা প্রমাণ করেছেন।
রবিউলের খামারে কাজ করেন রমজান আলী। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এই খামারে প্রতিদিন কাজ করি। এছাড়া ঘাস কেটে দেই এবং ঘাসের সঙ্গে আরও অন্যান্য খাবার মিশিয়ে দিনে ৩-৪ বার খাবার দেই। আরব দেশের এসব প্রাণী লালনপালন করে ভালোই লাগছে।
রবিউল ইসলামের ইচ্ছে, ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে খামারটি পরিচালনা করবেন। তিনি বলেন, সরকার যদি সহায়তা করে, তাহলে আরও অনেকে এই খাতে আসবে। কর্মসংস্থান বাড়বে। কোরবানির জন্য আগ্রহীরা চাইলে সরাসরি খামারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দুম্বা কিনতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সিরাজুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে রবিউল ইসলাম কাজল তার নিজ বাড়িতে উন্নত জাতের ছাগলের পাশাপাশি দুম্বার খামার গড়ে তুলেছেন। আরব দেশের এ প্রাণীটিকে আমাদের এই অঞ্চলে সবসময় দেখা যায় না। আমি নিজে তার খামারটি পরির্দশন করেছি। উনি যেমন আশাবাদী আমরাও তেমন আশাবাদী। এই মরুর প্রাণী আমাদের দেশে লাল-পালন করা সম্ভব। এই দুম্বা লাল-পালনে যাবতীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। খামারটি দেখে আমার মনে হয়েছে এই দুম্বাগুলো শরীর স্বাস্থ্য অনেক ভালো। সৌদির দুম্বার থেকেও এই দুম্বাগুলোর স্বাস্থ্য অনেক ভালো। আমার মনে হয় আরও যদি উদ্যোক্তা এগিয়ে এলে তারাও এই খামার করে লাভবান হবে।
আমার বার্তা/এল/এমই