পতিত আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত ও গণধিকৃত বলে উল্লেখ করেছেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি বলেন, তারা নির্বাচনে অংশ নিলে গণরোষ সৃষ্টি হবে, যা সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। তাই তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, এবারের নির্বাচনে গৃহযুদ্ধের কোনো আশঙ্কা নেই। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা। সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে না পারলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া উচিত।
শনিবার (০৯ আগস্ট) রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে এসব কথা বলেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান। ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের চেয়ে প্রার্থীসহ ভোটারদের ভূমিকাই প্রধান’ শীর্ষক এ ছায়া সংসদের আয়োজন করা হয়।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, নির্বাচনে অনিয়ম হলে তা বন্ধ করার ক্ষমতা প্রয়োগে ব্যর্থ হলে নির্বাচন কমিশনও ব্যর্থ হবে। কোনো একটি দল ক্ষমতায় আসছে, এমন প্রচারণা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে নির্বাচনের পুরো সিস্টেম দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রচলিত আসনভিত্তিক ভোট পদ্ধতি ব্যর্থ হওয়ায় এবারের নির্বাচনে মিশ্র পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা যেতে পারে। পিআর পদ্ধতি সমর্থনযোগ্য হলেও ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান জানান, ভবিষ্যতে সরকারি ও বিরোধী দল মিলে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে ঐকমত্য কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা একটি বড় অর্জন। এতে নির্বাচন কমিশন আরও শক্তিশালী হবে এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার আশঙ্কা দূর করতে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার ভিত্তিতে আগামী রোজার আগেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। পরাজিত ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী পার্শ্ববর্তী দেশে অফিস খুলে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে এবং নির্বাচন বানচাল করতে গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কেউ কেউ ১/১১ সৃষ্টির বা গৃহযুদ্ধের ভয় দেখাচ্ছে, যা অমূলক। ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য এখন জরুরি। কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো ঐকমত্য হয়নি, যদিও শিগগিরই জুলাই সনদে সব দলের স্বাক্ষরের কথা রয়েছে। তবুও অনৈক্যের কারণে শঙ্কা রয়েছে। গণতন্ত্র ও জাতির স্বার্থে সব পক্ষের কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা উচিত।
তিনি বলেন, স্বৈরাচারবিরোধী দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে এনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। এর জন্য নির্বাচন কমিশন, দল, প্রার্থী ও ভোটারদের দায়িত্বশীল আচরণ প্রয়োজন। পাল্টাপাল্টি দোষারোপের রাজনীতি ও কাদা ছোড়াছুড়ির অপসংস্কৃতি পরিহার করে নেতাদের বক্তব্যে শালীনতা বজায় রাখতে হবে। যাতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভ্যুত্থান-সমর্থিত দলগুলোর মধ্যে বিভেদ না হয়। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন হবে উৎসবমুখর এবং প্রত্যেক নাগরিক নির্বিঘ্নে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। এজন্য অবশ্যই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
ছায়া সংসদে ঢাকা কমার্স কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে ঢাকা কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক কাজী জেবেল, সাংবাদিক সাইদুর রহমান ও শিরিনা খাতুন বীথি। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।
আমার বার্তা/এমই