বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, কোনো দল, সংস্থা যদি মনে করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধিয়ে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন নস্যাৎ করবে, তাহলে তারা ভুল ভাবছে। এটা সম্ভব না। এদেশে মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই মিলেমিশে থাকে।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) তোপখানা রোডস্থ বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনের ২ তলায় দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের উদ্যোগে দেশব্যাপী ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়াতে নীলনকশা এবং ফরিদপুরে মধুখালী শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
দুদু বলেন, বাংলাদেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই দেশ যে কারণে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার থেকে যোজন যোজন দূরে চলে গেছে। বাংলাদেশ প্রধানত গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা এই দেশ অর্জন করেছিলাম। ভাবতে অবাক লাগে, তবে বাস্তবতা। এদেশে মানুষের কোনো অধিকার নাই। এদেশের জনগণ তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে, তার প্রতিনিধি নির্বাচন করবে, সে অধিকার তাদের নাই। ফ্যাসিবাদ এমন একটা জিনিস যারা সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামত উপেক্ষা করে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধর্মীয় ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভোটের ক্ষেত্রে সব জায়গায় উপেক্ষিত। এত ভয়ংকর একটা পরিস্থিতির মধ্যে দেশকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন। এই কঠিন অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বিএনপির সহযোগী হয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, যারা জেলে গিয়েছেন তারা জানে বর্তমানে জেলে কত কষ্ট। সাধারণ জেল ও ডিভিশন জেলের মধ্যে একটু পার্থক্য থাকতে পারে। গত ছয় বছর ধরে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জেলে আছেন। অনেকেই বলে তিনি বাসায় আছেন। কিন্তু না এটা বাসা নয়।
তিনি বলেন, যারা জেলখানায় আছেন বা ছিলেন আর যারা বাহিরে ছিলেন কেউ শান্তিতে ছিল না। আমাদের এই কষ্টগুলোকে এক জায়গায় করতে হবে। আমরা প্রতিশোধ বা প্রতিহিংসার কথা বলছি না, আমরা আমাদের অধিকার ফিরিয়ে আনতে চাই।
কৃষকদলের সাবেক এই আহ্বায়ক বলেন, ফরিদপুরে দুটি ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। একটি পরিবারের দুটি সন্তানকে হত্যা করেছে। ওই পরিবারকেই ধ্বংস করা হয়েছে। এদেশে মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই মিলেমিশে থাকে। এদেশে যদি কোনো দল মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের সম্মান করে সেটা হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। কেউ যদি মনে করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন নস্যাৎ করবে তাহলে তারা ভুল ভাবছে। এটি সম্ভব না। গণতন্ত্রের জন্য ৭১ সালে এ দেশে যুদ্ধ হয়েছে। এবং আমরাই জয়ী হয়েছি।
তিনি বলেন, এটা জবাবদিহিমূলক সরকার না। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে জবাবদিহিমূলক সরকার গঠন করতে হবে। ফ্যাসিবাদ জবাবদিহিতা করে না। নির্বাচনকে তারা ভয় করে। নির্বাচন ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আজ প্রকৃতি আমাদের সাথে যে বৈরি ব্যবহার করছে। জবাবদিহিমূলক সরকার থাকলে আমার মনে হয় প্রকৃতিও সদয় হবে। এই সরকার বন উজাড় করে ফেলেছে, ধ্বংস করে ফেলেছে এর কোনো জবাবদিহিতা নাই। গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিতামূলক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে এই বন জঙ্গল ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে। এই প্রকৃতিও আমাদের সাথে আর বৈরী আচরণ করবে না।
দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মিয়া মো. আনোয়ার, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ফারুক হাসান, অ্যাডভোকেট মো. আব্দুর রহিম মিয়া, গিয়াস উদ্দিন খোকনসহ প্রমুখ।
আমার বার্তা/এমই