রমজানকে সামনে রেখে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ ছিল পদক্ষেপগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ক টাস্কফোর্সের এক সভায় ভোক্তা পর্যায়ে সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ মার্চ থেকে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হবে ১৬৩ টাকায়। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হবে ১৪৯ টাকায়। এছাড়া বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৮০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বেঁধে দেওয়া দাম কার্যকরের নির্ধারিত তারিখ অতিবাহিত হওয়ার তিনদিন গেলেও এখনো মন গড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল।
ভোক্তাদের অভিযোগ, সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও ভোক্তা পর্যায়ে তা বাস্তবায়ন হয় না। ব্যবসায়ীরা নিজের মর্জি মত বিক্রি করলেও সরকারের জোরালো নজরদারির অভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।
বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে লাভ নেই। কারণ দাম কার্যকরে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই।
সারোয়ার হোসেন নামের এক ভোক্তা বলেন, দাম বাড়ানো আর কমানো এসব নাটক ছাড়া কিছু না। আমাদের কষ্ট আর দুর্দশা তো আছে আগামীতেও থাকবে। আপনি দেখেন কোন তেল আপনি নির্ধারিত দামে পাবেন না। প্রতি কেজিতে অতিরিক্ত দাম আছেই।
ভোক্তাদের কথাকে পুঁজি করে রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজারে ক্রেতা সেজে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন আমাদের প্রতিবেদক। সরেজমিন তেল কিনতে গিয়ে কাওরান বাজার, তেজগাঁও, মিরপুর এলাকাসহ বেশ কয়েকটি বাজারে দেখা যায়, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রায় ৫-১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। যেখানে প্রতি কেজি বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হওয়ার কথা ১৬৩ টাকায়। বাজারে তা ১৭০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া প্রতিকেজি খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও তা বিক্রি হচ্ছে ১৬০-৬৫ টাকায়।
পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ৮০০ টাকা দাম নির্ধারণ হলেও ব্র্যান্ড ভেদে দামে রয়েছে ব্যবসায়ীদের ইচ্ছার অবস্থান। তীর ব্র্যান্ডের ৫ লিটার সয়াবিন তেল ৭৯০-৮০০ টাকায় বাজারে পাওয়া গেলেও রূপচাঁদা, ফ্রেশ ও অন্যান্য কোম্পানির তেল মিলছে না ৮২০ টাকাতেও।
দামের এমন তারতম্যের কারণে ক্রেতা সেজে খোঁজ নেওয়ার সময় প্রতিবেদক কাওরান বাজারের কয়েকটি দোকানে বাক-বিতণ্ডায় জড়ালেও কয়েক মিনিট পর এবার সাংবাদিক পরিচয়ে যাওয়া হয় সেসব দোকানে। কেউ কেউ নিজ স্থানে বীরের বেশে থাকলেও অনেকেই জানালেন অসহায়ত্বের কথা।
কাওরান বাজারের ইয়াসিন জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের হাতে কিছু নেই। আমরা কম দামে না পেলে কিভাবে কম দামে বিক্রি করব। ১৬৩ টাকায় তো নিজেই কিনতে পারিনি।
বিধান ভ্যারাইটিজ স্টোরের মালিক বিধান শাহা জানান, আমরা চেষ্টা করি কম দামে দিতে। তবে জটিলতা হয় সরকারের দামের সাথে মিল থাকে না সরবরাহকারীদের। এতে ভোক্তারা যেমন অসন্তোষ, তেমনি আমরাও পড়ি বিপদে।
তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা হবে কিনা জানতে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামানের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি কেটে দেন।
পরে দপ্তরটির কার্যক্রম বিভাগের উপ পরিচালক আতিয়া সুলতানা বলেন, আমাদের এ বিষয়ে তদারকি হয়েছে। আমাদের কার্যক্রম চলমান আছে।
আমার বার্তা/এমই