
পর্যটকদের জন্য আগামী ১ নভেম্বর থেকে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত করা হচ্ছে। কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঘাট থেকে সেন্ট মার্টিনে যাবে পর্যটকবাহী জাহাজ। আইনগত বিধি নিষেধ থাকায় উখিয়ার ইনানী থেকে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার সুযোগ নেই।
ভ্রমণকালে দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের রক্ষায় প্রযোজ্য ১২টি নির্দেশনা উল্লেখ করে গত ২২ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ধারণা করছিলেন, উখিয়ার ইনানী থেকে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে জাহাজ চলবে এবং তারা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে আইনগত বিধিনিষেধে তা সম্ভব হচ্ছে না।
বিআইডব্লিউটিএ এবং নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে এ বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দিয়ে গতকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) একটি চিঠি দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে। মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আব্দুল্লাহ আল মামুনের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে পাঁচটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্র সৈকতকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করেছে।
ইসিএ এলাকায় কক্সবাজার পৌরসভা (রাজস্ব বিভাগের রেকর্ড করা সমুদ্র সৈকত বা বালুচর বা খাড়ি বা বন বা জলাভূমি) এবং ইনানী মৌজা ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপ অন্তর্ভুক্ত।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত-২০১০)-এর ৫ (৪) ধারা অনুযায়ী, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন বলে ঘোষণা করা এলাকায় কোনো ক্ষতিকর ‘কর্ম বা প্রক্রিয়া’ চালু রাখা বা শুরু করা যাবে না। চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ জমির উদ্দিন।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগের নিয়মেই কক্সবাজারের বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে জাহাজে করে সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবেন। বিষয়টি ইতোমধ্যে অংশীজনদের জানানো হয়েছে।
সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে ৬ ঘণ্টা সময় লাগে। আবার প্রথম একমাস রাত্রিযাপনের সুযোগ নেই। ফিরতে লাগবে ৬ ঘণ্টা। সেন্ট মার্টিন দেখার খুব কম সময় পাবেন পর্যটকেরা।
রাত্রিযাপনসহ বিধিনিষেধের ক্ষেত্রে পুর্নবিবেচনার দাবি জানিয়ে বাহাদুর আরও বলেন, গত বছরের আজকের দিনেও সেন্ট মাটিনের পর্যটন শিল্প রক্ষা ও লাখ লাখ মানুষের জীবিকা বাঁচানোর জন্য ঢাকার রাজপথে আন্দোলনে ছিলাম। জানি না হয়তো আবারও রাজপথে নামতে হতে পারে, সরকারের সদয় দৃষ্টি আহ্বান করছি যেন আমাদের কথা চিন্তা করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন বলছে, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে পর্যটকদের অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। যেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে ও কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।
অনুমোদন ছাড়া সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচল করতে পারবে না জানিয়ে প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারবেন না।
নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত্রিযাপন করা যাবে না উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপনে বলা,হয় ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপনের অনুমতি থাকবে। ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে।
সেন্ট মার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখতে দ্বীপে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি ও বারবিকিউ পার্টি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেয়াবনে প্রবেশ; কেওড়া ফল সংগ্রহ বা কেনা-বেচা; সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজ কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা যাবে না। এছাড়া সৈকতে মোটরসাইকেল ও সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দিয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সেন্ট মার্টিনে নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহার উপযোগী প্লাস্টিক- যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিকের চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনি প্যাক, ৫০০ মিলিলিটার ও এক লিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহনে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
সেন্ট মার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) ফয়েজুল ইসলাম বলেন, দ্বীপের মানুষ পর্যটকদের অপেক্ষায় মুখিয়ে আছে, কারণ আয় না থাকায় তাদের খুব কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। পর্যটকরা সেন্টমার্টিনের জন্য আর্শীবাদ হয়ে আসেন। নভেম্বর মাসে রাত্রিযাপনের সুযোগ এবং ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভ্রমণ চালু রাখলে এখানকার জনজীবনে কিছুটা হলেও শান্তি মিলবে।
আমার বার্তা/এমই

