হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে গতকাল রোববার বিকেল থেকে বিকল্প ৯ নম্বর গেট দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কাস্টমস কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের কারণে স্থবির হয়ে পড়া আমদানি পণ্য খালাস কার্যক্রম পুনরায় সচল হলো।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, কমিশনারের অনুমোদনক্রমে ঢাকা কাস্টমস হাউসের এয়ার ফ্রেইট ইউনিট রোববার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমদানি পণ্য খালাস কার্যক্রম পুনরায় চালু করেছে। তবে রপ্তানি কার্যক্রম অগ্নিকাণ্ডের আগে ও পরেও প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা স্বাভাবিকভাবে চলছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ আপাতত ‘জিএসই মেইনটেন্যান্স’ নামক স্থানে পণ্য রাখার জন্য নতুন স্থান নির্ধারণ করেছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সেখানে পণ্যের কায়িক পরীক্ষা সম্পন্ন করছে। পাশাপাশি ৯ নম্বর গেটে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড (ASYCUDA World) সিস্টেমের সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে পণ্যের খালাস কার্যক্রম সম্পাদন করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে আমদানি কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ছিল। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা ও দেশের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড সচল রাখার লক্ষ্যে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সেই ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার থেকে ৯ নম্বর গেট দিয়ে আমদানি পণ্য ডেলিভারি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ সকাল থেকেই যথানিয়মে কাস্টমস কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, “ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা ও বাণিজ্যিক ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে কাস্টমস হাউস সর্বদা কার্যক্রম সচল রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের সুবিধা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বেসামরিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।”
ব্যবসায়ী মহল কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, আমদানি কার্যক্রম পুনরায় সচল হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা হলেও কমবে।
একজন আমদানিকারক বলেন, “দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ায় আমাদের পণ্য ডেলিভারি প্রক্রিয়া আবার শুরু হয়েছে। এখন বিমান থেকে খালাস হওয়া পণ্য কাস্টম ক্লিয়ারিং শেষে ডেলিভারি পাওয়া যাচ্ছে। তবে অগ্নিকাণ্ডে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করতে আমাদের অনেক সময় লাগবে।”
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কাস্টমসের এই সময়োপযোগী উদ্যোগ ব্যবসায়ী মহলের মধ্যে নতুন গতি সঞ্চার করেছে। তাদের মতে, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যকর সমন্বয় ভবিষ্যতে এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
গত শনিবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের কুরিয়ার গুদামে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে সরকার ইতিমধ্যে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটওয়ারীকে আহ্বায়ক করে গঠিত এই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন— জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব মো. রইচ উদ্দিন খান, প্রথম সচিব মো. তারেক হাসান, কাস্টম হাউস ঢাকার যুগ্ম কমিশনার মুহাম্মদ কামরুল হাসান, এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের উপ-সচিব পঙ্কজ বড়ুয়া (যিনি সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন)।
কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে অগ্নিকাণ্ডে সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
আমার বার্তা/জেএইচ