‘আঁধারে এসেছি আমি/আধারেই যেতে চাই ! তোরা কেন পিছু পিছু
আমারে ডাকিস্ ভাই ! আমিতো ভিখারী বেশে/ফিরিতেছি দেশে দেশে
নাহি বিদ্যা, নাহি বুদ্ধি/ গুণ তো কিছুই নাই !
অথবা ....আলো তো লাগে না ভাল/আধারি যে ভালবাসি !/আমিতো পাগল প্রাণে/কভূ কাঁদি, কভূ হাসি !চাইনে ঐশ্বর্য-ভাতি, চাইনে যশের খ্যাতি/আমিযে আমারি ভাবে মুগ্ধ আছি দিবানিশি !
এই মহান সৃষ্টি যার হাত দিয়ে বেরিয়ে এসেছে তিনি কায়কোবাদ। গতকাল ২১ জুলাই ছিল তার ৭২ তম প্রয়াণ দিবস।
বাংলা ভাষার উল্লেখযোগ্য কবি কায়কোবাদ, যাকে মহাকবিও বলা হয়। তার প্রকৃত নাম কাজেম আল কোরায়শী। ‘মীর মোশাররফ, কায়কোবাদ, মোজাম্মেল হকের মধ্যে কায়কোবাদই হচ্ছেন সর্বতোভাবে একজন কবি।
কাব্যের আদর্শ ও প্রেরণা তার মধ্যেই লীলাময় হয়ে ওঠে। সেজন্য বলা যায় যে কবি কায়কোবাদই হচ্ছেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি’। তিনি বাঙালি মুসলিম কবিদের মধ্যে প্রথম সনেট রচয়িতা।
কায়কোবাদ ১৮৫৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি (বর্তমানে বাংলাদেশের) ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার অধীনে আগলা-পূর্বপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
তার পিতা শাহামাতুল্লাহ আল কোরেশী ছিলেন ঢাকা জেলা জজ কোর্টের একজন আইনজীবী। কায়কোবাদ সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে অধ্যয়ন করেন।
পিতার অকালমৃত্যুর পর তিনি ঢাকা মাদ্রাসায় (বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ) ভর্তি হন। তবে প্রবেশিকা পরীক্ষা না দিয়ে তিনি পোস্টমাস্টারের চাকরি নিয়ে তার স্থানীয় গ্রামে ফিরে আসেন।
যেখানে তিনি অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত কাজ করেছেন। ১৯৩২ সালে তিনি কলকাতায় অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলন-এর প্রধান অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
বাংলা মহাকাব্যের অস্তোন্মুখ এবং গীতিকবিতার স্বর্ণযুগে মহাকবি কায়কোবাদ মুসলিমদের গৌরবময় ইতিহাস থেকে কাহিনি নিয়ে ‘মহাশ্মশান’ মহাকাব্য রচনা করে যে দুঃসাহসিকতা দেখিয়েছেন তা তাকে বাংলা সাহিত্যের গৌরবময় আসনে স্থান করে দিয়েছে।
এছাড়া তার অন্যান্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো-বিরহ বিলাপ, কুসুম কানন, অশ্রুমালা, মহাশ্মশান, শিব-মন্দির বা জীবন্ত সমাধি, অমিয় ধারা, শ্মশানভষ্ম, মহররম শরীফ, শ্মশান ভসন, প্রেমের বাণী, প্রেম পারিজাত ইত্যাদি।
বাংলা কাব্য সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯২৫ সালে নিখিল ভারত সাহিত্য সংঘ তাকে ‘কাব্যভূষণ’, ‘বিদ্যাভূষণ’ ও ‘সাহিত্যরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৫১ সালের ২১ জুলাই কবি কায়কোবাদ ঢাকায় সব লেনা-দেনা মিটিয়ে পরপারে পাড়ি জমান।
এবি/ওজি