নিয়ন্ত্রণে নেই অভ্যন্তরীণ বাজারের মূল্যস্ফীতি

প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৩, ০৯:৫৭ | অনলাইন সংস্করণ

  রতন বালো

সংগৃহীত

 

নিত্যপণ্যের বাজার কিভাবে সমন্বয় করবেন সেটিই অর্থমন্ত্রীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, সার ও বিদ্যুৎ খাতে সরকারের যে ঘাটতি হবে তা মূল্য বাড়িয়ে ভোক্তা পর্যায়ে শতভাগ চাপিয়ে দেবো না। ---আ হ ম মুস্তফা কামাল -অর্থমন্ত্রী


শামছুল আলম। বয়স ৭৫ ছুঁই ছুঁই। মানুষের গড় আয়ু অতিক্রম করেছেন। সাধারণ মানুষের মতো চলাচল করতে পারছেন। কথাবার্তায়ও তারুণ্যভাব রয়েছে। রাজধানীর রামপুরায় তার বাসা। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় মাস্টার্স করেছেন। কর্মজীবনের শুরুতে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন। কিন্তু কিছুই করতে পারেন নাই।

পরে কবি, সাহিত্যিক ও প্রবন্ধকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করছেন। ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের অভ্যন্তরীণ বাজারের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা যেমন আছে, তেমনিই চলবে। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য উচ্চবিত্তরা কিছুই ভাবছে না। নিত্যপণ্যের মূল্য বাজেট পেশ এর আগে থেকেই বৃদ্ধি ছিল এবং আছে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর পুরানা পল্টনের জামান টাওয়ারের নিচ তলার একটি চা’র দোকানে বসে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আশরাফুল মাখলুকাত’ ( মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব)।

এটা ধর্মের কথা, বাস্তবে নাই। তিনি আমার বার্তার এই প্রতিনিধিকে প্রশ্ন করেন, বলেনতো আপনাদের নিয়ে কেউ কি ভাবছেন? সকালে কি খেয়েছেন এবং দুপুরে ও রাতে কি খাবেন বলতে পারবেন কি?  মনে রাখবেন আপনাদের নিয়ে কেউ ভাবছেন না।

শুধু আপনারা না সারাদেশের হাজার হাজার নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের নিয়ে কেউ ভাবেন না। অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ বাজারের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন তিনি।

তিনি আরও জানান, করোনা মহামারিতে গত দুই বছরে অনেক মানুষ বেকার হয়েছিল। এখন ধীরে ধীরে অর্থনীতির চাকা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলে অনেকে কাজে ফিরেছেন। আবার অনেকে ফিরতে পারেননি। সেই সময় অনেকের বেতন কমেছিল। অনেকে সেই বেতনে ফিরে যেতে পারেননি। এতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের আয় রোজগার কমে গেছে। অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আমদানি পণ্যের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের সব নিত্যপণ্যের বাজারে।

একদিকে মানুষের আয় কমেছে, অন্যদিকে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এই আয়-ব্যয়ের সমীকরণ মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। তারা তাকিয়ে আছে আজকের বাজেটে তাদের জন্য কী থাকছে সেদিকে। তাই বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির পাগলা ঘোড়ার সঙ্গে দেশের নিত্যপণ্যের বাজার কিভাবে সমন্বয় করবেন, সেটিই অর্থমন্ত্রীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীনদের টানা ১৫তম এবং দেশের ৫২তম বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।  গত ১ জুন সংসদে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন তিনি। এবার তার বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম ছিল ‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে। গেল অর্থবছরের চেয়ে ৮ লাখ ৩৭ হাজার ২১ কোটি বেশি।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গেল অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবির বাজেটে ব্যয়ের খাতগুলোর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা।

মূল্যস্ফীতি ও জিডিপি
নতুন অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার যেভাবেই হোক আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির লাগাম ৬ শতাংশের মধ্যে টেনে রাখতে চায়। নতুন অর্থবছরের জিডিপি হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭.৫ শতাংশ। মোট জিডিপির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা।

বৈদেশিক ঋণ
চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা বেশি বৈদেশিক ঋণ আগামী অর্থবছরে নেয়া হবে। ঋণগ্রস্ত বেশি হওয়ায় অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য বেশি টাকা গুনতে হবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে। আগামী অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ নেয়া হবে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ৮৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। এছাড়া অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেয়া হবে ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেছেন, গত পাঁচ বছরের বাজেটে আমাদের পজিশন কী ছিল, আমরা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছি, তা অ্যানেক্স (সংযুক্তি) হিসেবে দিয়েছি। আমরা ফেল করি নাই। ইনশাআল্লাহ, এবারো ফেল করব না, আগামীতেও আমরা ফেল করব না। এটা আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। অতীতের বাজেটের ধারাবাহিকতায় সফলতা অর্জনে এবারো আমরা আশাবাদী। 

রীতি অনুযায়ী গত ২ জুন ছয়জন মন্ত্রী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন করেছি।  নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সেখানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর আমি দিয়েছি। ।

মানুষের কর্মদক্ষতা ও দায়বদ্ধতার ওপর ভর করেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, সবকিছুর মূলে হচ্ছে এ দেশের মানুষ, জনগোষ্ঠী। তাদের কর্মদক্ষতা, দেশের প্রতি তাদের মায়ামমতা, মানুষের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা।

এটা অসাধারণ এক উদাহরণ আমি মনে করি। সেজন্য আমার বড় বিশ্বাস, আপনার মতো করে আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের পরাজয় নেই। ইনশাআল্লাহ, আমরা বিজয়ী হবই হব।

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, সরকার যখন প্রথম দায়িত্ব গ্রহণ করে তখন এনবিআর রাজস্ব ছিল ৫৯ হাজার কোটি টাকা।

এখন সেটা ২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকায় উত্তীর্ণ হয়েছে। যদি ৫৯ হাজার কোটি টাকা থেকে এখন যদি তিন লাখ কোটি টাকাতে যায়, যেটুকু বাড়তি বলছেন, এটা আমরা অর্জন করতে পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের পজিশন যেগুলো আছে, আমরা ফুলফিল করতে পারব।

অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশে বর্তমানে বিরাজমান চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান বাড়ানোসহ সামষ্টিক অর্থনীতির অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে চাই।

দেশের স্বল্প-আয়ের জনগোষ্ঠী যাতে কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারে সে জন্য সরকার ন্যায্যমূল্যে খোলাবাজারে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে সেগুলো বিক্রি করছে। শহর অঞ্চলে ওএমএস-এর আওতায় চাল ও গম বিক্রয় অব্যাহত রয়েছে।

রমজানে ১ কোটি পরিবারকে কার্ডের মাধ্যমে ৬টি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য স্বল্পমূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একটা উল্লেখযোগ্য অংশকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় আনা হয়েছে যাদের কাছে ডিজিটাল ব্যবস্থায় নগদ অর্থ দেয়ার সক্ষমতা সরকারের রয়েছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মজুতকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে।

পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে আগামী অর্থবছরে জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, সার ও বিদ্যুৎ খাতে সরকারের যে ঘাটতি হবে তা আমরা মূল্য বাড়িয়ে ভোক্তা পর্যায়ে শতভাগ চাপিয়ে দেবো না।

এবি/ওজি