রাজনীতির মাঠে কূটনৈতিক চাল

প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৩, ১১:৪৯ | অনলাইন সংস্করণ

  বশির হোসেন খান

  প্রিন্ট ভার্সন

বিএনপি ক্ষমতা জন্য আন্তর্জাতিক মহলে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত

-ওবায়দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

দুর্বলতার কারণেই কূটনীতিকদের কাছে ধরনা দিচ্ছে রাজনীতিকরা

-অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাবি

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৬ মাস বাকি। ইতোমধ্যে পশ্চিমা কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা সক্রিয় হয়েছেন। রাজনীতির মাঠে নিজেকে রাখতে নতুন কৌশলে ঠাণ্ডা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের রাজনীতিকরা।

একে অপরকে ঘায়েল করতে নতুন কৌশল হিসেবে আড্ডা ও বৈঠক জমাচ্ছেন কূটনৈতিক পাড়ায়। এসবের আড়ালে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়েও আলোচনা চলছে নিয়মিত। প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের দেখা যাচ্ছে এসব আড্ডা ও বৈঠকে। তবে পিছিয়ে নেই ছোট দলের নেতারাও।

বিশ্বের বড় বড় দেশগুলোকে কে কতো তাদের কাছে টানতে পারেন সে প্রতিযোগিতায় নেমেছে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল। এ সুযোগে কূটনীতিকরাও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছেন। আদায় করে নিচ্ছেন যার যার স্বার্থ।

কূটনীতিকদের দেয়া বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী দিনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া ও কৌশল নিয়ে বিস্তার আলোচনা। তবে সমসাময়িক কিছু ঘটনা ছাড়াও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়েও আলোচনার ঝড় ওঠে বলে উল্লেখ করেছে সূত্র।

সূত্রমতে, বাংলাদেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে শাপে-নেউলে সম্পর্কের সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন কূটনীতিকরা। এ কারণেই তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের কূটনীতিকদের আগ্রহ বেড়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূ-রাজনৈতিক কারণেই প্রতিবেশী দেশ ভারত, এশিয়ার উদীয়মান বিশ্বশক্তি চীন, এমনকি বিশ্বমোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ঢাকার কূটনৈতিকপাড়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে চলছে দেনদরবার ও নানা আলোচনা। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সরকারকে চাপে রাখতে কূটনীতিকদের ব্যবহার করছে।

প্রকাশ্যে ও গোপন বৈঠকে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য কূটনীতিকরাও চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন বৈঠকে খোলামেলা আলোচনায় রাজনীতিকদের মনোভাব জানার চেষ্টা করছেন। দুই দলের নেতাদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আস্থা বাড়াতে বৈঠকেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

প্রায়ই পশ্চিমা বিশ্বের কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয় ছাড়াও নিজেদের বাসভবনে বা দূতাবাসে বৈঠকের পর বৈঠক করছেন।

এসব দেশের বিশেষ করে মার্কিন সরকারের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। ইইউ ইতোমধ্যে জানিয়েছে, তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর ব্যাপারে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এজন্য ইউরোপীয় জোটটি বাজেটও বরাদ্দ দিয়েছে।

গত রোববার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইইউভুক্ত সঙ্গে দেশের কূটনীতিকরা। বৈঠক শেষে বিএনপি জানায়, এই সরকারের অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না বলে বিদেশি কূটনীতিকদের জানিয়েছেন।

অন্যদিকে ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, আগামী নির্বাচনে ইইউ পর্যবেক্ষক মিশন পাঠাতে প্রস্তুত রয়েছে। তবে সেজন্য বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হতে হবে।

মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার গুলশানে রাষ্ট্রদূতের বাসায় বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই দিনে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। সালমান এফ রহমানের সরকারি অফিসে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে গত রোববার পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। ওই বৈঠকে পিটার হাস আগামী নির্বাচন নিয়ে জাপার পরিকল্পনা জানতে চান বলে জানা গেছে।

১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর গুলশানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত এবং ইইউভুক্ত সাতটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের একটি বৈঠক হয়। এতে জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, সুইডেনের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দেন সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ক্ষমতা দখলের জন্য বিএনপি নেতারা বিদেশি দূতাবাসগুলোতে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন।

বিদেশি প্রভুদের স্বার্থরক্ষার মুচলেকা দিয়ে যারা ক্ষমতায় আসে তারা কখনোই জনগণের কল্যাণ করতে পারে না।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ সব দলের অংশগ্রহণ চায়। তারা বিভিন্ন বৈঠক ও আলোচনায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বার্তাও অব্যাহত রেখেছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আমাদের দুর্বলতার কারণেই কূটনীতিকদের কাছে ধরনা দিতে হচ্ছে রাজনীতিকদের। কারণ দেশ ও জনগণের চেয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার রোগ আমাদের মাথায় বেশি চেপে বসেছে।

এবি/ওজি