জোটবদ্ধ ১৪ দল

প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৩, ০৯:৪১ | অনলাইন সংস্করণ

  রতন বালো

  প্রিন্ট ভার্সন

  • জোট শরিকদের কদর বেড়েছে আওয়ামী লীগে
  • বিএনপিকে নিয়েই নির্বাচন করতে আগ্রহী
  • গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচনী সমস্যা সমাধানে সরকার আলোচনায় রাজি হয়েছে।-- আমির হোসেন আমু -১৪ দলের সমন্বয়ক 

জোটবদ্ধ আছে ১৪ দল । জোটবদ্ধভাবেই আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ।

এ বিষয়ে জোটের তারা বলছেন, বিএনপি ও আন্তর্জাতিক মহলের পরোক্ষ-প্রত্যক্ষ চাপ অনুভূত হচ্ছে আওয়ামী লীগের দুর্গে। ফলে জোট শরিকদের কদর বেড়েছে আওয়ামী লীগে।

এ লক্ষ্যে গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেছে ১৪ দলীয় জোট। এছাড়া পরবর্তীতে ঢাকার বাইরেও কর্মসূচী দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সমাবেশ থেকে জানা গেছে। 

সমাবেশে নির্বাচনী সমস্যা সমাধানে বিএনপির সঙ্গে সরকার আলোচনা করতে রাজি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে দেশে প্রতিনিধি পাঠানোরও আহ্বান জানান তিনি।

আমু বলেন,  দেশে গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচনী সমস্যা সমাধানে সরকার আলোচনায় রাজি হয়েছে। সংবিধানের মধ্যে থেকে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে আলোচনার দরজা সবসময় খোলা।

বিএনপির সাথে যে কোনো আলোচনা হতে পারে। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে আলোচনার দ্বার সবসময় খোলা আছে। প্রয়োজনে জাতিসংঘের প্রতিনিধির মধ্যস্থতায় বিএনপির সাথে আলোচনা হতে পারে।

একই কর্মসূচিতে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আমেরিকার ভিসানীতি দুরভিসন্ধিমূলক। এর মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে বিএনপি বা সুশীল সমাজের কাছে ক্ষমতা তুলে দেয়া যায়। মার্কিন ভিসানীতির কারণে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তবে বিএনপিকে বলবো-সাহস থাকলে সেই নির্বাচনে আপনারা আসেন।

এদিকে জোট শরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে আওয়ামী লীগ। শরিকদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নানা কৌশলে উপস্থিত থাকছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে ঘন ঘন আলোচনায় বসছেন তারা।

তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব রয়ে গেছে শরিকদের। মনে ক্ষোভ থাকলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে চলেছেন জোটের শরিক দলের নেতারা।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (এরশাদ), ন্যাপ, জাতীয় পার্টি (জেপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী), বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, গণতন্ত্রী পার্টি, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাসদ, গণআজাদী লীগ, বাংলাদেশ জাসদ (আম্বিয়া) ও কমিউনিস্ট কেন্দ্র বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক।

বিশেষ করে এ বিষয়ে গত ৫ জুন রাজধানীর ইস্কাটনে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠক হয়। বৈঠকে ১৪ দলীয় জোটের নেতারা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর বিশদ আলোচনা করেন। এ আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

এর মধ্যে নির্বাচনে বিএনপি না এলে পরিস্থিতি কোন দিকে যেতে পারে অথবা নির্বাচনে অংশ নিলে কী হতে পারে তা নিয়েও বিশ্লেষণ করা হয়। এ বৈঠকে জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু সভাপতিত্ব করেন। 

 বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শরিক দলের প্রভাবশালী এক নেতা কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়কের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বিএনপিকে যেকোনো উপায়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে। কারণ বিএনপি নির্বাচনে না এলে নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত হবে। এর দায় শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলের ওপরই বর্তাবে। তাই প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে সংলাপ করা যেতে পারে।

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের দেয়া বিবৃতিতে যে ভিসানীতির কথা বলা হয়েছে, তাতে কিন্তু পরিস্থিতি কিছুটা ঘোলাটে হয়েছে। ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্ব বহন করে।

কারণ বিএনপিকে নির্বাচনে আনা কিন্তু একটি চ্যালেঞ্জ। তাদের অংশগ্রহণ না হলে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হয়েছে সেটি দাবি করা যাবে না। আলোচনায় ১৪ দলীয় জোটের পাওয়া, না পাওয়ারও প্রশ্ন তোলেন নেতারা। 

এ বিষয়ে ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেন, আমি আপনাদের এসব বিষয় নিয়ে জোটনেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করব। তবে খুব শিগগির আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৪ দলের বৈঠক হবে।

এ বৈঠকে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কথা হবে। কিন্তু দিন-ক্ষণ ঠিক হয়নি। তবে আপনাদের দলগুলোকে আরও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করুন। তা হলে নেত্রীর কাছেও আমি বড় মুখ করে কথা বলতে পারি। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ১৪ দলে নতুন কোনো দল এলেও নাম এটাই থাকবে।

১৪ দলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তারাও কর্মসূচি পালন করবে। ইতিমধ্যে কয়েকটি সমমনা দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। যদিও আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে এখনও পৌঁছায়নি।

সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের জন্য ১৪ দলীয় জোট কোনো আলোচনার উদ্যোগ নেবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আমির হোসেন আমু বলেন, দেশের জনগণ সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কোনো দলই জনগণের বাইরে না। জনগণের ওপর আস্থা থাকে, সংবিধানভিত্তিক নির্বাচনে আস্থা থাকে, এমন সবারই অংশগ্রহণ করা উচিত।

সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সব দলকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানাই। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্য বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ১৪ দল। জোটের পক্ষ থেকে দ্রুত বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

বাজেট নিয়ে সংসদে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে জানিয়ে আমু বলেন, আমরা যেহেতু পড়াশোনার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি, প্রধানমন্ত্রী নবম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা পয়সায় বই বিতরণ করছেন, সবকিছু ঠিক আছে। সে ক্ষেত্রে কলম ও কাগজের দাম বৃদ্ধি পড়াশোনার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে।

সংবাদপত্র প্রকাশে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। তাই আমরা মনে করি, কাগজ-কলমের দাম কমানো উচিত। আরোপিত কর প্রত্যাহার করা উচিত।

বিদ্যুৎ পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক পর্যায়ে আনার জন্য ১৪ দলীয় জোট সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে উল্লেখ করে আমু বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সব রকম চেষ্টা করছেন। আসলে দেখতে হবে সরকার সচেতন কি না, প্রচেষ্টা আছে কি না। কিন্তু পরিস্থিতি হাতের বাইরে থাকলে কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই।

নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারে ১৪ দলের শরিক দলের অনেক পাওয়া, না পাওয়া নিয়েও আলোচনা হয়েছে। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আসন নিয়ে কথা উঠলে ১৪ দলের সমন্বয়ক বলেছেন, আসন নিয়ে জোটনেত্রীর সঙ্গে আলাপ করবেন। 

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, ১৪ দলের বৈঠকে আলোচনার মূল ছিল আগামী জাতীয় নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়।

তবে আসন বণ্টন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। মূলত আলোচনা হয়েছে, সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা। একই সঙ্গে শরিক দলগুলোর সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের অন্যতম শরিক দল বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

সবাই বলেছেন, সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা। ভিসানীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই ভিসানীতি একটি দলের পক্ষে গেছে বলে মনে করে ১৪ দল। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

এবি/ওজি