যুক্ত হচ্ছে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৩, ১৫:৫৯ | অনলাইন সংস্করণ

  রতন বালো

  প্রিন্ট ভার্সন

 

  •  পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ নৌ রুটে সমীক্ষার কাজ শেষ 
  • নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছে পশ্চিমাঞ্চলের ৪ কোটি মানুষ
  • প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইআরডি’র মাধ্যমে বৈদেশিক ঋণ চাচ্ছি -- কাজী মো. ফেরদাউস -সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী

নতুন করে আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে দেশের দ্বিতীয় পদ্মা সেতু। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে রাজবাড়ির গোয়ালন্দে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ হয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অননুমোদিত প্রকল্পের তালিকায় রাখা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সাড়ে ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের সেতু নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। অর্থ পাওয়া সাপেক্ষে প্রকল্পটি অনুমোদন প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে সেতু কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন।

ঢাকা এবং দেশের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর দূরত্ব কমাতে পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ রুটে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই সেতু নির্মাণ হলে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও নড়াইলের একাংশ, গোপালগঞ্জ, যশোর এবং মাদারীপুর জেলার সঙ্গে সড়কপথে রাজধানীর দূরত্ব কমে আসবে। সবমিলিয়ে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছে পশ্চিমাঞ্চলের ৪ কোটি মানুষ। এছাড়া দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে পশ্চিমাঞ্চলের  ১১ টি জেলার বাসিন্দাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন হবে বলে সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। 

প্রস্তাবিত দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ৫ কিলোমিটার, প্রস্থ ১৮ দশমিক ১ মিটার। দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক হবে সাড়ে ১৫ কিলোমিটার। নদীশাসনের কাজ হবে দুই প্রান্তে ১৮ দশমিক ৪ কিলোমিটার। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সম্ভাব্য উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ধরা হয়েছে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ও জাপান ব্যাংক অব ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জেবিআইসি)।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদাউস জানান, আমরা দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে বৈদেশিক ঋণ চাচ্ছি। এটা ফাইনাল হলেই পরবর্তী পদক্ষেপ।

২০১৩ সালে কাজ শুরু হওয়া কথা ছিল। ১০ বছর ৫ মাস পর বর্তমানে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর  গোয়ালন্দ নৌ রুটে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর কাজের সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।  তিনি জানান, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের স্বপ্নে পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান।  তেমনি নতুন দিনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে পশ্চিমাঞ্চলের ৪ কোটি মানুষ। 

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্ত দিয়ে। এই সেতু নির্মাণ নিয়ে যখন প্রথম আলোচনা, সে সময় এই পথে নাকি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে হবে, তা নিয়ে শুরুতে ছিল আলোচনা। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর মাওয়া হয়ে বানানোর সিদ্ধান্ত হয়। এই সেতুর নির্মাণকাজ এগিয়ে যাওয়ার সময়ই সরকার দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা বলে।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ক্ষণ গণনা চলার সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ হয়েছে। রাজবাড়ীর  গোয়ালন্দ ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া রুটে এ সমীক্ষা করা হয়েছে।

সেতু কর্তৃপক্ষ বলেছেন,  দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হলে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের দূরত্ব কমে যাবে। বাস্তবায়নাধীন মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টের পদ্মা সেতু দিয়ে তাদের চলাচল করতে হবে না। ফলে সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে এবং এ এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বহুগুণ বেড়ে যাবে।

রাজবাড়ির গোয়ালন্দ বাসিন্দা মো. আনোয়ার  হোসেন বলেন,  আমাদের দাবি ছিল পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু হোক। সেতু হলে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ১১ জেলাবাসীদের উপকার হবে। আমরা দ্রুত সময়ে রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতাম। তিনি বলেন, সরকারই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া দ্বিতীয় পদ্মা নির্মাণ করার জন্য প্রকল্প নিয়েছিল । তিনি দ্রুত কাজ শুরু করার আহবান জানান।

তিনি আরো জানান, সেতু বিভাগ বলেছিল ২০১৩ সালের শুরুতে দ্বিতীয় পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে ঝরে গেছে ১০ বছর পাঁচ মাসের অধিক সময়। তারপরেও আলোর মুখ দেখেনি সরকারের প্রতিশ্রুতি দ্বিতীয় পদ্মাসেতু প্রকল্প। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ার কারনে জনগণের ভিতরে হতাশা দেখা দিয়েছে। তারা ভাবছেন  আদৌ কি এ প্রকল্প হবে না পিছিয়ে গেল?  তবে নতুন করে সমীক্ষার কাজ শেষ হওয়ার খবরে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে পশ্চিমাঞ্চলের ৪ কোটি মানুষ।
 
২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত  মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দেয়। ২০১৩ সালের শুরুতে এ প্রকল্পের কাজ শরু হবার কথা ছিল। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে দ্বিতীয় পদ্মা বহুমুখী সেতুর অর্থায়ন এবং নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হয় গত ২০১১ সালের  ৪ নভেম্বর  (শুক্রবার)। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের অধীনে এ দরপত্র আহবান করা হয়।
 
দরপত্র বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বাংলাদেশ ব্রিজ অথরিটির ওয়েবসাইট িি.িননধ.মড়া.নফ ভিজিট করতে বলা হয় এবং আবেদনের মূল কপির সঙ্গে দুইটি ফটোকপি বাংলাদেশ ব্রিজ অথরিটি (বিবিএ)-র নির্বাহী পরিচালকের ঠিকানায় ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি দুপুর  ১২টার মধ্যে জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু ১০ বছর ৫ মাসের অধিক সময়ের পর সাড়া পাওয়া গেল। 

এছাড়া গত ও বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারেও পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানে ২য় পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণের জন্য জাপান-ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি ( জাইকা)’র প্রথম সমীক্ষা করে প্রাথমিক পর্যায়ে পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য সুবিধাজনক স্থান হিসেবে চিহ্নিত করে।

এবি/ওজি