বৃদ্ধা মনিমালা ভ্যান টেনেও সচল রাখতে পারছেন না সংসার

প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৩, ১৯:৩৪ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন ডেস্ক

ষাটোর্ধ্ব মনিমালা মালামাল বোঝাই ভ্যান গাড়ি নিয়ে ছুটে চলেছেন গ্রাম থেকে গ্রামে

বৃদ্ধা মনিমালা বয়স ষাট বছরের উপরে।  এই বয়সে নাতি নাতনি নিয়ে গৃহকোনে খুনসুটিতে জীবন কাটানেরা কথা । অথচ নির্মম বাস্তবতার শিকার ষাটোর্ধ্ব মনিমালা  মালামাল বোঝাই ভ্যান গাড়ি নিয়ে ছুটে চলেছেন গ্রাম থেকে গ্রামে। ।  মাটির জিনিসপত্র তৈরি থেকে বিক্রি সবই করেন তিনি। অদম্য ইচ্ছার জোরে ভ্যান চালিয়ে সংসারের চাকা সচল রাখার চেষ্টা করছেন তিনি।

তবুও অনাহারে অর্ধহারে  থাকতে হয় তার পরিবারকে। কারণ সব সময় ভালো বিক্রি হয় না। আর কোন দিন যদি কোন কারণে ভ্যানের চাকা না ঘুরাতে পারেন, সেদিন সংসারের চাকাও থমকে যায় তার। 

এটি কোন গল্প নয়, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের মৃত আশুতোষ কুমার পালের স্ত্রী মনিমালার সংগ্রামী জীবনের কথা।

জীবনের শেষপ্রান্তে এসেও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন বৃদ্ধা মনিমালা । পুরুষের মত ভ্যান চালাতে না পারলেও ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা মনিমালা মাল বোঝাই ভ্যানটি ২ হাতের সাহায্যে টেনে নিয়ে ছুটে চলেছেন গ্রাম থেকে গ্রামে এক হাট থেকে অন্য হাটে।

অদম্য ইচ্ছার জোরে ভ্যান চালিয়ে সংসারের চাকা সচল রাখার চেষ্টা করছেন তিনি। প্রায় ২৫ বছর ধরে ভ্যানে মাল বয়ে গ্রামগঞ্জে হাট বাজারে মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে বেড়াচ্ছেন তিনি। মাটির তৈরি ব্যাংক, হাড়ি, বাচ্চাদের খেলনার মতো ছোট ছোট জিনিসপত্র বাড়িতে বসে তিনি নিজেই তৈরি করেন। 

এছাড়াও ভাড়,মালসা,চাড়ির মতো মাটির তৈরি বড় জিনিসপত্রগুলো কিনে এনে বিক্রি করেন। হাটে কিংবা গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মতো মাল  বিক্রি করে থাকেন তিনি ।এতে করে তার লাভ হয় মাত্র ২০০ টাকা।দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে এতো অল্প  টাকা রোজগার করে সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন বৃদ্ধা  মনিমালা। দিনে দিনে শরীরের শক্তিও কমে আসছে। যার কারণে কপালে তার চিন্তার ভাঁজ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। অপর্যাপ্ত ও অনিয়মিত রোজগারের কারণে  পরিবারের সদস্যদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন মনিমালা।

২৫ বছর হলো স্বামীহারা হয়েছেন তিনি। তারপর থেকেই সংসারের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছেন।  এরইমধ্যে মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন শিবনগর এলাকায়। ছেলেকেও করিয়েছেন বিয়ে। নলডাঙ্গা বাজারের একটি ভাঙ্গাড়ী দোকানে কাজ করে ছেলে একা সংসার চালাতে পারে না। যে কারণে মনিমালা ভ্যানে করে বিভিন্ন হাটে ও গ্রামে, বাজারে মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে থাকেন।

নলডাঙ্গা দুর্গাপুরে ছেলে-বৌমার সাথে পরের জমিতে ঘর করে থাকলেও মনিমালা কালীগঞ্জ পৌরসভার শিবনগর এলাকার ভোটার। 

কবে কোথায় কিভাবে বিক্র করেন, কখন কোথায় গেলে আপনাকে পাওয়া যাবে জানতে চাইলে, ষাটোর্ধ্ব এই বৃদ্ধা বলেন, কালিগঞ্জ শহরে শুক্র ও শনিবার, হাটের দিন হাসপাতাল সড়কে  মুসলিম বেকারীর সামনের ফুটপাতে রাস্তায় এবং শনি ও মঙ্গলবার নলডাঙ্গা বাজারে তিনি মাটির তৈরি নানা রকম জিনিসপত্রের পরসা সাজিয়ে বসেন।

 আবার ভাটপাড়া, আনন্দবাগ,পাইকপাড়া, জগন্নাথপুরসহ অনেক গ্রামে ভ্যানে করে ঘুরে ঘুরে মাটির জিনিসপত্রও তিনি বিক্রি করে থাকেন। বৈরী আবহাওয়া কিংবা শরীরের ক্লান্তি সবকিছুকে উপেক্ষা করে দিনের-পর-দিন মনিমালা নিজেই মাটির তৈরি জিনিসপত্র বোঝাই ভ্যান টেনে বিক্রি করেন।

শ্রমজীবী মনিমালার আক্ষেপ, হাট বাজারে তার একটি স্থায়ী দোকান নেই। তার নিজের বলে কিছুই নেই । মাথাগোঁজার ঠাঁইও নেই । শুধুমাত্র বিধবা ভাতা ছাড়া আর কোনো সরকারি সাহায্য সহযোগিতা আমি পাই না তিনি। হাট বাজারে একটা স্থায়ী দোকান থাকলে ভ্যান ঠেলে মাল বিক্রি করা লাগত না। অন্য দিকে দোকান কারার সামর্থ্যও তার নেই। 

মনিমালার তাই শেষ কথা, সৃষ্টিকর্তা এভাবে যে কয়দিন চালাই সে কয়দিনই চলবো।

 

এবি/টিএ