শক্তিশালী সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে ডিজিএম হেলাল উদ্দিন
সরকারি প্রতিষ্ঠান যমুনা অয়েলে তেল চুরি পর্ব -২
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১৯:৪৬ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলেই যমুনা অয়েলে একটি শক্তিশালী তেল চুরির সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।বর্তমানেও সেই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বেই চলছে যমুনা অয়েলে যতসব অপকর্ম। যার নেতৃত্বে আছে ডিজিএম হেলাল উদ্দিন। সিন্ডিকেট সদস্যদের তালিকায় রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার (মানব সম্পদ) মো: মাসুদুল ইসলাম, এজিএম অপারেশন (ডিপো) শেখ জাহিদ আহমেদ, যমুনা অয়েল লেবার ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও নিষিদ্ব সংগঠন জাতীয় শ্রমিকলীগ নেতা মুহাম্মদ এয়াকুব এবং লেবার ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি জয়নাল আবেদীন টুটুল ওরফে তেল টুটুল। আগের মতো বর্তমান সময়েও সিন্ডিকেট প্রধান হেলাল উদ্দিনের ইশারায় চলছে যমুনা অয়েলের সব কটি তেল চুরি সিন্ডিকেটের কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠানের পনরটি ডিপোর সব কটিতে রয়েছে হেলাল উদ্দিনের পৃথক পৃথক সিন্ডিকেট।
সম্প্রতি যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড ফতুল্লা ডিপোতে পৌনে চার লাখ লিটার ডিজেল গায়েব হয়েছে। গঠন করা হয় চারদফা তদন্ত কমিটি । ইতিমধ্যে তিনটি তদন্ত কমিটির সময় সীমা পার হয়ে গেছে , তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমিটি গুলো তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনটি কমিটির মধ্যে একটি বিপিসি অপর দুটো যমুনা অয়েলের। অবশ্য এদুটো প্রতিষ্ঠান মিলে মিশেই তেল চুরির সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করছে, এরকম অভিযোগ অনেক আগে থেকেই। এদিকে জালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগের তদন্ত কমিটির মেয়াদও অনেকটা শেষ পর্যায়ের দিকে , তবে ২৫ অক্টোবর থেকে তাদের তদন্তের কার্যক্রম শুরু করেছে। । সব কটি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিজেদের পক্ষে নেয়ার জন্য মাঠে নেমেছে যমুনা অয়েলের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অভিযোগ উঠেছে এর নেতৃত্বে আছে যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ডিজিএম অপারেশন হেলাল উদ্দিন ।
জানা গেছে ফতুল্লা ডিপোর ঘটনা ধামাচাপা দিতে নুন্যতম ৫০ কোটি টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে সিন্ডিকেট প্রধান হেলাল উদ্দিন। ফতুল্লা ডিপোতে জালিয়াতির ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে তার সিন্ডিকেটের অত্যান্ত বিশ্বস্ত দুই সদস্য এজিএম অপারেশন ( ডিপো) শেখ জাহিদ আহমেদ ও গ্রেজার পদে কর্মরত জয়নাল আবেদীন টুটুলসহ ফতুল্লায় কর্মরত অনেকের বিরুদ্ধেই । শেখ জাহিদ আহমেদ হলেন সকল ডিপোগুলোর ইনচার্জ। তদন্তের সাথে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা কিন্তু উল্টো তাকে দেয়া হয় পদোন্নতি । ৯ অক্টোবর এজিএম অপারেশন ( ডিপো) এর পাশাপাশি শেখ জাহিদ আহমেদকে এজিএম ( এস এন্ড ডি) পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয় । এর সব কিছুর মুলে আছে ডিজিএম অপারেশন । শুধু যমুনা অয়েলে নয়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনেও আছে হেলাল উদ্দিনের বিশাল ক্ষমতা। চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সিনিয়র অধিকাংশ কর্মকর্তাদের সাথে হেলাল উদ্দিনের রয়েছে লেনদেনের সম্পর্ক। এসকল কারণে সব অপকর্ম করেও পার পেয়ে যায় এই হেলাল উদ্দিন।
একাধিক সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে ফতুল্লা ডিপোর ঘটনায় সঠিক তদন্তের স্বার্থে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ( বিপসি) জনৈক উচ্চপদস্থ কমকর্তা যমুনা অয়েলের এজিএম অপারেশন ( ডিপো) শেখ জাহিদ আহমেদ, ডিপো ইনচার্জ আসলাম খান আবু উলায়ী, ক্ল্যালিব্রেটর কর্মকর্তা নুরুল হক ও গ্রেজার পদে কর্মরত সিবিএ নেতা জয়নাল আবেদীন টুটুলকে মৌখিক ভাবে সাময়িক বরখাস্তের প্রস্তাব দিয়েছিল । কিন্তু এতে সায় দেয়নি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুুস্তফা কুদরুত ই ইলাহি এবং ডিজিএম অপারেশন হেলাল উদ্দিন । বিশেষ করে জয়নাল আবেদীন টুটুলকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে বেশী জোড় দেয় বিপিসি। কিন্তু ডিজিএম অপারেশনের কঠিন বিরোধিতায় এই সিদ্বান্ত থেকে পিছু হটে বিপিসি। অবশ্য এবিষয়ে বিপিসির সাথে যমুনা অয়েলের একটা বড় ধরনের লেনদেনের খবরও চাউর হয়েছে৷ এছাড়া চলতি বছরের ৮ অক্টোবর হেলাল উদ্দিন সিন্ডিকেটের অন্যতম দুই সদস্য মুহাম্মদ এয়াকুব ও জয়নাল আবেদীন টুটুলের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুনীতির বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিপিসি। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে এদের দুজনের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য নির্ধারিত সময়ও সীমাও বেধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু হেলালের উদ্দিনের সরাসরি হস্তক্ষেপে থেমে গেছে তদন্ত কমিটির কার্যক্রম।
ফার্নিস অয়েল চুরির শুরুতেই হেলান উদ্দিন
ফার্নিস অয়েল পাচারের হোতা হলো এই ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হেলান উদ্দিন। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন পরিশোধিত জ্বালানি তেল ফার্নিস অয়েল আমদানি শুরু করে ২০১৪ সালে। তৎকালীন সময়ে বিপিসি এর পক্ষে যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড ইমপোর্ট অপারেশন এর দায়িত্ব পালন করেছে প্রধান স্থাপনা চট্টগ্রামে ডিপোর ইনচার্জ মোঃ হেলাল উদ্দিন। পরিশোধিত জ্বালানি তেল HSFO জাহাজ থেকে খালাসের পর মোট গ্রহণের পরিমাণ লস গেইন হিসাব এ মোট ব্যরেল এর (-)০.২০% এর কম পর্যন্ত বিপিসি মেনে নেয়। কিন্তু ফার্নিশ অয়েল ( কালো তেল) গ্রহনের হিসাব মেট্রিক টনে ০.১০% পয়েন্ট এর কম দেখিয়ে এবং ব্যারেল এ (-)১.০০% এর কম দেখিয়ে ওই সময় বিপুল পরিমাণ কালো তেল চুরি করে বাইরে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। তৎকালীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের বাণিজ্য অপারেশন বিভাগের মহা ব্যবস্থাপক বর্তমান যমুনা ওয়েল কোম্পানির এমডি মুস্তফা কুদরুত -ই ইলাহীকে ম্যানেজ করে মোট গ্রহণের এই হিসাব চূড়ান্ত হিসেবে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তারপর থেকে কালো তেল এর মোট গ্রহনের পরিমাণ ১.০০% এর কম দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ লিটার তেল চুরি করে হাজার কোটি টাকার আমদানিকৃত কালো তেল সুকৌশলে চুরি করে বিক্রি করেছে।
আমদানিকৃত ফার্নিস অয়েল অপারেশন লস রেজাল্ট মেট্রিক টনে ০.১০% এর নিচে দেখানোর এই নিয়ম হেলাল উদ্দিন বিপিসির জোকসাহসে চালু করে, যা পরবর্তীতে পদ্মা ওয়েল কোম্পানি এবং মেঘনা উইথ কোম্পানিও অনুসরণ করেন। এই তিন কোম্পানির যোগসাজসে ফার্নিস অয়েল (কালো তেলের) একটা বিরাট অংশ তেল চোরাকারবারীদের হাতে চলে যাচ্ছে।
আমার বার্তা/এমই
