ছাগল চরিয়ে ওমরাহ পালন করলেন ৮২ বছরের বৃদ্ধ

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ১৪:৫৩ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন ডেস্ক

বয়সের ভারে ন্যুব্জ ৮২ বছর বয়সী বৃদ্ধ আবদুল কাদির বখশ। জীবনের পড়ন্ত বেলায়ও পিছু ছাড়েনি অভাব-অনটন। তাই পেটের তাগিদে ছাগল চরানোর কাজ করেন পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের এই বাসিন্দা। শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও পেশায় রাখাল এই বৃদ্ধের অন্তর ছিল আল্লাহর ভালোবাসায় পূর্ণ।

চরম অসহায়ত্ব ও দারিদ্র্যের মধ্যেও মনে স্বপ্ন ছিল পবিত্র ওমরাহ পালনের। আর তাই দীর্ঘ ১৫ বছর ছাগল চরিয়ে এবং সেখান থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ওমরাহ পালনের সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন তিনি।

ওমরাহ পালনের পর তার হৃদয় এখন সন্তুষ্ট ও পরিতৃপ্ত হয়েছে বলেও জানিয়েছে ৮২ বছর বয়সী আবদুল কাদির। গত মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ।

সংবাদমাধ্যম বলছে, গত রমজান মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে এক বৃদ্ধকে মদীনার পবিত্র মসজিদে নববীতে লাঠি হাতে একাকী ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। সাদা জোব্বা পরা এই বৃদ্ধের দৃষ্টিশক্তিও বেশ ক্ষীণ।

তার হাঁটার ধরন থেকে মনে হচ্ছিল তিনি কাউকে হারিয়েছেন বা কিছু খুঁজে ফিরছেন। ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েক মিলিয়ন ভিউ হয়। বয়সের ভারে ন্যুব্জ এই বৃদ্ধের সাদাসিধে চলাফেরা ও সরল ব্যবহার সবার নজর কাড়ে। এমনকি সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের উপদেষ্টা তুর্কি আল-শেখ এই বৃদ্ধের খোঁজ চেয়ে টুইটও করেন।

কিন্তু ৮২ বছর বয়সী আব্দুল কাদির বখশের কোনও ফোনই নেই। পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে গত শনিবার পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের হাবের গোথ হাজি রহিম গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছেন তিনি। পরদিন আরব নিউজের সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলার সময় নিজের ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির কথা প্রথম জানতে পারেন তিনি।

সংবাদমাধ্যম বলছে, চরম অসহায়ত্বের মধ্যেও আব্দুল কাদির বখশের মনে আকাঙ্ক্ষা ছিল পবিত্র কাবাঘর ও মহানবী (সাঃ)-এর রওজা শরিফ দেখার। আর তাই সেই স্বপ্ন পূরণে যতটুকু সম্ভব সঞ্চয়ও শুরু করেন তিনি। পরিমাণে সামান্য হলেও সঞ্চয়ের সেই ধারা অব্যাহত রাখেন তিনি।

অতঃপর ছাগল পালন ও চরিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছরের জমানো অর্থে আব্দুল কাদির পবিত্র ওমরাহ পালন করেন। ওমরাহ পালনের সময় মক্কায় তার সঙ্গে কোনও গাইডের ব্যবস্থা ছিল না। এমনকি বেলুচি ছাড়া অন্য কোনও ভাষাও জানেন না তিনি। কিন্তু মহান রব তার সব প্রার্থনা কবুল করেছেন বলে জানান এই বৃদ্ধ।

আরব নিউজ বলছে, ওমরাহ পালনের জন্য আব্দুল কাদির বখশ দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সঞ্চয় করেছিলেন এবং গত রোববার নিজের কুঁড়েঘরে আরব নিউজের সাথে সাক্ষাৎকারের সময় তিনি প্রথমবার তার ভাইরাল ভিডিওটি দেখেন।

৮২ বছর বয়সী আব্দুল কাদির বলেন: ‘(ওমরাহ পালনের পর) আমার মনে হচ্ছে আমার সমস্ত উদ্বেগ দূর হয়ে গেছে। আমার হৃদয় এখন সন্তুষ্ট। আমার ভরণ-পোষণেরও কোনও অভাব নেই, আমি সুখী। পবিত্র মক্কা এবং মদীনায় নবীর পবিত্র মাজার জিয়ারত করার যে ইচ্ছা আমার ছিল তা মঞ্জুর করা হয়েছে।’

আরব নিউজ বলছে, আরব সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা ভিডিওতে আব্দুল কাদির বখশের চেহারা দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। কেউ কেউ আবার এই বৃদ্ধের সরলতা এবং নম্রতাকে বিখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্বের সাথে তুলনাও করেছেন।

ওমরাহ শেষ করে গত শনিবার নিজ গ্রাম গোথ হাজি রহিম গ্রামে ফিরে যান বখশ। গাছের পাতা ও ঘাস দিয়ে তৈরি ঝুপড়িতে সেসময় তাকে অভিনন্দন জানান পরিচিতজনরা। কারণ আব্দুল কাদির যা করেছেন বেলুচিস্তানের অনেকের জন্য তা এখনও স্বপ্ন।

অবশ্য আব্দুল কাদির বখশ তার স্বপ্ন পূরণের জন্য বছরের পর বছর ধরে ছাগল পালন, চরানো ও বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, প্রথমবার মক্কা দেখে তার খুশির কোনও সীমা ছিল না।

কোনও গাইড ছাড়াই আব্দুল কাদির ইসলামের পবিত্র এই শহরে পৌঁছেছিলেন। এছাড়া তিনি শুধুমাত্র বেলুচি ভাষায় কথা বলতে পারেন। যার কারণে রাস্তার দিকনির্দেশ জানতে চাওয়াও তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এরপরও তার সকল চাওয়া পূর্ণ হয়েছে বলে জানান এই বৃদ্ধ।

মহানবী (সা.)-এর রওজা শরিফে দোয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি আমাকে পথ দেখিয়েছেন এবং আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন।’ আর সেখানেই কেউ একজন তার ভিডিও করে শেয়ার করার পর তা ভাইরাল হয়ে যায়।

পরে মদীনা থেকে মক্কায় গিয়ে তিনি ওমরাহ পালন সম্পন্ন করেন। পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণের দোয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ, আমি এই জায়গা চিনি না। তাই আপনি আমার পথপ্রদর্শক। আমি শিক্ষিত নই এবং আমার দৃষ্টিশক্তি দুর্বল। আমাকে গাইড করুন; যেহেতু আপনিই আমার একমাত্র পথপ্রদর্শক। আমাকে আপনি সঠিক পথে পরিচালিত করুন।’

আব্দুল কাদির বখশ বলেন, তার সব দোয়া কবুল করা হয়েছে। ওমরাহ থেকে ফেরার পর আবদুল কাদির বখশ ভবিষ্যতে হজ পালনের জন্য অর্থ সঞ্চয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কারণ হজ করাই তার সবচেয়ে বড় ইচ্ছা।

এবি/ জিয়া