পেশা যখন ইঁদুর নিধন

প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭:২৮ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন ডেস্ক

ইঁদুর মারা এক সময় ছিল জয়পুরহাটের আনোয়ার হোসেনের নেশা। সময়ের ব্যবধানে এখন সেটিই হয়ে গেছে তার পেশা। বাড়ি কিংবা ক্ষেতের ইঁদুর মেরে বিনিময়ে পান চাল অথবা টাকা। তা দিয়েই দুই সস্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে চলে তার সংসার।

২৫ বছর ধরে ইঁদুর নিধন করে যাচ্ছেন তিনি। চার লাখ ইঁদুর মেরে স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার।

জানা যায়, আনোয়ার হোসেনের বাড়ি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর ভট্টপলাশী গ্রামে। প্রথমে শখের বসে ইঁদুর মারা শুরু করেন আনোয়ার হোসেন। এরপর ইঁদুরের লেজ জমা দিয়ে স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে পান পুরস্কার। এখন তাকে এলাকার সবাই ‘ইঁদুর আনোয়ার’ নামেই ডাকেন। ইঁদুর মেরে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার। এখন ইঁদুর মারাকে তিনি পেশা নিয়েছেন।

আনোয়ার হোসেন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৫ বছর আগে যুবক বয়সে একদিন ধানের জমির মধ্যে থাকা ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান বের করেন অনোয়ার। পরে সেই ধান মুড়ি বিক্রেতার কাছে দিয়ে মুড়ি নেন। এরপর প্রায়ই তিনি ধানের জমিতে থাকা বিভিন্ন গর্ত থেকে ইঁদুরের লুকিয়ে রাখা ধান সংগ্রহ করে বিক্রি করতে থাকেন। এ সময় যেসব ইঁদুর গর্ত থেকে বের হতো সেগুলো মেরে ফেলতেন।

একদিন কৃষি কর্মকর্তা তাকে মরা ইঁদুরের লেজ স্থানীয় কৃষি অফিসে জমা দিতে বলেন। ইঁদুরের শতাধিক লেজ জমা দেওয়ার পর তাকে কিছু গম ও চাল সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়। এরপর থেকে আনোয়ার ইঁদুর মারাকে পেশা হিসেবে নেন। দুই সন্তানের জনক আনোয়ার হোসেন স্ত্রীকে নিয়ে সুখেই রয়েছেন।

আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর ভট্টপলাশী গ্রামের কৃষক আল মামুন, মিলন হোসেন, আব্দুস সামাদ জানান, শুধু আমন ধান না, আলু থেকে শুরু করে সব ধরনের ফসল নষ্ট করে ইঁদুর। আমন ধানের মৌসুমে ইঁদুরের অত্যাচার অনেক বেশি হয়। এ ফসলগুলো ইঁদুরের হাত থেকে রক্ষ করছেন আনোয়ার ভাই।

স্বামীর এসব কাজে সবসময় পাশে থেকে সহায়তা করেন স্ত্রী রুবি বেগম। তাদের সংসার ভালোই চলছে। এছাড়া বিভিন্ন পুরস্কার পাওয়ায় নিজেকে ও পরিবারকে নিয়ে গর্ববোধ করেন আনোয়ার হোসেন। ২৫ বছর ধরে ইঁদুর মেরেছেন প্রায় চার লাখ। ২০০৪ সালে ২৩ হাজার ৪৫১টি ইঁদুর মারার জন্য পান জাতীয় পর্যায়ের পুরস্কার।

আনোয়ার হোসেন বলেন, এলাকার ৫৭ জনকে ইঁদুর ধরা ও মারার কৌশল শিখিয়েছি। এখন তারা যেকোনো কৃষক ডাকলে সাড়া দেন এবং তাদের ইঁদুর ধরেন। বিনিময়ে যে পারিশ্রমিক পান তা দিয়ে সংসার চালান। সবাই তাকে ইঁদুর মারার ওস্তাদ হিসেবেই মানেন।

জেলা ছাড়াও অন্যান্য জেলার অনেককেই তিনি এ শিক্ষা দিয়েছেন। তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থকে এসে তার কাছে কিভাবে একাজ করতে হয় তা হাতে-কলমে দীক্ষা নেন।

জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোছা. রাহেলা পারভীন জানান, দেশের কৃষকের ফসল রক্ষার্থে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান। অভিযানে এ পর্যন্ত একাধিক স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছেন আনোয়ার হোসেন। তার মতো আরও আনোয়ার প্রতিটি জেলায় থাকলে কৃষকের ফসলহানীর পরিমাণ অনেকাংশে কমে যেত। স্থানীয় কৃষি বিভাগ সবসময় তার সঙ্গে আছে এবং আগামীতেও থাকবে।

এবি/ জিয়া