দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
বৈধ মনোনয়ন ১৯৮৫, বাতিল ৭৩১
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:০৭ | অনলাইন সংস্করণ
বিশেষ প্রতিবেদক
প্রিন্ট ভার্সন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সারা দেশে প্রার্থীদের জমা দেয়া মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ১৯৮৫ জন প্রার্থী বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ১ শতাংশ স্বাক্ষর সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে, ঋণ-বিল খেলাপি ও দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণসহ ত্রুটিপূর্ণ থাকায় বাতিল কারা হয়েছে ৭৩১ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র।
সর্বোচ্চ বৈধ প্রার্থী হয়েছে ঢাকায়, আর বাতিল বেশি হয়েছে কুমিল্লায়।
গতকাল সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এসব তথ্য জানান।
অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, যাদের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে তারা ৫ ডিসেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল করতে পারবেন। ১০ ডিসেম্বর থেকে আপিল শুনানি শুরু হবে। চলবে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
বাতিলের কারণ প্রসঙ্গে ইসির যুগ্ম সচিব মো. মাহবুবার রহমান বলেন, ‘অনেক কারণ আছে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ১ শতাংশ স্বাক্ষর সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে; ঋণ-বিল খেলাপি ও দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে অনেকের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।’
এদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বাতিল করা মনোনয়ন ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আজ মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) থেকে আবেদন করতে পারবেন প্রার্থীরা। এ লক্ষ্যে ইসিতে ১০টি অঞ্চলের জন্য ১০টি আলাদা আলাদা বুথ করেছে সংস্থাটি।
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি হবে ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি (রোববার)।
ইসি সূত্রে জানা যায়, রাজনৈতিক দলগুলো যে কয়টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তা হলো; আওয়ামী লীগ ২৯৮টি (পাঁচটি আসনে দুটি করে মনোনয়ন জমা দেয় দলটি), জাতীয় পার্টি ২৮৬টি (১৮টি আসনে দুইটি করে দলীয় মনোনয়ন জমা দিয়েছে দলটি), তৃণমূল বিএনপি ১৫১টি, জাসদ ৯১টি, ইসলামী ঐক্যজোট ৪৫টি, জাকের পার্টি ২১৮টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ৩৯টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি ৩৩টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৩৪টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৩৭টি, গণফ্রন্ট ২৫টি, গণফোরাম ৯টি ও জমিয়তে ইসলাম বাংলাদেশ ১টি।
আরও রয়েছে, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ১৪২টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ২টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ১৩টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ৪৭টি, জাতীয় পার্টি (জেপি) ২০টি, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল ০৬টি, গণতন্ত্রী পার্টি ১২টি, বাংলাদেশ ন্যশনাল আওয়ামী পার্টি ৬টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ ১৪টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল ১টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১৩টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১৮টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ১টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ বিএমএল ৫টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ৭৪টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট বিএনএফ ৫৫টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস ১১৬টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিএনএম ৪৯টি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি ৮২। এছাড়া, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৭৪৭ জন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। আর ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৪২ হাজার ১০৩টি।
সর্বোচ্চ বৈধ প্রার্থী ঢাকায়, বাতিল কুমিল্লায়
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে মোট দুই হাজার ৭১৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে এক হাজার ৯৮৫ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ও ৭৩১ জন প্রার্থীর মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করেছে সংস্থাটি। সবচেয়ে বেশি বৈধ প্রার্থী ঢাকায়। আর সবচেয়ে বেশি বাতিল হয়েছে কুমিল্লা অঞ্চলে। এছাড়া, বৈধ মনোনয়ন সবচেয়ে কম ফরিদপুর অঞ্চলে।
ইসি জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন বৈধ হয়েছে ঢাকা অঞ্চলে ৩১৭টি। এই অঞ্চলে মনোনয়ন বাতিল হয়েছে ১১৪টি। ঢাকায় মোট মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন ৪৩১ জন প্রার্থী। এছাড়া, সবচেয়ে কম মনোনয়ন বৈধ হয়েছে ফরিদপুরে ৮০ জন প্রার্থীর। বাতিল হয়েছে ২৩ জন প্রার্থীর মনোনয়ন। এই অঞ্চলে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন মোট ১০৩ জন প্রার্থী।
রংপুর অঞ্চলে মোট মনোনয়ন দাখিল ২৭৮টি। এর মধ্যে বৈধ মনোনয়ন ২০৯ এবং ৬৯ জনের মনোনয়ন অবৈধ। কুমিল্লা অঞ্চলে মোট মনোনয়ন দাখিল করেছেন ৩৫৫ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ২৩৫ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেছে ইসি। আর ১২০ জন প্রার্থীর মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে মোট মনোনয়ন দাখিল করেছেন ১৯৮ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ৪৪ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হলেও ১৫৪ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেছে ইসি। সিলেট অঞ্চলে মোট মনোনয়ন দাখিল করেছেন ১৬০ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ১২৫ জন প্রার্থীর আবেদন বৈধ এবং ৩৫ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেছে ইসি।
রাজশাহী অঞ্চলে মনোনয়ন দাখিল করেছেন মোট ৩৬৯ জন। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ১১০ জন প্রার্থীর মনোনয়ন এবং বৈধ হয়েছে ২৫৯ জনের।
খুলনা অঞ্চলে মোট মনোনয়ন দাখিল করেছেন ৩২২ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ৯৪ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হলেও মনোনয়ন বৈধ হয়েছে ২২৮ জনের। বরিশাল অঞ্চলে মনোনয়ন দাখিল করেছেন ১৭৩ জন। এর মধ্যে ৩৮ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে এবং বৈধ হয়েছে ১৩৫ জনের।
ময়মনসিংহ অঞ্চলে মোট ৩২৭ জন মনোনয়ন দাখিল করেছেন। এর মধ্যে ৮৪ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে এবং ২৪৩ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ হয়েছে।
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই চলবে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।