করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকারের সাফল্য
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৪:৫৭ | অনলাইন সংস্করণ
কমল চৌধুরী

করোনা ভাইরাস সারা বিশ্বের জন্য এক ভয়ংকর অভিশাপ। করোনা ভাইরাসের জন্য সারা বিশ্বে প্রায় ৮৫ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়। গত দুই বছরে করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের স্কুল-কলেজ বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকায় ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া দারুণভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছেলেমেয়েদের শৃংখলা ভঙ্গ হওয়ার পাশাপাশি লেখাপড়া করার মানসিকতারও কিছুটা বিপর্যয় ঘটেছে।
ফলে ২০২৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ- ৫এর হার অনেক কমেছে। মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা ফলাফল খারাপ করেছে। এহেন পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়ে সফল হয়েছে।
ইউনিসেফের মতে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন প্রয়োগে বাংলাদেশ সফল হয়েছে। ইউনিসেফের করোনা ভাইরাসের টিকা প্রয়োগের সফল তালিকায় পেরু, ভিয়েতনাম ও ফিলিপিনের মতো বাংলাদেশের নামও রয়েছে। সরকারের অব্যাহত প্রতিষ্ঠা ও প্রয়াসে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জন।এ সাথে বলা যায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সব ক্ষেত্রেই অভুতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে সরকার।
করোনা পরিস্থিতি এবং অর্থনীতিতে এর প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও প্রণোদনা ব্যাপক প্রসংশনীয়। অর্থনীতি, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, খাদ্য-কৃষি, পরিবেশ-জলবায়ু, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ-জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের সাফল্যের মতো করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণেও বর্তমান সরকার ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে ২ হাজার চিকিৎসক ও ৫ হাজার ৫৪ জন নার্স নিয়োগ করা হয়েছে। কোভিড ডেডিকেটেড (করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে )হাসপাতালগুলোতে ২০ হাজার ৫২৫টি সাধারণ শয্যা, ১৬৬৬টি আইসিইউ এবং ১৭৩টি ডায়ালাইসিস বেড, ১ ৫৫৪টি ভেন্টিলেটর ,৩৩ হাজার ৫১৬টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ,১৬৭৮ হাই ফফ্লেুা নাজাল ক্যানুলা এবং ১৬৪৯টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কোভিড ১৯ মহামারি মোকাবিলায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেট এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব লাইফ সায়েন্সেস প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরাসরি ক্রয় করা হয়েছে। সরকার দেশের জনগণকে কোভিড-১৯ এর জন্য ৪ ডোজ টিকা দিতে পেরেছে। সময়োপযোগী ও আকর্ষণীয় প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার কর্মসৃজন ও কর্মসুরক্ষা, অভ্যন্তরীণ চাহিদা সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সময়োচিত সাহসী সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশ করোনা পরিস্থিতি সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাবে গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিক্ষা ব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্র কুটিরশিল্পসহ অর্থনীতির সব খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ দফা নির্দেশনাসহ ভার্চ্যুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে নানামুখী দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়েছে। বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ , ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয় এবং নগদ অর্থ বিতরণসহ সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে দেশে একটি মানুষও করোনাকালে না খেয়ে থাকেনি।
সরকার সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দক্ষতা ও উৎকর্ষ সাধন এবং প্রাজ্ঞ রাজস্বনীতি ও সহায়ক মুদ্রানীতি অনুস্মরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। গত এক দশকে গড়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ ও পরপর তিন বছর ৭ শতাংশের উপর প্রবৃদ্ধি অর্জনের পর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির এই ধারাবাহিক অর্জন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। করোনা ভাইরাস মহামারিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশে। তবে একই সময়ে মাথাপিছু জাতীয় আয় ৮ দশমিক ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলারে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। আই এমএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সরকারের অব্যাহত সফল প্রয়াসের পাশাপাশি রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা আনয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে গত এক দশকে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় চার গুণ হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস বহুলাংশেই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা থাকলেও মৃত্যুর হার প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। বিষয়টি আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক। করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আমাদের সকলের সচেতনতা জরুরি প্রয়োজন।
আমার বার্তা/জেএইচ