বন্ধ পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত

প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ১১:০৩ | অনলাইন সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক


# আলোচনার মধ্য দিয়েই মজুরি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ১১ শ্রমিক সংগঠনের
# কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং কারখানার সম্পত্তি রক্ষায় কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় হয় : বিজিএমইএ  

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা সব পোশাকশিল্প কারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।

বন্ধ কারখানা সংশ্লিষ্ট এলাকার শ্রমিক, শ্রমিক সংগঠন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসন, শিল্প পুলিশের সঙ্গে আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ।

জানা গেছে, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে অনড় অবস্থান থেকে সরে এসেছে শ্রমিকরা। ধ্বংসাত্মক কর্ম নয়, আলোচনার মধ্য দিয়েই মজুরি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্দোলনে অনড় থাকা ১১ শ্রমিক সংগঠন। আর এরই ফলে অনিশ্চয়তা কাটছে গাজীপুর ও মিরপুরে গার্মেন্টস শিল্পে।

সদ্য ঘোষিত মজুরি প্রত্যাখ্যান করে ৬৫ শতাংশ বাড়িয়ে নূন্যতম ২৫ হাজার টাকা করার দাবীতে অনড় অবস্থান নিয়েছিলো দেশের পোশাক শিল্পের ১১টি শ্রমিক সংগঠন। গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় চলমান ছিলো বিক্ষোভ ও সহিংসতা।

শ্রমিক সংগঠনগুলো এমন পরিস্থিতিতে ১২,৫০০ টাকা প্রত্যাখ্যানের আপত্তিপত্র দাখিল করে সরকারের কাছে। গত ৭ নভেম্বর ঘোষিত বেতন কাঠামোতে শুধুমাত্র এন্ট্রি-লেভেলের কর্মীদের বেতন ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। অন্যান্য গ্রেডে ২০ থেকে ২৮ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করা হয়।

শ্রমিক আন্দোলন চলাকালে গত রোববার পোশাকশিল্প কারখানায় কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং কারখানার সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থে ১৩০টি পোশাক কারখানার সব কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এ ঘোষণার দুদিনের মাথায় সব কারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত এলো।

বিজিএমইএ সূত্র জানায়, মজুরি বৃদ্ধির পরও আন্দোলনের নামে বিভিন্ন জায়গায় কারখানা ভাঙচুর করে পোশাকশ্রমিকরা। মজুরি ঘোষণার পর থেকে বেশ কিছু কারখানায় অজ্ঞাতপরিচয় কিছু উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক অযৌক্তিক দাবিতে বেআইনিভাবে কর্মবিরতি পালন করে। সেসব কারখানার কর্মকর্তাদের মারধর করে। কারখানার ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এসব কারণে পোশাকশিল্প কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিল।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল গতকাল আমার বার্তাকে বলেন, পোশাক কারখানার মালিকরা মূলত কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং কারখানার সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থে সব কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ায় বন্ধ সব কারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে শ্রমিক, শ্রমিক নেতা, কারখানা মালিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত হয়।

তিনি বলেন, তবে মিরপুর এলাকার দু-একটি কারখানা এখনো বন্ধ রাখা হয়েছে। সেসব কারখানার সংশ্লিষ্ট শ্রমিক-মালিকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করি সেগুলোও বৃহস্পতিবারের মধ্যে খুলে যাবে। তবে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত হলেও এখনো সব ধরনের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকছে।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেনে, আমরা পোশাক কারখানায় নতুন নিয়োগ বন্ধ রাখতে বলেছি। পরিস্থিতি অনূকূলে এলে আবার নতুন নিয়োগ দেয়া হবে।
বিজিএমইএর পর বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বা বিকেএমইএ’র সদস্যভুক্ত কারখানায়গুলোও নতুন নিয়োগ বন্ধ করে।

বিকেইএমইএ এক চিঠির মাধ্যমে তাদের সদস্য কারখানাগুলোকে জানিয়েছে, প্রয়োজন না হলে নতুন নিয়োগ বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে সামগ্রিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কারখানাগুলোর গেটে ‘নিয়াগ বন্ধ’ নোটিশটি দৃশ্যমান রাখার কথাও বলা হয়েছে।

আন্দোলনের ডাক দেয়া শ্রমিকদের অভিযোগ ছিলো, প্রস্তাবিত মজুরি কাঠামোতে ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ এবং ১ ও ২ নম্বর গ্রেড বাতিল করে শ্রমিকদের ঠকানো হয়েছে। শ্রমিক সংগঠনগুলো গ্লোবাল লিভিং ওয়েজ কোয়ালিশনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে ন্যূনতম মাসিক ২৫ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণের কথা বলে। একই সঙ্গে ৫ ও ৬ নম্বর গ্রেডকে ৩ ও ৪ নম্বর গ্রেডের সঙ্গে সমন্বয় করার দাবি জানান তারা।

এবি/ওজি

সম্প্রতি বেতন বাড়ানোর দাবিতে সাভার ও গাজীপুরে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলনে নামেন। গত ৭ নভেম্বর সচিবালয়ে নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। যেখানে পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এটি কার্যকর হবে আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে। তবে সরকার নির্ধারিত এই বেতন কাঠামো প্রত্যাখ্যান করে ২৩ থেকে ২৫ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যায় শ্রমিক সংগঠনগুলো। চলমান আন্দোলনে এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি হয়েছে। এছাড়া বেশকিছু পোশাক কারখানায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে।