খাদিজার (রা.) যে ৪ গুণ নারীদের জন্য অনুসরণীয়
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:০৩ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

ইসলামী ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নারীদের একজন খাদিজা (রা.)। বুদ্ধিমতী, সম্মানিত, নিবেদিতপ্রাণ, সৎ ও দানশীলা ইমাম যাহাবি তাকে এভাবেই বর্ণনা করেছেন। তিনি জান্নাতের অধিবাসীদের একজন এবং নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রথম স্ত্রী। জীবদ্দশায় তিনি ছিলেন নবীজির একমাত্র স্ত্রী। তিনিই প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। আল্লাহ তার কাছে ফেরেশতা জিবরাইলের মাধ্যমে বিশেষ সালাম পাঠিয়েছিলেন, আর তাকে বিশেষভাবে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছিল।
মহানবী (সা.)-এর স্ত্রী ও উম্মাহাতুল মুমিনীন হজরত খাদিজা (রা.)-কে নিয়ে গর্ব করার যথেষ্ট কারণ আছে। ঘরের কাজ–কর্ম কিংবা সংসার পরিচালনার কৌশল মেয়েরা যেভাবেই শিখুক, শেষ পর্যন্ত আদর্শ হিসেবে তারা মাকেই অনুসরণ করে। নবীজির স্ত্রীরা মুসলিম জাতির জন্য মায়ের মতো। তাই তাদের উম্মাহাতুল মুমিনীন বলা হয়। সেই সেই দৃষ্টিতে মা খাদিজা নারীজীবনের শ্রেষ্ঠ রোল মডেল।
নিচে খাদিজা (রা.)-এর দাম্পত্য জীবনের কয়েকটি গুণ তুলে ধরা হলো, যা আজকের নারীদের জন্যও অনুসরণীয়।
১. চরিত্রবান জীবনসঙ্গী নির্বাচন করেছিলেন
উম্মাহাতুল মুমিনীন খাদিজা (রা.) মক্কার সম্ভ্রান্ত ও বিত্তশালী নারী ছিলেন। তার প্রথম স্বামী মারা যায়। এরপর বিয়ের জন্য একাধিক প্রস্তাব পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সবগুলো প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ তার লক্ষ্য শুধু বিয়ে করা ছিল না। বরং তিনি একজন চরিত্রবান ও নীতিবান মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে চেয়েছিলেন। আল্লাহ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার জন্য সেই মানুষ হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। স্বামী নির্বাচনে এই বিচক্ষণতা পরবর্তীতে তাদের দাম্পত্যকে সুখী ও দৃঢ় করেছিল।
ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও পরস্পর সহযোগিতা ও ভালোবাসাপূর্ণ জীবন গড়ার প্রথম শর্ত হলো সঠিক মানুষকে বেছে নেওয়া। কারণ প্রকৃত ভালোবাসা সেই মানুষকেই দেওয়া যায়, যাকে আপনি মন থেকে সম্মান করেন।
২. বিপদের সময় সান্ত্বনা ও অভয় দিয়ে স্বামীর পাশে ছিলেন
হেরা গুহায় জিবরাঈল (আ.) যখন প্রথমবার ওহী নিয়ে আগমন করেছিলেন মহানবী (সা.)-এর কাছে। তখন জিবরাঈলের বিশালাকৃতি দেখে আতঙ্কিত হয়েছিলেন। এই সময় আতঙ্কিত মন নিয়ে নবীজি (সা.) নিজের চাচা বা বন্ধু আবু বকরের কাছে যাননি, বরং গিয়েছিলেন স্ত্রী খাদিজার কাছে।
তিনি খাদিজাকে বিস্তারিত জানিয়ে বললেন, আমি নিজের জন্য আশঙ্কা করছি। খাদিজা (রা.) সঙ্গে সঙ্গে স্বামীকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন, এমনটা হতে পারে না। আপনি আনন্দিত হোন। আল্লাহ কখনো আপনাকে বিপদে ফেলবেন না। আপনি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, সত্য কথা বলেন, মানুষের দায়িত্ব বহন করেন, অসহায়দের সাহায্য করেন, অতিথি আপ্যায়ন করেন এবং বিপদাপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ান। আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করবেন।
নবীজি (সা.) যখন আতঙ্কিত ছিলেন, সেই মুহূর্তে এই বাক্যগুলোর মধ্যে ছিল ভালোবাসা, সান্ত্বনা ও দৃঢ় আশ্বাস। যা একজন মানুষ তার আপনজনের কাছ থেকে প্রত্যাশা করে।
এই ঘটনা শিক্ষা দেয় একজন স্ত্রী হতে পারে স্বামীর সবচেয়ে বড় মানসিক ভরসা।
৩. প্রজ্ঞাসম্পন্ন পরামর্শদাতা ছিলেন তিনি
শুধু সান্ত্বনা দিয়েই থেমে যাননি খাদিজা (রা.)। সমাধানের জন্য তিনি ওয়ারাকা ইবন নওফেলের কাছে যাওয়ার পরামর্শ নবীজিকে। ওয়ারাকা ছিলেন জ্ঞানী ও ধর্মশাস্ত্র বিশেষজ্ঞ। তিনি পুরো ঘটনা শুনে বিশ্লেষণ করলেন এবং ভবিষ্যতবাণীও করে দিলেন।
তাই একজন স্ত্রী হিসেবে জ্ঞানসমৃদ্ধ হওয়া জরুরি। ইসলাম, সমাজ, চলমান বিষয় সব বিষয়ে একজন নারী জ্ঞান থাকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে যেন তিনি স্বামীকে বুদ্ধিদীপ্ত, বাস্তবজ্ঞানসম্পন্ন পরামর্শ দিতে পারবেন খাদিজা (রা.)-এর মতো।
৪. স্বামীর পাশে ছিলেন শক্ত দেয়ালের মতো
নবী মুহাম্মদ (সা.) স্ত্রী খাদিজা (রা.) সম্পর্কে বলেছেন, যখন সবাই অবিশ্বাসী ছিলো, তখন তিনি (খাদিজা) আমার প্রতি বিশ্বাস রেখেছেন। অন্যরা আমাকে সম্পদ দেয়নি, অথচ তিনি তার সব সম্পদ আমাকে দিয়েছেন। আল্লাহ আমাকে তার মাধ্যমেই সন্তান দান করেছেন, অন্য কারও মাধ্যমে নয়।
ওহী নাজিলের পর থেকেই শুরু হয়েছিল নবীজি (সা.)-এর কষ্টের ধারা। তাকে সমাজ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল, তার সম্পদ কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, এমনকি অনাহারে থাকতেও বাধ্য করা হয়েছিল। কিন্তু এই কঠিন মুহূর্তগুলো খাদিজা (রা.) কখনো পিছিয়ে যাননি। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত নবীজির শক্ত স্তম্ভ হয়ে পাশে ছিলেন।
স্বামীর প্রতি আস্থা রাখা, গুজবে কান না দেওয়া, কঠিন সময়ে পাশে থাকা এগুলো খাদিজা (রা.)-এর গুণ এবং তার শিক্ষা। তার জীবন নারীদের এই শিক্ষা দেয় যে, পৃথিবী যদি স্বামী বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তবুও স্ত্রীর উচিত তার প্রতি সমর্থন দিয়ে যাওয়া।
আমার বার্তা/জেএইচ
