জীবনের প্রতি বিরক্ত? কোরআন ও হাদিসে রয়েছে আপনার জন্য সুসংবাদ

প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩৫ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ যেন জীবনের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী। কেউ দারিদ্র্যে ভোগেন, কেউ অসুস্থতায়, কেউ প্রিয়জন হারিয়ে, কেউ মানসিক অস্থিরতায়। কিন্তু এসব কষ্টের মাঝে ধৈর্যধারণ করতে পারলে লুকিয়ে থাকে আল্লাহর রহমত।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলিমের গায়ে যদি একটি কাঁটা বিদ্ধ হয় কিংবা তার চেয়েও বেশি ছোট কোনো আঘাত লাগে, তার বিনিময়ে তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং তার একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৫৫)(বুখারি ও মুসলিম)

এই হাদিস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, দুনিয়ার জীবন আসলে একটি পরীক্ষার স্থল। আল্লাহ তায়ালা বলেন— আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ, প্রাণ ও ফসলের ক্ষতি দিয়ে। আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও, যারা বিপদে পড়ে বলে, ‘নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই, এবং তারই দিকে ফিরে যাব। তাদের ওপরই আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হয়, এবং তারাই সঠিক পথে পরিচালিত। (সুরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৫৫-১৫৭)

পরীক্ষার নানা ধরন

কেউ অর্থকষ্টে, কেউ রোগে, কেউ নিরাপত্তাহীনতায়, কেউ বা একাকীত্বে ভোগেন। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যিনি জীবন ও মৃত্যুকে সৃষ্টি করেছেন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য, কে তোমাদের মধ্যে উত্তম আমল করে। (সুরা আল-মুলক, আয়াত : ২)

অর্থাৎ, কষ্ট আসবেই; কিন্তু ইসলাম শিখিয়েছে কষ্টের সময় কীভাবে থাকতে হয়। ধৈর্য, আশা ও আল্লাহর ওপর ভরসা—এই তিনটি হলো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মূল চাবিকাঠি।

দুঃখের মাঝেও রয়েছে আশার আলো

প্রতিটি কষ্টই পাপ মোচনের এক সুযোগ। রাসুল (সা.) বলেছেন, মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সব কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শোকর করে আর অসচ্ছলতা বা দুঃখ-মুসিবতে আক্রান্ত হলে ধৈর্য ধরে, প্রতিটিই তার জন্য কল্যাণকর। (মুসলিম)

আরেকটি হাদিসে তিনি বলেছেন, আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ কামনা করেন তাকে তিনি দুঃখকষ্টে পতিত করেন। (বুখারি)

কষ্ট মানে কি শাস্তি?

অনেকে মনে করেন, বিপদ মানেই আল্লাহ আমার ওপর অসন্তুষ্ট বা তিনি আমাকে শাস্তি দিচ্ছেন। কিন্তু কোরআন বলছে— আর তোমাদের প্রতি যে মুসীবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। আর অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন।  (সুরা আশ-শুরা, আয়াত ৩০)

হজরত আলী (রা.) এই আয়াত সম্পর্কে বলেছেন, এটি কোরআনের সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক আয়াত। যদি আমার গুনাহগুলো কষ্ট ও বিপদে মাফ হয়ে যায়, আর তার পরেও আল্লাহ আরও অনেক কিছু ক্ষমা করে দেন—তবে আর কীই বা বাকি থাকে!

অর্থাৎ, কষ্ট বা বিপদ শাস্তি নয়; বরং আত্মার পরিশুদ্ধি ও জান্নাতের পথে এগিয়ে যাওয়ার এক উপায়।

হতাশ নয়, দৃঢ় হোন

রাসুল (সা.) বলেছেন, শক্তিশালী মুমিন দুর্বলের তুলনায় আল্লাহর কাছে উত্তম ও অধিক প্রিয়। প্রত্যেকের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে, যাতে তোমার উপরকার হবে তার প্রতি তুমি লালায়িত হয়ো এবং আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর এবং অক্ষম হয়ে থেকো না। যদি কোন কিছু (বিপদ) তোমার উপর আপতিত হয় তবে এমন বলবে না যে, যদি আমি এমন করতাম তবে এরূপ এরূপ হত। বরং এই বল যে, আল্লাহ যা নির্ধারণ করেছেন এবং তিনি যা চেয়েছেন তাই করেছেন। কেননা, তোমার(যদি) শব্দটি শয়তানের আমলের দুয়ার খুলে দেয়।(মুসলিম)

এভাবে ইসলাম শেখায়—কষ্ট বা বিপদে হার মানা নয়, বরং ধৈর্য ধরে এগিয়ে যাওয়া উচিত। কারণ প্রতিটি পরীক্ষার পরই অপেক্ষা করছে আল্লাহর রহমত, ক্ষমা ও পুরস্কার।

সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষায় পড়েছিলেন নবীগণ, তারপর তাদের অনুসারীরা। কারও ঈমান যত দৃঢ়, তার পরীক্ষা তত কঠিন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, সেই পরীক্ষাই তাকে করে তোলে নিঃপাপ ও জান্নাতের যোগ্য।

তাই জীবনের বিপদে ক্লান্ত হলে এই হাদিসটি মনে রাখুন— আল্লাহ যখন কারও মঙ্গল চান, তখনই তিনি তাকে কষ্টের মধ্য দিয়ে নিয়ে যান।


আমার বার্তা/জেএইচ