অনুমতি ছাড়া কারও ঘরে প্রবেশ করা ইসলামে অনুমোদন নেই

প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ১১:০১ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন ডেস্ক

অন্যের ঘরে প্রবেশের পূর্বে অনুমতি চাওয়া : আল্লাহ তাআলা বলেন : হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য কারো ঘরে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না অনুমতি গ্রহণ কর এবং তার বাসিন্দাদের সালাম দাও। এ-ই তোমাদের জন্য উত্তম। (এ নির্দেশ দেওয়া হলো), যাতে তোমরা স্মরণ রাখ। (সূরা নূর-২৭)। অনুমতি চাওয়ার আগে সালাম দেওয়া।

তারপর অনুমতি চাওয়া। সাহাবী ও তাবেঈদের আমলও অনুরূপ এবং এটাই সুন্নত সম্মত। হযরত কালাদাহ্ ইবনু হাম্বল রহ.থেকে বর্ণিত—সাফওয়ান ইবনু উমাইয়্যা রা.তাকে কিছু দুধ, ছানা ও তরকারীসহ নবী সা.-এর নিকট পাঠান। সে সময়ে নবী সা. উপত্যকার উপরে অবস্থান করছিলেন।তিনি (কালাদাহ্) বলেন, আমি অনুমতিও চাইলাম না, সালামও করলাম না, বরং এমনি তাঁর নিকট চলে গেলাম। নবী সা.-আমাকে বললেন, তুমি ফিরে গিয়ে বল, আস্সালামু আলাইকুম, আমি কি আসতে পারি? (তারপর আমার নিকট এসো)। আর এ ঘটনাটি সাফওয়ানের ইসলাম গ্রহণের পরের। যাগাবীস এক প্রকার উদ্ভিদ যা খাওয়া যায়। (সুনানে তিরমিজি : ২৭১০)।

নাম-পরিচয় উল্লেখ করা। কন্ঠস্বর শুনে অনেক সময় ঘরের ভেতর থেকে চেনা যায় কে এসেছে বা আসতে অনুমতি চাচ্ছে। তবে অনেক সময় তা সম্ভব হয় না।

সেক্ষেত্রে ভেতর থেকে জানতে চাওয়া হয়, কে অনুমতি চাচ্ছে? কখনো এমনটা হলে অনুমতি প্রার্থীর কর্তব্য হলো, সরাসরি নিজের নাম বলে দেওয়া বা যে নামে তাকে চেনে সেটা উল্লেখ করা। তা না করে শুধু আমি আমি, বলা অনুত্তম ও বিরক্তিকর কাজ। কারণ ভেতর থেকে জানতে চাওয়ার উদ্দেশ্যই হলো, আপনি কে তা চিনতে পারেনি। আর অচেনা কাউকে অনুমতি না দেওয়াতে কোনো অসুবিধা নেই। হযরত ইবনে আব্বাস রা.থেকে বর্ণিত—হযরত উমর রা. রাসূল সা.এর কাছে এসে সালাম দিয়ে বললেন, উমর কি প্রবেশ করবে? (মুসনাদে আহমদ-২৭৫৬)

ঘরের ভেতরে দৃষ্টি না দেওয়া : মালিকের অনুমতি ছাড়া ঘরের ভেতরে দৃষ্টি দেওয়া অতি নিন্দনীয় ও কুরুচিপূর্ণ কাজ। এতে করে এমন কোনো দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হতে পারে যা গৃহের মালিকের জন্য অপ্রীতিকর ও অসন্তোষজনক। এমন কাজ যারা করে তাদের সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে কঠোর হুশিয়ারি।

হযরত সাহ্ল ইবনু সা‘দ রা. থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, একবার এক লোক নবী সা.- এর কোন এক হুজরায় উঁকি দিয়ে তাকালো। তখন নবী সা. এর কাছে একটা ‘মিদরা’ ছিল, যা দিয়ে তিনি তাঁর মাথা চুলকাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন : যদি আমি জানতাম যে, তুমি উঁকি দিবে, তবে এ দিয়ে তোমার চোখ ফুঁড়ে দিতাম। তাকানোর জন্য অনুমতি গ্রহনের বিধান দেয়া হয়েছে। (সহিহ বুখারী : ৬২৪১)।

কোথায় দাঁড়িয়ে অনুমতি চাইবে : কারো ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইতে গেলে সরাসরি ঘরের দরজা বরাবর না দাঁড়িয়ে বরং দরজার ডান বা বাম পাশে দাঁড়ানো। যাতে ঘরের ভেতর দৃষ্টি পড়ে না যায়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু বুস্র রা.থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সা.কোন কওমের দরবারে এলে সরাসরি দরজায় মুখ করে দাঁড়াতেন না, বরং দরজার বাম বা ডান পাশে সরে দাঁড়িয়ে বলতেন ‘আস্সালামু ‘আলাইকুম,আস্সালামু ‘আলাইকুম ’। কারণ সে যুগে দরজায় পর্দা টানানো থাকতো না। (সুনানে আবু দাউদ, ৫১৮৬)।


অনুমতি না পেলে ফিরে আসা : অনেক সময় বাসায় মানুষ থাকে না। আবার কখনো মানুষ থাকে তবে পুরুষ নয়, ছোট বাচ্চা বা নারী। এমনও হতে পারে যে, যে-অনুমতি চাচ্ছে সে ওই নারীর নন-মাহরাম। যদ্দরুন ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিতে পারছে না। অথবা ঘরের মালিক ব্যক্তিগত কোনো কাজে ব্যস্ত, বা সে চাচ্ছে না এ মূহুর্তে কেউ তার ঘরে প্রবেশ করুক।

এমতাবস্থায় উচিত হলো তিনবার অনুমতি চেয়ে প্রতিত্তোর না পেলে ফিরে আসা। আর যদি ভেতর থেকে সরাসরি ফিরে যেতে বলে তাহলে তো কথাই নেই। এ সম্পর্কে কুরআনের নির্দেশ দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট। আল্লাহ তাআলা বলেন : আর যদি তাতে কাউকে না পাও, তাহলে তাতে প্রবেশ করো না। যতক্ষণ না তোমাদের অনুমতি দেওয়া হয়। আর যদি তোমাদের বলা হয়, ফিরে যা, তাহলে ফিরে যেয়ো। এটি তোমাদের জন্য খুবই পরিচ্ছন্ন পদ্ধতি বা পন্থা। আর তেমরা যা কর সে সম্বন্ধে আল্লাহ সম্যক অবগত। (সূরা নূর-২৮)। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নববী আদর্শের ওপর চলার তাওফিক দান করুন, আমিন।

এবি/ওজি