একাত্তরে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে লন্ডনে সিম্পোজিয়াম

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৪৭ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন ডেস্ক

আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকর্মী এবং বিশেষজ্ঞরা ঐতিহাসিক প্রামাণ্য দলিলগুলো পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের সংঘটিত ‘নারকীয়’ জেনোসাইডের অনতিবিলম্বে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

১৯৭১ সালে সংঘটিত জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে গত মঙ্গলবার লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের সেমিনার কক্ষে ইউরোপে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন ইউরোপীয় বাংলাদেশ ফোরাম (ইবিএফ) আয়োজিত আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়ামে বক্তারা এই দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।

বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে চলমান ভূ-রাজনৈতিক স্নায়ুযুদ্ধের কারণে ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত এই ন্যক্কারজনক জেনোসাইড এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। যুগ যুগ ধরে পাকিস্তানের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রচারণার কারণে একাত্তরে জেনোসাইডের শিকার লাখো লাখো নারী ও পুরুষ এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা এখন পর্যন্ত এই জেনোসাইডের ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত। তাই এখনই সঠিক সময় বিশ্বের সব অঞ্চলে জেনোসাইড ও নির্যাতনের শিকার জাতি-গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধভাবে একই মঞ্চে এসে তাদের ন্যায্য অধিকার এবং ন্যায়বিচারের জন্য দাবি তুলতে হবে।

সিম্পোজিয়ামের উদ্দেশ্য ছিল একাত্তরে জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখতে ব্রিটিশ ও ইউরোপীয় রাজনীতিবিদ, নীতিনির্ধারক, মানবাধিকারকর্মী এবং শিক্ষাবিদদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ব্রিটেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রবিষয়ক সিলেক্ট কমিটির চেয়ারম্যান স্যার পিটার শোর এমপি ব্রিটিশ সংসদে পাকিস্তানি নৃশংসতার নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরে ২৩৩ জনের বেশি সংসদ সদস্য বাংলাদেশে জেনোসাইড বন্ধ এবং বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে স্বীকৃতি চেয়ে আরেকটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন।

ইবিএফ ইউকের সভাপতি আনসার আহমেদ উল্লাহর সভাপতিত্বে সিম্পোজিয়ামে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্যের সিনিয়র সাংবাদিক ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন, নেদারল্যান্ডসের সাবেক সংসদ সদস্য হ্যারি ভ্যান বোমেল, জার্মান মানবাধিকারকর্মী ক্লডিয়া ওয়াডলিচ, লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মিনিস্টার শেখ মো. শাহরিয়ার মোশাররফ, কিংস কলেজ, যুক্তরাজ্যের ওয়ার স্টাডিজ বিভাগের সিনিয়র ফেলো ড. আয়েশা সিদ্দিকা, বেলজিয়ামের সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ অ্যান্ড কোঅপারেশনের (ডিআরসি-গ্লোবাল) সিনিয়র গবেষক অধ্যাপক ডা. তাজিন মুর্শিদ, বাংলাদেশের দি নিউ এজ পত্রিকার সাবেক সম্পাদক সৈয়দ বদরুল আহসান, ইরানি-বালুচ মানবাধিকারকর্মী রেজা হোসাইনবর, ইবিএফ, নেদারল্যান্ডসের সভাপতি বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া, ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর সেক্যুলার বাংলাদেশ, সুইজারল্যান্ডের সভাপতি রহমান খলিলুর মামুন, স্বাধীনতা ট্রাস্ট ইউকের নির্বাহী সদস্য ভাল হার্ডিং, ডাচ শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী ভিলেম ফন ডের গেস্ট এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের এসওএএসের চার্লস ওয়ালেস ভিজিটিং ফেলো সাদ এস খান।

বাংলাদেশের জেনোসাইড বিংশ শতাব্দীতে প্রত্যক্ষ করা জঘন্যতম গণহত্যার একটি। বাংলাদেশ সরকারের মতে ১৯৭১ সালে ৯ মাস যুদ্ধকালে আনুমানিক ৩০ লাখ মানুষ নিহত হয়, দুই লাখেরও বেশি নারী নির্যাতনের শিকার হয় এবং ১০ লাখ মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। দুর্ভাগ্যবশত, বাংলাদেশের জেনোসাইড আজ ইতিহাসের একটি বিস্মৃত অধ্যায়ে পরিণত হয়েছে। ইবিএফের দাবি, নৃশংসতার শিকার লাখো নারী-পুরুষ এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ন্যায়বিচার উপহার দিতে ১৯৭১ সালের জেনোসাইডকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে।

সিম্পোজিয়ামটি ব্রিটিশ বাংলা নিউজ টিভি এবং দ্য নিউ সান বাংলা পোস্টের ফেসবুক ও ইউটিউব প্ল্যাটফর্ম থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

এবি/ জিয়া