নিজের বেতন ২০ হাজার, গাড়ির চালকের বেতন ২৫ হাজার

রেলওয়ের কোটিপতি কর্মচারী সোহাগ

প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:০০ | অনলাইন সংস্করণ

  বশির হোসেন খান

# সঠিক তথ্য প্রমাণ হাতে পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে: রাসেল আলম, বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী, রেলওয়ে, ঢাকা
# যান্ত্রিক বিভাগীয় প্রধানকে বলে দিচ্ছি তিনি বিষয়টি দেখবেন: মোহাম্মদ সফিকুর রহমান, বিভাগীয় ব্যবস্থাপক, রেলওয়ে, ঢাকা

বাংলাদেশ রেলওয়ের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী সোহাগ চৌধুরি বিকাশ। বেতন পান ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। এ টাকা দিয়ে রাজধানীতে বসবাস ও সংসার চালানোই যেখানে দায়, সেখানে তিনি অঢেল সম্পদ গড়েছেন। নিজে চড়েন ৪০ লাখ টাকা দামের লেটেস্ট মডেলের গাড়ি স্যালনে। চালকের বেতন দেন ২৫ হাজার টাকা। রাজধানীতে তার রয়েছে নামে বেনামে একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট। এখানেই শেষ নয়, ঢাকার বাইরেও আছে বাড়ি, আছে বিপুল সম্পত্তি। রেলওয়েতে মাত্র ৭ বছরের চাকরিতে এই অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়েছেন সোহাগ চৌধুরী। দুদকের অভিযোগ সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী সোহাগ চৌধুরি ওরফে বিকাশ। তিনি ২০১৬ সালের ৩১ মে রেলওয়েতে ক্যারেজ ফিটার গ্রেড-২, টিকেট নম্বর (১৪৭৮) পদে যোগদান করেন। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের পূর্বদিকে অবস্থিত ঢাকা ক্যারেজ ডিপোতে চাকুরি করা বিকাশের সর্বসাকুল্যে বেতন ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। তার পিতা ফরিদপুর জেলার বাসিন্দা। কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। ফরিদপুর অঞ্চলে তাদের প্রায় ৩/৪ বিঘা জমি আছে, যা বছরের অধিকাংশ সময়ে পানির নিচে থাকে। অপরদিকে তার শ্বশুর একজন মানষিক রোগী। তাদের পরিবারও কৃষি থেকে আয়ের উপর নির্ভরশীল। 

জানা গেছে, রেলের কর্মচারীদের বদলি ও পদায়নে সক্রিয় রয়েছে সোহাগ চৌধুরীর একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা বিভিন্ন কাজের জন্য নিজেরাই অবৈধভাবে অর্থ উত্তোলন করেন; ভাগ দেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও। এসব অনিয়মে জড়িত কর্মচারীরা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ঢাকায় এবং নিজ এলাকায় আছে জমি, ভবন ও ফ্ল্যাট। তবে তার বেশিরভাগ সম্পদ স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজনের নামে করেছেন। ব্যক্তিগত গাড়িটিও তার নামে ক্রয় করেননি। ক্রয়ে নাম দিয়েছেন স্ত্রীর। চতুর সোহাগ চৌধুরী গাড়িটি রাখেন আবার কমলাপুর রেলওয়ে হাসপাতালের পাশে। গাড়ি রেখে কিছুটা পথ হেঁটে যাতায়াত করেন তিনি। 

দুদকে জমা দেয়া অভিযোগে বলা হয়, রেলের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী সোহাগ চৌধুরী বিকাশ ৪০ লাখ টাকা মূল্যের দামি গাড়িতে চড়েন (গাড়ী নম্বর-ঢাকা মেট্রো-গ-৪৫-৮৭৬৭)। গাড়ীর ড্রাইভারকে বেতন দেন ২৫ হাজার টাকা। এর আগে তিনি ঢাকার রমনা এলাকায় ‘ইস্কাটন গার্ডেন-রীমা’য় একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেন। ফ্লাটটির মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। রাজকীয় এই ফ্ল্যাটটি সাজাতে তার খরচ হয়েছে ৫০ লাখ টাকারও বেশি। তিনি প্রতি শুক্র-শনিবার ঢাকার অভিজাত এলাকার পাঁচ তারকা মানের হোটেলে মেয়ে-মদ নিয়ে আসর বসান। রেলের অনেক কর্মকর্তা এ আসরে যোগ দেন।

অভিযোগে আরো জানা যায়, সোহাগ চৌধুরী বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন সভা-সমাবেশ সফল করতে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেন। লন্ডনে টাকা পাচার করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি রাজধানীতেই নামে-বেনামে গড়েছেন কোটি টাকার সম্পদ। প্রায় ৭ বছরের বেশি সময় ধরে কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশনে তিনি কর্মরত, যা সরকারী চাকরি আইন বহির্ভূত। 
অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সোহাগ চৌধুরী এত অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে দুদকের অভিযোগে উঠে এসেছে। তার রয়েছে নিজস্ব একটি সন্ত্রাসী বাহিনীও। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললে বা অবৈধ সম্পদ খোঁজার চেষ্টা করলে নিজস্ব বাহিনী দিয়ে তাদের শায়েস্তা করার জন্য মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকিও দেন। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সোহাগ চৌধুরী বিকাশ আমার বার্তাকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সব ডাহা মিথ্যা। পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে একটি চক্র এসব মিথ্যা অভিযোগ তুলছে। এ ছাড়া অন্য কিছু নয়। আমার কোনো সম্পদ নেই, যা আছে তা স্ত্রীর। গাড়িটিও স্ত্রীর নামে।’

‘স্ত্রীর নামে এত সম্পদ কিভাবে হলো? আপনার শশুর কি অনেক অর্থ-সম্পদের মালিক’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন মন্তব্য না করে মোবাইল সংযোগ কেটে দেন। 

এ বিষয়ে ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী রাসেল আলম আমার বার্তাকে বলেন, ‘সঠিক তথ্য প্রমাণ হাতে পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তা ছাড়া তো আর কিছু করার নেই।’ 

‘তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর এতো টাকার উৎস কি’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার জানা নেই। তবে খতিয়ে দেখবো।’   

ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সফিকুর রহমান আমার বার্তাকে বলেন, ‘যান্ত্রিক বিভাগীয় প্রধানকে বলে দিচ্ছি, তিনি বিষয়টি দেখবেন। আমি একটা মিটিং এ আছি।’

এবি/ জিয়া