‘জুলাই যোদ্ধা’ ও ‘ফ্যাসিস্ট বাহিনী’ বিতর্কে যা বললেন সালাহউদ্দিন আহমদ

প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫৬ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

‘জুলাই যোদ্ধা’দের নিয়ে মন্তব্যের জেরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে জবাব দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি অভিযোগ করেছেন, তাঁর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ বলার দায় তাঁর ওপর চাপানো হচ্ছে।

গত শুক্রবার সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলার জন্য সালাহউদ্দিন আহমদ সরাসরি ‘আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বাহিনী’কে দায়ী করেন। তিনি বলেন, তারা ‘জুলাই যোদ্ধা’ নাম ব্যবহার করে অনুষ্ঠান বানচাল করার চেষ্টা করেছে।

শুক্রবার সকালে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে কয়েকশ ব্যক্তি অবস্থান নিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের দাবি মেনে সনদের অঙ্গীকারনামায় সংশোধনী আনা হয়। কিন্তু এরপরও বিক্ষোভ চললে পুলিশ তাদের বলপ্রয়োগ করে পিটিয়ে বের করে দেয়। এরপর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।

এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় গতকাল শনিবার জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িতরা ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের ফ্যাসিস্ট বাহিনী’। তিনি বলেন, ‘দেখা গেছে, এখানে জুলাই যোদ্ধাদের নামে কিছুসংখ্যক ছাত্র নামধারী উচ্ছৃঙ্খল লোক ঢুকেছে। সেটা ফ্যাসিস্ট সরকারের ফ্যাসিস্ট বাহিনী বলে মনে করি। আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা বিভিন্ন ফাঁকফোকরে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করছে। এখানে কোনো সঠিক জুলাই বা অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত কেউ থাকতে পারে না।’

সালাহউদ্দিন আহমদের এই বক্তব্যের পরই দুপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জোরালো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বিএনপি নেতাকে বক্তব্য প্রত্যাহার এবং প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান।

নাহিদ ইসলাম যুক্তি দেন, সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্যের পেছনে তথ্যের অভাব থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘তিনি ভুলবশত, হয়তো তাঁর কাছে তথ্য না থাকার কারণে তিনি এ রকম বলেছেন। যেহেতু তিনি দীর্ঘদিন দেশে ছিলেন না, যেহেতু তিনি জুলাই অভ্যুত্থানের সময় দেশে ছিলেন না, রাজপথে ছিলেন না, সেহেতু হয়তো তিনি জানেন না যে কে রাজপথে ছিল, কারা লড়াই করেছিল, কারা বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছিল?’

এনসিপির এই আহ্বানের পর বিকেলে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার সময় সালাহউদ্দিন আহমদ প্রসঙ্গটি তোলেন।

তিনি বলেন, ‘সুযোগটা জাতীয় সংসদের সেই সাউথ প্লাজায় কিছু কিছু আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বাহিনী নিয়েছে। তারা নাম ধারণ করেছে জুলাই যোদ্ধার। জুলাই যোদ্ধা নাম দিয়ে, নামটা তারা সুযোগে ব্যবহার করেছে এবং সেই ফ্যাসিস্ট বাহিনী গতকালকের অনুষ্ঠানকে কলঙ্কিত করার জন্য, পারলে বানচাল করার জন্য চেষ্টা করেছে।’

ক্ষমা চাওয়ার আহ্বানকে ‘অপতথ্য’ আখ্যা দিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বর্তমানে অপতথ্য ছড়ানোর, একটা অপব্যাখ্যা ছড়ানোর একটা বিশাল টেন্ডেন্সি দেখি অনেকের মধ্যে। আজকে একটা দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের একপর্যায়ে আমাকে কোনো একটা বিষয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। আমি এখানেই এই সুযোগটা নিয়ে এটা একটু বলে দিই।’

তিনি পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ‘আমি বুঝলাম না জুলাই যোদ্ধারা কেন নিজেরা সেই বিশৃঙ্খলার দায়দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিতে চাচ্ছে।’ তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠন বা ব্যক্তি এ ধরনের বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে না।

বিএনপি নেতা আরও জানান, জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামার পাঁচ নম্বর দফা সংশোধনের মাধ্যমে ‘জুলাই যোদ্ধা’দের একটি সংগঠনকে তিনি আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের সময় আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বাহিনী ও তাদের দোসরদের দ্বারা সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে ওই সংগঠনের সদস্যরা ভয় পাচ্ছিলেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ তাদের আশ্বস্ত করেন, যারা জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গণহত্যা চালিয়েছে, গণ–অভ্যুত্থানের যুদ্ধের ময়দানে তাদের বিচার জনগণ করেছে। সুতরাং তাঁদের আর বিচার হবে না। তাদের সন্তুষ্টির জন্য সনদে সংশোধনী এনে বলা হয়েছে: ‘আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বাহিনী ও তাদের দোসরদের দ্বারা সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে।’

এ ছাড়া, আহতদের ‘বীর’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা এবং মাসিক ভাতাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিধান লেখার জন্য তিনি নিজে অধ্যাপক আলী রীয়াজের সঙ্গে কথা বলে দফাটি সংশোধন করেছেন বলেও উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

নাম উল্লেখ না করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কিছু রাজনৈতিক শক্তি যারা পরোক্ষভাবে বেনিফিশিয়ারি এই বর্তমান সরকারের, তারা নির্বাচন চায় না এবং বিএনপি যেন ক্ষমতায় না আসে, সেটাই চায়।’

রাজনৈতিক পরিপক্বতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যারা গণ–অভ্যুত্থানের শক্তি হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকেন...তাঁদের উৎসাহিত করি যে রাজনীতিতে আরও বেশি অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য, শিক্ষা নেওয়ার জন্য।’

>>আমার বার্তা/জেএইচ