আবারও ‘শাপলা’ প্রতীক চেয়ে ইসি সচিবকে এনসিপির চিঠি

প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:০১ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধান সংশোধন করে প্রতীক হিসেবে শাপলা, সাদা শাপলা বা লাল শাপলাকে প্রতীক হিসেবে তালিকাভুক্ত করে এনসিপির অনুকূলে শাপলা, সাদা শাপলা অথবা লাল শাপলা প্রতীক বরাদ্দের আবেদন করেছে দলটি।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দলটির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামের সই করা একটি আবেদন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো হয়।

আবেদনে দলটি লিখেছে, জাতীয় নাগরিক পার্টি—এনসিপি চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পর থেকেই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমাদের প্রতিনিধি দল নিয়মিত মতবিনিময়, বৈঠক ও যোগাযোগ রক্ষা করে আসছে। এনসিপির প্রতিনিধি দল এপ্রিল থেকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নির্বাচনসংক্রান্ত আইন, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া, নিবন্ধনের সময়সীমা, প্রবাসীদের ভোটাধিকারসহ নির্বাচনকেন্দ্রিক নানান বিষয় নিয়ে নিয়মিত আলোচনায় অংশ নিচ্ছে।

দলটি আবেদন পত্রে লিখেছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন বিবিধ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ এর সংশ্লিষ্ট বিধানে নতুন করে নির্বাচনী প্রতীক তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। নির্বাচন কমিশনের তালিকায় প্রতীক যুক্ত করতে কমিশন একটি কমিটি গঠন করে এবং সংশ্লিষ্ট কমিটি মোট ১৫০টি প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করার জন্য চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করে। উক্ত কমিটির একজন সদস্যের সঙ্গে এনসিপির একটি প্রতিনিধিদল ৪ জুন নির্বাচন কমিশনে বৈঠক করেন এবং বৈঠকে তিনি চূড়ান্ত তালিকায় ‘শাপলা’ প্রতীক থাকার বিষয়টি আশ্বস্ত করেন। এছাড়াও এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশিত হয়।

তারা লিখেছে, এরপর ২২ জুন এনসিপি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে প্রকাশিত ১০ মার্চ স্মারকের গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন দাখিল করে এবং দলের অনুকূলে ‘শাপলা’ প্রতীক সংরক্ষণের জন্য আবেদন জানায়।

জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপি নির্বাচন কমিশনের কাছে ‘শাপলা’ প্রতীক বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশের জনসাধারণ এনসিপির প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’-কে চিনতে শুরু করে এবং গণমানুষের সঙ্গে এনসিপির শাপলা প্রতীক কেন্দ্রীক এক অভূতপূর্ব সম্পর্ক স্থাপিত হয়।

এছাড়াও ২০২৫ সালের জুলাই মাসে এনসিপি দেশজুড়ে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে এবং উক্ত কর্মসূচিতে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ এনসিপি-কে আপন করে নেয় এবং খাল-বিল-জলাশয় থেকে শাপলা সংগ্রহ করে উক্ত কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে এনসিপির প্রতীক হিসেবে শাপলাকে হৃদয় থেকে বরণ করে নেয়।

দলটি লিখেছে, কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হঠাৎ করে ৯ জুলাই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে এনসিপি জানতে পারে যে, নির্বাচন কমিশন শাপলা-কে নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে তফসিলভুক্ত না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ‘শাপলা’ জাতীয় প্রতীক হওয়ায় নির্বাচনের প্রতীক হিসেবে এটি বিধিমালার তফসিলভূক্ত না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানায় নির্বাচন কমিশন।

এরপর ১৩ জুলাই এনসিপি’র একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে এক বৈঠকে মিলিত হন, এবং বৈঠকের আলোচনায় এবং একটি লিখিত আবেদনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দেন যে, শাপলা-কে জাতীয় প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনের প্রদত্ত ব্যাখ্যা আইনানুগভাবে সঠিক নয় এবং এই বিষয়ে কমিশনের গৃহীত অবস্থানের আইনি ভিত্তি নেই।

সম্প্রতি মাঠ পর্যায়ে সব যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হওয়ার পর এবং নিবন্ধনের সব শর্ত প্রতিপালন করার ফলশ্রুতিতে নির্বাচন কমিশন জাতীয় নাগরিক পার্টি—এনসিপি-কে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

কিন্তু ২৩ সেপ্টেম্বর কমিশনের সিনিয়র সচিব সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার প্রতীক তালিকায় শাপলা-কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং এ কারণে এনসিপি-কে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া যাবে না।

নির্বাচন কমিশনের এমন স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত এবং উক্তরূপ বক্তব্য অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। নির্বাচন কমিশনের এহেন এক রোখা কার্যকলাপে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন ও সব দলের ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহ প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

দলটি লিখেছে, সার্বিক বিবেচনায় আমরা আশা করি, নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে জাতীয় নাগরিক পার্টি’র অনুকূলে ১. শাপলা, ২. সাদা শাপলা, এবং ৩. লাল শাপলা থেকে যে কোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করবে এবং এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ইতঃপূর্বে মনোভাব পরিত্যাগ করবে এবং এমনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে যাতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন ও সব দলের ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহ জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়।


আমার বার্তা/এমই