ফ্যাসিবাদের সমর্থকদের আইনের আওতায় আনা উচিত: রিজভী

প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:৫৮ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

যারা ফ্যাসিবাদকে সমর্থন ও ফ্যাসিবাদের বয়ানে সুর মিলিয়েছে তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, জনগণ তাদের বিচার দেখতে চায়।

মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম আয়োজিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

রিজভী বলেন, আমরা প্রত্যেকে ভুক্তভোগী। সবাই সর্বনিম্ন ৫০০ মামলায় আক্রান্ত। আমরা যারা আক্রান্ত, কিন্তু আমাদের সামনে অন্য কেউ লাঞ্ছিত হোক, সেটা চাই না। কিন্তু, যারা ফ্যাসিবাদকে সমর্থন ও ফ্যাসিবাদের বয়ানে সুর মিলিয়েছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। জনগণ তাদের বিচার দেখতে চায়।

জাতীয় পার্টির মহাসচিবের এক বক্তব্যকে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, জাতীয় পার্টির দায় এখন বিএনপিকে নিতে হবে। বিএনপি তো এখন রাষ্ট্রক্ষমতায় নেই। এখনো তো অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। তাহলে আপনি (জাতীয় পার্টির মহাসচিব) কিসের দায়ের কথা বলছেন! নুরুল হক নুর ডাকসুর সাবেক ভিপি। তাকে একটি কার্যালয়ের মধ্যে আক্রমণ করা হলো। আমরা প্রথমে শুনেছিলাম জাতীয় পার্টির সঙ্গে গোলমাল। কিন্তু তাকে (নুর) যে আঘাত করছেন, সেই লাল শার্ট পরা লোকটা কে? যে কেউ কারো বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে, এটা গণতন্ত্রের স্বীকৃত একটা পন্থা।

তিনি আরও বলেন, ‘যারা রাজনীতির কথা বলছেন, তারা বিএনপির সমালোচনা করতে পারেন। বিএনপির যদি কোথাও সমালোচনা করার থাকে, তাহলে বিএনপি নিজেই তা করবে। কিন্তু আপনি কেন বিএনপির দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলছেন? বিএনপি কি আপনাদের দায়িত্ব নেবে নাকি? আপনারা কারা? যখন ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম এবং সাইফুল ইসলাম হিরু গুম হন, তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? যখন ছাত্র এবং যুব নেতারা গুম হন, তখনও জাতীয় পার্টিকে দেখা যায়নি।'

রিজভী বলেন, যখন ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে কোনো ভোটার নেই, সেখানে কুকুর-বিড়াল এবং গরু-ছাগল ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেই নির্বাচনে যাবো না, যাবো না করতে করতে আপনারা (জাতীয় পার্টি) গেলেন। ২০১৮ সালে বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর, প্রায় ৪৫ জন প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হলো। বিএনপি নির্বাচনে আসুক, সেটা শেখ হাসিনা চায়নি। সেদিন জাতীয় পার্টি কী ভূমিকা রেখেছে?

তিনি বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে জিএম কাদের ভারতে গেলেন। তখন সাংবাদিকরা তাকে (জিএম কাদের) প্রশ্ন করলেন, আপনার সঙ্গে কি কথা হলো। তখন জিএম কাদের বলেছেন, ওদের (ভারত) পারমিশন ছাড়া কিছু বলতে পারবো না। এই হচ্ছে জাতীয় পার্টি। আপনি কী ভারতের কোনো রাজনৈতিক দল? নাকি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল? এই আপনাদের মেরুদণ্ড? এই আপনাদের নীতি এবং আদর্শ? এই আপনাদের চরিত্র?।

বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমরা কোনো মব সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করি না। কে রাজনীতি করবে কি করবে না, সেটা আইনের ব্যাপার। এটা সরকারের ব্যাপার। বিএনপি কোথাও কোনো মব সংস্কৃতি তৈরি করেনি এবং বিএনপি উশৃঙ্খল জনতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়। কিন্তু বিএনপির তো একটা এনালাইসিস আছে, জাতীয় পার্টির ভূমিকা কি ছিল। আরও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ভূমিকা কি ছিল।

বিএনপির এই নেতা বলেন, রক্তপিপাসু শেখ হাসিনার আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে কারা রক্ষা করেছে, কারা ১৬ বছর জনগণের লক্ষ-কোটি টাকা পাচারের সুবিধা করে দিয়েছে। কারা এই দেশকে আওয়ামী ভয়ংকর স্বেচ্ছাতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব পালন করেছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে জাতীয় পার্টি। আপনারা একটা কুলিং টাইম চান। ২০০৮-২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা ২ বছরের একটা কুলিং টাইম দিয়েছেন। তার পরে টর্চার করেছেন। বিএনপি কখনো টর্চারে বিশ্বাস করে না। বিএনপি কোনো অবস্থাতেই বেআইনিভাবে কোনো নির্যাতন, অত্যাচারে বিশ্বাসী নয়।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা প্রত্যেকে ভুক্তভোগী। সবাই সর্বনিম্ন ৫০০ মামলায় আক্রান্ত। আমরা যারা আক্রান্ত, কিন্তু আমাদের সামনে অন্য কেউ লাঞ্ছিত হোক, সেটা চাই না। কিন্তু, যারা ফ্যাসিবাদকে সমর্থন ও ফ্যাসিবাদের বয়ানে সুর মিলিয়েছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। জনগণ তাদের বিচার দেখতে চায়।

উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরীসহ আরও অনেক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।


আমার বার্তা/এমই