ফ্যাসিস্টরা জোট হয়ে ক্ষমতা ফিরে পেতে চক্রান্ত করছে: ফখরুল

প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৫, ১৫:৫০ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি সংগৃহীত

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ফ্যাসিস্ট শক্তি আবারও জোটবদ্ধ হচ্ছে। তারা ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার চক্রান্ত করছে। এ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানাই।

মির্জা ফখরুল বলেন, সংস্কার বিএনপিই করেছে, প্রস্তাবও বিএনপিই দিয়েছে। তাই অযথা বিলম্ব না করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অনতিবিলম্বে নির্বাচন দিয়ে পরিস্থিতি ঠিক করার আহ্বান জানাই। এই দায়িত্ব এখন অন্তর্বর্তী সরকারের, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের।

শনিবার (১৯ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘গণঅভ্যুথানের প্রত্যাশা ও দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, জনগণের অগ্রযাত্রায় বিশ্বাস করে না- তা আবার সক্রিয় হচ্ছে। অযথা বিলম্ব না করে সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার আহ্বান জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, সুযোগ আমাদের সামনে এসেছে। হারিয়ে ফেললে অনেক বছর পিছিয়ে যাবে দেশ। প্রতিবার ছেলেরা প্রাণ দেবে, আন্দোলন হবে। সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। রাজনৈতিক দলগুলো প্রমাণ করেছে সবাই দেশকে ভালোবাসে। তাই তারা ফ্যাসিবাদমুক্ত করেছে ত্যাগ স্বীকার করে।

তিনি বলেন, সরকারের প্রতিটি পর্যায়ের যারা আছেন, তারা সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি বন্দোবস্ত দেবেন। সবাই মিলে দেশ গড়তে সেই বন্দোবস্ত নিয়ে যেন এগিয়ে যেতে পারে। সবাই যেন একটি বিষয়ে একমত হই, যেন কেউ ফ্যাসিবাদের কাছে দেশকে ছেড়ে না দেই।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, বিপ্লব করে ক্ষমতায় যাওয়ার সামর্থ্য নেই, ইচ্ছেও নেই। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের সমর্থনে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠন করতে চায় বিএনপি। কোনো বাধাই থামাতে পারবে না। একাত্তর আর স্বাধীনতা মূল কথা, সেখানে কোনো ছাড় নেই। গণতন্ত্রের দিকে যেতে হবে।

সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা গণতন্ত্রের জন্য জরুরি। আমরা যদি ঐক্যমতে পৌঁছাতে না পারি তাহলে গণতন্ত্র ব্যাহত পারে। পতিত ফ্যাসিবাদের দোসরেরা ও বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা পুরো প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে দিতে পারে। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বিচার চাই, সংস্কার চাই এবং সংস্কার সম্পন্নের জন্য নির্বাচনের চাই। নির্বাচন ছাড়া সংস্কার সম্পন্ন হবে না।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর যে রকম পরিবর্তন আমরা আশা করেছিলাম, সে রকম পরিবর্তন হয়নি।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের আন্দোলনে ছিলেন এমন ৯০ ভাগ মানুষের নাম কেউ জানে না। আমরা অনেকে রাজনৈতিক স্বার্থে গণ–অভ্যুত্থানের অবদানকে ছোট করে ফেলছি। শেখ হাসিনার পতন যদি না হতো তাহলে আমাদের অবস্থা কোথায় থাকত, সেটি ভাবা দরকার। তিনি বলেন, হাসিনার পতন না হলে আবু সাঈদকে জঙ্গি হিসেবে উপস্থাপন করা হতো।

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, প্রশাসনের চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। মুহাম্মদ ইউনূস ও উপদেষ্টাদের কাছে মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল প্রত্যাশা তারা পূরণ করতে পারেননি। ১১ মাসে এই সরকারের কাজের ওপর যদি মার্ক দিতে বলা হয় তাহলে আমি ১০–এর মধ্যে ৪–এর কথা বলব।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ছিল বিভেদের রাজনীতি না করা। কিন্তু সেটি এখনো চলছে। উচিত ছিল হিংসা বিভেদের রাজনীতি বাদ দিয়ে দেশের জনগণের জন্য পলিসিনির্ভর নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করা। প্রত্যাশা ছিল এমন বিচারকাঠামো যেখানে বিগত দিনের গুম খুন হওয়া মানুষগুলো তাদের বিচারের পাবে। সেটি এখনো দৃশ্যমান দেখা যাচ্ছে না। তিনি নির্বাচনের মাঠের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন গণতন্ত্র মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম বাবলু। আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ১২–দলীয় জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উল্লাহ কায়সার, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের আহ্বায়ক নাঈম জাহাঙ্গীর, নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত প্রমুখ।


আমার বার্তা/এমই