ভারতীয় আগ্রাসন রুখতে ৩ দাবি ও ৪ কর্মসূচি ঘোষণা জাগপার
প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২৫, ১৩:৩১ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে আশ্রয়, সীমান্তে হত্যা, ভূমি দখল, অবৈধ পুশ-ইন, পানির ন্যায্য হিস্যা না দেওয়া, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় ও নির্বাচনে হস্তক্ষেপসহ ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দিতে ৩ দফা দাবি এবং ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাওসহ ৪ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)।
সোমবার (৩০ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি ও কর্মসূচির কথা জানান জাগপার সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান।
জাগপার অন্য দাবি দুটি হচ্ছে— জুলাই, পিলখানা, শাপলা, মোদী বিরোধী আন্দোলন ও লগি-বৈঠা গণহত্যার দায়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার করতে হবে এবং গুম, খুন, হামলা, মামলা, লুটেরা, অর্থপাচারকারী ও অপরাজনীতির অশুভ শক্তি সন্ত্রাসী সংগঠন আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে।
কর্মসূচি ৪টি হচ্ছে— জুলাই মাসের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ তারিখ জুলাই শহিদদের স্মরণে এবং জুলাই মাসের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ তারিখ জুলাই আহতদের স্মরণে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে; জুলাই মাসের বাকি ২৯ দিন ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, গণহত্যার দায়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার এবং সন্ত্রাসী সংগঠন আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে ৮টি বিভাগীয় শহর এবং জাগপার ২০টি সাংগঠনিক জেলায় গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা হবে; আগস্ট মাসের ৫ তারিখ শেখ হাসিনা ও আওয়ামী দুঃশাসনের হাত থেকে মুক্তি অর্থাৎ বাংলাদেশের নাজাত দিবসে শুকরানার নামাজ পড়া হবে এবং গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ১ বছর ভারতে আশ্রয় দেওয়ার প্রতিবাদে ও খুনি হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার দাবিতে ৬ আগস্ট ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে রাশেদ প্রধান বলেন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জাতীয় নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের সকল গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলের মত আমরাও আসন্ন ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছি। একইসঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রক্রিয়া দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, নির্বাচন এবং সংস্কার নিয়ে আমরা যতটা আগ্রহী, বিচার নিয়ে ততটাই উদাসীন। আমাদের দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দল, জাতীয় নেতারা, এমনকি হাজারো শহিদের রক্তের বিনিময়ে ক্ষমতায় বসা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের বক্তব্যে, নির্বাচন এবং সংস্কার নিয়ে যত কথা শোনা যায়, তার শতভাগের দশ ভাগও বিচারের কথা শোনা যায় না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই আমরা জুলাই গণহত্যাকে ভুলতে বসেছি। আমরা ভুলে গেছি পিলখানা গণহত্যা, শাপলা গণহত্যা, মোদী বিরোধী আন্দোলনের গণহত্যা, লগি-বৈঠা গণহত্যা। আমরা ভুলে গেছি গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এবং তার দোসরদের।
তিনি বলেন, নির্বাচন এবং সংস্কারকে সামনে রেখে আমরা ভুলে গেছি আয়নাঘরের কথা। আমরা ভুলে গেছি আওয়ামী গুমের কথা, খুনের কথা, হামলা-মামলার কথা। আমরা ভুলে গেছি দেশের মানুষের অর্থ ও সম্পদ লুটপাটের কথা, দেশের অর্থ বিদেশে পাচারের কথা। আমরা ভুলে গেছি সারে পনেরো বছরের দুঃশাসনের কথা। আমরা ভুলতে বসেছি অপরাজনীতির অশুভ শক্তি আওয়ামী লীগের কথা।
জাগপার মুখপাত্র বলেন, যুদ্ধটা শুধুমাত্র শেখ হাসিনা আর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ছিল না। আমাদের সংগ্রাম এবং লড়াই শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সঙ্গে আগ্রাসী ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধেও ছিল। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নয় বরং বাংলাদেশকে ভারতের করদ রাজ্য বানিয়ে ভারতের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতেন। গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দিল্লি সরকার আশ্রয় দিয়ে তাই প্রমাণ করেছে। নির্বাচন এবং সংস্কারকে সামনে রেখে আমরা ভারত কর্তৃক অতীতে সীমান্তে হত্যা, ভূমি দখল, পানির ন্যায্য হিস্যা না দেওয়া, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় ও নির্বাচনে হস্তক্ষেপ ভুলে গেছি। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরেও সীমান্ত হত্যা এবং ক্রমাগত অবৈধ পুশ-ইন দেখেও না দেখার ভান করছি।
তিনি বলেন, সবার মত আমরাও সংস্কার চাই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য এবং ভারতীয় প্রভাবমুক্ত নির্বাচন চাই। একই সঙ্গে বিচার এবং ভিনদেশি প্রভুর হাত থেকে মুক্তি চাই, নাজাত চাই। সংবাদ সম্মেলনে জাগপার অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আমার বার্তা/জেএইচ