বিজয়ের পুরো অর্থ আমাদের বুঝতে হবে

প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:২৫ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন ডেস্ক

এমন জাতি পৃথিবীতে আছে কিনা জানিনা আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস সেই দিবসে মনটা এখন যেমন আছে তেমন তখন ছিল না।

ঐ সময় সবাই বিজয়ের আনন্দে মেতে উঠেছিল, সারাদিন কি করেছিলাম মনে নেই তবে আমাদের পরিবারের মুক্তিযোদ্ধা তৎকালীন (ক্যাপ্টেন) ভূঁইয়ার যুদ্ধের গল্প শুনতেই ব্যস্ত ছিলাম।

জিন্দাবাহারের বাড়িতে বাবার শোয়ার ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। মনে হচ্ছিল কত বছর যেন ঘুমাননি। পিস্তল গুলো টেবিলের ওপর। খাবার খাওয়ারও যেন তাড়া নেই।

আগের দিন রাতেও কারফিউ ছিল, ছিল অন্ধকার। আজ রাতে আর অন্ধকার থাকবে না। রাজাকার আলবদর রাস্তায় থাকবে না। আগের দিন রাতেও অর্থাৎ ১৬ই ডিসেম্বরের রাতেও ওরা ছিল না।
এমন জাতি পৃথিবীতে আছে কিনা জানিনা আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস সেই দিবসে মনটা এখন যেমন আছে তেমনটি তখন ছিল না।

তখন সবাই বিজয়ের আনন্দে মেতে উঠেছিল, সারাদিন কি করেছিলাম মনে নেই তবে আমাদের পরিবারের বীর মুক্তিযোদ্ধা তৎকালীন (ক্যাপ্টেন) ভূঁইয়ার যুদ্ধের গল্প শুনতেই ব্যস্ত ছিলাম। জিন্দাবাহারের বাড়িতে বাবার শোয়ার ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধারা ঘুমাচ্ছেন। মনে হচ্ছিল কত বছর যেন ঘুমাননি। পিস্তল গুলো টেবিলের ওপর। খাবার খাওয়ারও যেন তাড়া নেই।

আগের দিন রাতেও কারফিউ ছিল, ছিল অন্ধকার। আজ রাতে আর অন্ধকার থাকবে না। রাজাকার আলবদর রাস্তায় থাকবে না। আগের দিন রাতেও অর্থাৎ ১৬ই ডিসেম্বরের রাতেও ওরা ছিল না।

আমরা নির্ভয়ে কিছু যুবক জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা-যমুনা বলতে বলতে সেই বাবু বাজারের মোড়ে চলে গেলাম।

আমরাই ছিলাম। আশেপাশের থেকে তেমন কোনো মিছিল আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়নি। তখনো ছিল মৃত্যু ভয়। অবাঙালীর একটি বড় অংশ তখনো ইসলামপুর পাটুয়াটুলির ব্যবসায়ী ছিল।
 

যতটুকু ধারণা তাদের অনেকেই পাকিস্তানের নীরব সমর্থক ছিল। আমাদের জিন্দাবাহারের বাড়ির পেছনে এক বোম্বের পরিবার তো জোরে বলাই শুরু করল সেভেনথ ফ্লিট আ গিয়া হেয়।

তাদের সে কি আনন্দ! সাধারণত যুদ্ধের পর খাবারের সংকট থাকে বিদ্যুৎ থাকে না পানি থাকে না রাস্তাঘাটে অরাজকতা থাকে। সেরকম কোনো কিছুই পরিস্থিতি হয়নি। সবই যেন স্বাভাবিক ছিল।

রেডিওতে মেজর হায়দারের কণ্ঠ শুনছিলাম। তিনি শৃঙ্খলা বজায় রাখার বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। সাধারণত দেখা যায় যুদ্ধের পর খাবারের সংকট থাকে, সেটাও আমরা অনুভব করি নাই।

মাঝে মাঝে ভাবি আমাদের কষ্ট হয়েছে। যুদ্ধকালীন আরো কষ্ট হলে হয়তো আমরা একাত্তরের মর্মার্থ আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারতাম। খুব সহজেই আমরা পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছি। 

বিএনপি নেতা ফখরুল বলেন, “পাকিস্তান আমল-ই নাকি ভালো ছিল”। এরকম আরো অনেকেই বলেন প্রকাশ্যেই বলেন। এখনো কোরিয়ান জাপানি চাইনিজদের মধ্যে এক ধরনের বৈরিতা আছে এই যুদ্ধ নিয়েইতো, আমরা তো বোধ হয় এর ব্যতিক্রম।

এই যে ধর্ষণ, হত্যা এত আগুন এত বুদ্ধিজীবী হত্যা এসব কিছু জেনেও কোনো অনুশোচনা আছে? নেই। ৯৫ হাজার সৈন্যের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ন্যাক্কারজনক আত্মসমর্পণ-এই অপমান এখনো ভুলতে পারছে না।

এই বীরের জাতি বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ যেন দাঁড়াতে না পারে সেজন্য পদে পদে বাধা দেওয়া, সেই একাত্তরে দোসরদের মাধ্যমে গুজব ছড়ানো, বুদ্ধিজীবী হত্যা, সাংস্কৃতিক মুক্ত মনের মানুষদের হত্যা করা এখনো এদের এজেন্ডা। 

তবে সুখের কথা যে, বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে এরা বিভ্রান্ত করতে পারিনি। চেষ্টা করেছে এবং করেছিলোও।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা যদি দেশের হাল না ধরতেন এই অর্জন ধুলিস্যাৎ হয়ে যেত, হয়তো বা আরেক আফগানিস্তান হত না হয় সোমালিয়া হত। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী অনেকেই এই প্রজন্মকে প্রভাবিত করেছে বলে মনে হয়।

বিজয় আমাদের হয়েছে কিন্তু এই বিজয়ের পুরো অর্থ আমাদের বুঝতে হবে আমাদের সত্যিকারের বাঙালি হতে হবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মত মনের অধিকারী  হতে হবে।

লেখক: অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমদ
ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।